শতকের পর হেলমেটে জয়সোয়ালের চুম্বন। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাখাপট্টনম টেস্টের প্রথম দিনে
শতকের পর হেলমেটে জয়সোয়ালের চুম্বন। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাখাপট্টনম টেস্টের প্রথম দিনে

বিশাখাপট্টনম টেস্ট: ভারতের হয়ে খেললেন একা জয়সোয়ালই

যশস্বী জয়সোয়ালের ১৭৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে বিশাখাপট্টনমের নিষ্প্রাণ উইকেটে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৬ উইকেটে ৩৩৬ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে ভারত। হায়দরাবাদের সঙ্গে এ মাঠের উইকেটের পার্থক্য স্পষ্ট—স্পিনাররা তেমন বড় সহায়তা পাননি।

এরপরও প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গুরুত্বপূর্ণ, ভারত সেখানে খুব বেশি পিছিয়ে নেই হয়তো। কিন্তু সেখানে ভারতকে প্রথম দিন একা টেনেছেন জয়সোয়ালই। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট নেওয়ায় ইংল্যান্ডেরও অখুশি হওয়ার কথা নয় সেভাবে।

দিনে সর্বনিম্ন জুটিটি অবিচ্ছিন্ন ৬ রানের, সর্বোচ্চটি ৯০ রানের। এর প্রতিটিতেই ছিলেন জয়সোয়াল। তরুণ এ বাঁহাতি ছাড়া ভারতের আর কোনো ব্যাটসম্যান ফিফটির দেখাও পাননি। প্রথম দিনে ভারতের ৫৩.২৭ শতাংশ রান জয়সোয়াল একাই করেছেন, নিজের ইনিংসও গড়েছেন দারুণভাবে। সতর্ক থেকেছেন যেমন, তেমনি আক্রমণেও সাহসী। দিনে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে আঁটসাঁট বোলিং জেমস অ্যান্ডারসনের। তিনি ছাড়া বাকি সবাই দিয়েছেন ৩-এর ওপর করে রান। তবে একটি বল দিয়েই ইংল্যান্ড ৯৩ ওভার বোলিং করেছে।

টেস্ট অভিষেকের দিনে ২ উইকেট পেয়েছেন শোয়েব বশির

৪১ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন, ‘পার্ট টাইমার’ জো রুট, ১ ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন টম হার্টলির পর অভিষিক্ত শোয়েব বশির—দিনের প্রথম ঘণ্টায় টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা ইংল্যান্ড বোলারদের ক্রম ছিল এমন। শুরুতে সতর্ক ছিলেন রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সোয়াল; যদিও সুযোগ পেলে ব্যাট চালিয়েছেন পরের জন। প্রথম ঘণ্টায় ভারতের ৪টি চারের সব কটিই জয়সোয়ালের।

ড্রিংকসের পরপরই প্রথম আঘাতটি করেন বশির, তাঁকে ফ্লিক করতে গিয়ে লেগ স্লিপে ক্যাচ দেন ৪১ বলে ১৪ রান করা ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শুবমান গিল অবশ্য ইতিবাচক ছিলেন, দ্রুতগতিতে এগিয়ে মোমেন্টামটাও এনে দিচ্ছিলেন ভারতের পক্ষে। ৫ চারে ৩৪ রান করে ফেলেন গিল, এর মধ্যে দুটি ছিল অ্যান্ডারসনের বলে।

সেই অ্যান্ডারসনেরই অফ স্টাম্পের বাইরের ওবল সিমের বলে খোঁচা দিয়ে গিল ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে, ৪৬ বলে ৩৪ রানে। এ নিয়ে পঞ্চমবার অ্যান্ডারসনের বলে আউট হলেন গিল। এ নিয়ে ২২টি ভিন্ন পঞ্জিকাবর্ষে উইকেটের দেখা পেলেন ৪১ পেরোনো অ্যান্ডারসন—টেস্ট ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে এ কীর্তি হলো তাঁর।

মধ্যাহ্নবিরতির আগেই ফিফটি পেয়ে যান জয়সোয়াল। বশিরের বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কার পর রেহান আহমেদের মিসফিল্ডে চার পেয়ে মাইলফলকে যান এ বাঁহাতি। অ্যান্ডারসনকে মারা শ্রেয়াসের চারে শেষ হয় প্রথম সেশন, ওই শটে পূর্ণ হয় ভারতের ১০০। তাতে প্রথম সেশনে দুই দলেরই ভাগ থাকে প্রায় সমান।

গিলকে আউট করার পর অ্যান্ডারসনের উচ্ছ্বাস

মধ্যাহ্নবিরতির পরের শুরুটা ধীরলয়েই করেছিলেন জয়সোয়াল ও শ্রেয়াস; তবে দুজনই গতি বাড়াতে থাকেন। এ সেশনে শুধু শ্রেয়াসের উইকেটই হারায় ভারত, যোগ করে ১২২ রান। হার্টলির নিচু হওয়া বলে কট বিহাইন্ড হন শ্রেয়াস, যে ক্যাচ বেশ ভালোভাবে নেন বেন ফোকস।

তার আগে ৭৩ রানে হার্টলির বলে স্লিপে কঠিন একটা সুযোগ দিয়েছিলেন জয়সোয়াল, তাতে শুধু আঙুলই লাগাতে পারেন রুট। সেই হার্টলিকেই ৪৯তম ওভারে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারা ছক্কায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ও দেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি পান জয়সোয়াল, লেগেছে ১৫১ বল। হায়দরাবাদে প্রথম ইনিংসে ৮০ রানে থামলেও এবার আর সুযোগ হারাননি।

চা-বিরতির আগে ও পরে অভিষিক্ত রজত পাতিদারের সঙ্গে জয়সোয়ালের জুটিতে ওঠে আরও ৭০ রান, যেটি ভাঙে পাতিদার একটু অদ্ভুতভাবে রেহানের বলে বোল্ড হলে। পাতিদার ডিফেন্ড করেছিলেন, তবে ব্যাটের ওপরের অংশে লেগে বল যায় স্টাম্পে।

প্রথম দিনের খেলা শেষে জয়সোয়ালকে অভিনন্দন জানান রুট

রবীন্দ্র জাদেজা নেই বলে ইংল্যান্ডের সামনে ভারতের লোয়ার মিডল অর্ডার দুর্বল হয়েই ধরা দেওয়ার কথা; কিন্তু অক্ষর প্যাটেল জয়সোয়ালকে সঙ্গ দেন ভালোই। বশিরকে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তোলার আগে জয়সোয়ালের সঙ্গে ৫২ রান যোগ করেন অক্ষর। তাঁর উইকেটটি ইংল্যান্ড পেয়েছে পুরোনো বলেই, সেটিতেই এসেছে শ্রীকর ভরতের উইকেটও। দিনের মিনিট পাঁচেক খেলা বাকি থাকতে তিনিও দিয়েছেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ, এবার রেহানের বলে বশিরের হাতে।

রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে নিয়ে দিনটা শেষ করেছেন জয়সোয়াল, যেটি ছিল আক্ষরিক অর্থেই তাঁর দিন!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত ১ম ইনিংস : ৯৩ ওভারে ৩৩৬/৬

(জয়সোয়াল ১৭৯*, রোহিত ১৪, গিল ৩৪, শ্রেয়াস ২৭, পাতিদার ৩২, অক্ষর ২৭, ভরত ১৭, অশ্বিন ৫*; অ্যান্ডারসন ১/৩০, রুট ০/৭১, হার্টলি ১/৭৪, বশির ২/১০০, রেহান ২/৬১)

* ১ম দিন শেষে