‘জিরো ক্লু’!
বাংলাদেশ ১৪৩ রানে অলআউট হওয়ার পর কথাটা বলেছেন ম্যাচের ধারাভাষ্যকার। সহজ বাংলায়, আল্লাহ গজনফরের বল বুঝতেই পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ধারাভাষ্যকার তা ইংরেজিতে বোঝাতে ওই কথা বলেছেন। আফগানিস্তানে এই কথারই গভীর অর্থ হতে পারে এমন, মুজিব উর রেহমান ও রশিদ খানের পর নতুন এক প্রতিভা পেয়েছে তারা। নাম তাঁর গজনফর। শিগগিরই ক্রিকেটের দুনিয়ায় ‘সম্পদ’ হয়ে উঠতে যাচ্ছেন এই ১৮ বছর বয়সী।
৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই স্পিনার শুরুতে ছিলেন পেসার। উঠে এসেছেন টেনিস বলের ক্রিকেট খেলে। বল ঘোরানোয় দক্ষতা দেখে কোচদের পরামর্শে হন স্পিনার। তাতে লাভটা আফগানিস্তান ছাড়াও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেরও হলো। গজনফরের স্পিনের ‘সেবা’ নিতে বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোরও মুখিয়ে থাকার কথা। এরই মধ্যে অবশ্য বিপিএলে রংপুর রাইডার্স তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে, আইপিএলেও দল আছে—কলকাতা নাইট রাইডার্স। তবে শারজায় কাল তাঁর ক্যারিয়ারসেরা পারফরম্যান্সের পর নিশ্চয়ই আরও অনেক দলই আগ্রহী হয়ে উঠবে।
সে বিশেষ প্রতিভা। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ। তার ওপর আস্থা আছে এবং সে জন্যই দলে এবং খেলছে।গজনফরকে নিয়ে আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি
৬.৩–১.২৬–৬—আফগানিস্তানের ২৩৫ রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে এই হলো গজনফরের বোলিং পারফরম্যান্স। মুজিব চোট পাওয়ায় তাঁর বিকল্প হিসেবে কলকাতা যেমন গজনফরকে নিয়েছে, তেমনি আফগানিস্তান দলও মুজিবের জায়গাতেই দলে এনেছে অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপ ও সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে নজরকাড়া গজনফরকে। বোলিংয়ের ধরনও অনেকটা মুজিবের মতোই। ভান্ডারে বৈচিত্র্যেও মুজিবের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
এমনিতে অফ স্পিনার হলেও ক্যারম বল, ব্যাক স্পিন, গুগলি ছাড়াও বল দুই দিকেই ইচ্ছেমতো বাঁক খাওয়াতে পারেন। এসবের সঙ্গে গতিবৈচিত্র্যও যোগ হওয়ায় নিজের দিনে তিনি খুব ভয়ংকর। বাংলাদেশকে আসলে গজনফরের তেমন এক দিনই দেখতে হলো, যে দিনের শিরোনাম আসলে—গজনফরকে বুঝতে না পারার খেসারত দিয়ে গজব মানে হার দেখতে হলো।
তাতে দারুণ এক তালিকায়ও নাম লেখালেন গজনফর। ছেলেদের ওয়ানডেতে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ৬ উইকেট নিলেন গজনফর। ১৯৯০ সালে এই শারজাতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮ বছর ১৬৪ দিন বয়সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনিস। ২৭ বছর পর ২০১৭ সালে গ্রেটার নয়ডায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ বছর ১৭৮ দিন বয়সে ৪৩ রানে ৬ উইকেট নেন রশিদ।
১৮ বছর ২৩১ দিন বয়সে ৬ উইকেট নিলেন গজনফর। কত রানে? ওয়াকারের মতোই ২৬ রানে! তবে ওয়াকারকে ৬০ বল করতে হলেও গজনফর ৬ উইকেট পেয়েছেন ৩৯ বলের মধ্যে। আর এই ৩৯টি বলের একেকটি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল যেন মিসরীয় ‘হায়ারোগ্লিফিক।’
বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও স্পিনেও দক্ষ মুশফিক যেমন গজনফরকে পড়তেই পারলেন না। ক্যারম বলের ফ্লাইটে পরাস্ত হয়ে ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন। মুশফিক স্পিনে কতটা দক্ষ তাঁর একটি প্রমাণ হতে পারে, ২০১৫ সালের পর ওয়ানডেতে এই প্রথম স্টাম্পিংয়ের শিকার। এই তথ্য কিন্তু গজনফরের দক্ষতারও প্রমাণ। কতটা ভালো হলে মুশফিককে পরাস্ত করে ক্রিজ থেকে বের করে নিয়ে আসা যায়! রিশাদ ও তাসকিনের আউটগুলোর উদাহরণ না দিলেও চলে।
তবে ম্যাচ শেষে গজনফরকে নিয়ে আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহর কথাগুলো জানাতেই হবে, ‘সে বিশেষ প্রতিভা। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ। তার ওপর আস্থা আছে এবং সে জন্যই দলে এবং খেলছে। প্রথম কয়েক ওভারেও সে ভালো বোলিং করেছে। নো বল করার পর জানতে চেয়েছি কেন নো বল করেছে এবং বলেছি আর যেন না করে (হেসে)।’
গজনফর আর নো বল করেননি। ব্যাটসম্যান পরাস্ত হলে স্মিত হেসেছেন। আর ম্যাচ শেষে কথা বলেছেন পশতু ভাষায়, তাঁর রহস্য বোলিংয়ের মতো যার অর্থ উদ্ধার করতে পারেনি ক্রিকইনফোর মতো ক্রিকেট–পোর্টালও!