ক্রিকেটে দল খারাপ করলে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দায়টা নির্বাচকদের ওপর পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। অনেক ভেবেচিন্তে তাঁরাই তো দল নির্বাচন করেন। এবারের এশিয়া কাপের পাকিস্তানের পারফরম্যান্স বলছে, বাবর আজমের দল ভালো করেনি। ফাইনালে ওঠা দূরে থাক, সুপার ফোরে চার দলের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ছিল তলানিতে।
শিরোনাম দেখে তাই ভাবতে পারেন, এশিয়া কাপে বাবর আজমের দল ব্যর্থ হওয়াতেই বুঝি দায়টা এসে পড়েছে ইনজামাম উল হকের ওপর। কিংবদন্তি ইনজামামই যে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নির্বাচক! তবে ব্যাপারটা সে রকম কিছু নয়।
মাসখানেক আগেই দ্বিতীয় দফা প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব নিয়েছেন ইনজামাম। এর মধ্যেই দুবার পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন সাবেক এই ক্রিকেটার। মূলত দুটি কারণে ইনজামামের এমন হুমকি। প্রথমত, তাঁর সঙ্গে এখনো পিসিবির চুক্তি সম্পন্ন না হওয়া। দ্বিতীয়ত, খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে অনাপত্তিপত্র দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা না পাওয়া।
গত ৭ আগস্ট হারুন রশিদের জায়গায় পিসিবির প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব নেন ইনজামাম। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্তও একই পদে ছিলেন। তাঁর সেই মেয়াদেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতে পাকিস্তান। নির্বাচক কমিটির শীর্ষ পদের দ্বিতীয় অধ্যায়ে এখন পর্যন্ত দুবার দল দিয়েছেন ইনজামাম। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ও এশিয়া কাপ। শিগগিরই বিশ্বকাপ দলও ঘোষণা করবেন তিনি।
এক মাসের মধ্যেই ইনজামাম দুবার পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ক্রিকেট পাকিস্তান’। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আফগানিস্তান সিরিজের পর এশিয়া কাপের জন্য দল ঘোষণার সময়ও পিসিবির সঙ্গে ইনজামামের চুক্তি ছিল না। এ জন্য তিনি পদত্যাগের হুমকি দেন। একপর্যায়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেন পিসিবি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ।
বৈঠকে ইনজামাম বোর্ডের কাছে মোটা অঙ্কের বেতন দাবি করেন। মাসে ২০ লাখ পাকিস্তানি রুপিরও (প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা) বেশি বেতনের সঙ্গে আগের মেয়াদের মতোই ৩ বছরের চুক্তি চেয়েছেন। চুক্তির মেয়াদের বিষয়টি পিসিবির ব্যবস্থাপনা কমিটি মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রিকেট পাকিস্তান।
ইনজামাম দ্বিতীয়বার পদত্যাগের হুমকি দেন কদিন আগে লাহোরে এশিয়া কাপের ম্যাচের সময়। খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে অনাপত্তিপত্র দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা চান ইনজামাম। ইনজামামের এজেন্টরা বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানসহ পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারেরও প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রধান নির্বাচক ও খেলোয়াড়দের এজেন্ট একই হওয়ায় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অনাপত্তিপত্র প্রদানের পূর্ণ ক্ষমতা ইনজামামকে দিতে রাজি নয় পিসিবি। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এর প্রতিক্রিয়ায় পদত্যাগের হুমকি দেন ইনজামাম।
ক্রিকেট পাকিস্তানের প্রতিবেদন বলছে, ইনজামামের একের পর এক দাবিতে বিরক্ত হয়ে তাঁকে বাদ দিয়ে মিসবাহ উল হক অথবা নাদিম খানকে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন পিসিবির কর্মকর্তারা।
তবে শেষ পর্যন্ত ইনজামামের পদত্যাগ বা তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার মতো কিছু ঘটেনি পিসিবি ও তাঁর মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হওয়ায়। যদিও দুই পক্ষ কীভাবে সন্তুষ্ট হয়েছে, পরিষ্কার নয়।