ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর পরামর্শ গ্রহণ করা হলে একবার নিলামে একটি নির্দিষ্ট দামে কেনার পরও আইপিএলে খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতা বেড়ে যেতে পারে। খেলোয়াড়দের বেতনের জন্য দলগুলোকে যে ‘স্যালারি ক্যাপ’ বা সর্বোচ্চ খরচের সীমা বেঁধে দেওয়া, সেটিও ৯০ কোটি রুপি থেকে বেড়ে ১৩০-১৪০ কোটি রুপি হতে পারে। ফলে আগামী ডিসেম্বরে আইপিএলের মেগা নিলামে খেলোয়াড়দের আরও বেশি অর্থ পেতে দেখা যেতে পারে।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, নিলামে একজন খেলোয়াড়কে যে দামে কেনা হয়, সেটি পরবর্তী সময়ে আর বাড়ানোর সুযোগ নেই। এ নিয়ম বদলাতে চায় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। মূলত পরবর্তী নিলামে যাতে অন্য দল তাঁকে ছিনিয়ে নিতে না পারে, সেটির জন্যই এমন নিয়ম চাওয়া হচ্ছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে একজন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অন্য অনেক চাকরির মতো এখানে বেতন বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। ধরা যাক, কাউকে ৩০ লাখ রুপিতে কেনা হলো। এরপর তাঁর আইপিএলটি দুর্দান্ত কাটল। ফলে ফ্র্যাঞ্চাইজির হাতে এমন উপায় থাকা উচিত, যাতে ধরুন পরের বছর তাঁকে তিন কোটি রুপির নতুন একটি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া যায়। অন্য কোনো দলের কাছে তাঁকে হারিয়ে না ফেলার উপায় এটা। অন্য দলগুলো তখন খেলোয়াড় ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘উঁচুমানের পারফরম্যান্স দেখানো খেলোয়াড়ের বেতন নিয়ে দর–কষাকষির সুযোগ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে দেওয়া উচিত আইপিএলের। এর মাধ্যমে আগের মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়কে তারা ধরে রাখতে পারবে। সে খেলোয়াড় তাকে ছেড়ে দিতে বলবে বা অন্য দল তাকে কিনে নেবে, এমন চিন্তা করা লাগবে না। স্বাস্থ্যকর একটা বেতন বৃদ্ধিতে খেলোয়াড়েরাও খুশি থাকবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো খুশি থাকবে অন্য দলগুলো খেলোয়াড় ছিনিয়ে নিতে পারবে না বলে।’
আইপিএলের প্রধান নির্বাহী হেমাং আমিনের কাছে আরও কিছু পরামর্শ রেখেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এর মধ্যে আছে মেগা নিলাম প্রতি পাঁচ বছরে একবার করা, দলগুলোকে সর্বোচ্চ পাঁচজন খেলোয়াড় ধরে রাখার সুযোগ দেওয়া, প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে আটজন ‘রাইট টু ম্যাচ (আরটিএম)’ অপশন দেওয়া এবং খরচের সীমা ১৩০-১৪০ কোটি রুপিতে নিয়ে যাওয়া।
২০১৮ সালের মেগা নিলামে প্রথম খেলোয়াড় ধরে রাখা ও আরটিএমের সমন্বিত একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। সে সময় এক দল সর্বোচ্চ পাঁচজন ধরে রাখতে পারত, যদিও সর্বোচ্চ তিনজনকে রাখা যেত নিলামের আগে। আর সর্বোচ্চ তিনজনকে নিলামে আরটিএম পদ্ধতিতে আবার কিনে নিতে পারত দলগুলো।
এখন মেগা নিলাম কেন পাঁচ বছরে একবার চাওয়া হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে একজন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তা বলেন, ‘যাতে ধারাবাহিকতাটা নিশ্চিত করা যায়। তিন বছরের চেয়ে পাঁচ বছর অন্তর মেগা নিলাম করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। মেগা নিলামের মাঝখানে বেশি ব্যবধান থাকলে দলগুলো খেলোয়াড়দের সেরাটি বের করে আনতে পারবে। তারা তরুণ থাকা অবস্থায় যেটি বিনিয়োগ করা হয়েছিল।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বিশেষ করে আমাদের যাদের তৃণমূল পর্যায়ে একাডেমি আছে, তাদের খেলোয়াড়দের উন্নয়নে বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দেবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটারের বেড়ে উঠতে বছর দুয়েক লাগে। কিন্তু তিন বছর পরই আপনি তাকে হুট করে হারিয়ে ফেলবেন মেগা নিলামে। এটা ন্যায্য নয়।’
প্রাথমিকভাবে আটজন খেলোয়াড় ধরে রাখার কথা উঠলেও সেটি কমে আসবে বলে জানা গেছে। তবে আবার আরটিএম পদ্ধতি রাখা হবে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়। ২০২২ সালের মেগা নিলামে দলগুলোর চারজন করে খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম ছিল, কিন্তু কোনো আরটিএম ছিল না। সেবার নতুন দুটি দল গুজরাট টাইটানস ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসকে খেলোয়াড় বাছাইয়ে বেশি সুযোগ করে দিতে এমন করা হয়েছিল।
এদিকে এবারের নিলামে দলগুলোর খেলোয়াড় কেনার বাজেট বাড়ানো হতে পারে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘অনেক দিন ধরেই এটি ঝুলে আছে। “স্যালারি ক্যাপ” সম্ভবত ৯০ কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে ১৩০-১৪০ কোটি রুপি করা হবে। ২০২২ সালের মিডিয়া স্বত্ব সমঝোতা অনুযায়ী, ২০২৫ ও ২০২৬ সালে ৮৪টি ম্যাচ হবে। ২০২৭ আইপিএলে হবে ৯৪টি ম্যাচ। বেশি ম্যাচ মানে বিরতি কম। খেলোয়াড়েরা তাই বেশি টাকা চাইতে ও প্রত্যাশা করতেই পারে।’
এদিকে বিতর্কিত ইমপ্যাক্ট বদলির নিয়ম অন্তত আরও এক বছরের জন্য টিকে যাবে বলে সম্ভাবনা আছে। এ মাসের শেষ দিকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিসিসিআইয়ের কার্যালয়ে আইপিএলের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এসব চূড়ান্ত করা হবে।