পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ
পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ

‘নব্বইয়ের দশকের তারকারা পাকিস্তান ক্রিকেটের ক্ষতি করেছেন’

সাফল্যের বিচারে পাকিস্তান ক্রিকেটের সেরা সময় অবশ্যই নব্বইয়ের দশক। এই দশকেই ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জেতে পাকিস্তান। পাশাপাশি টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে পরিণত হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা দলে। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, সাঈদ আনোয়ার, ইজাজ আহমেদ, ইনজামাম-উল-হক—তারকার অভাব ছিল না পাকিস্তান ক্রিকেটে। ইমরান খান, জাভেদ মিয়াদাঁদ, জহির আব্বাসদের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান ক্রিকেট উঠে গিয়েছিল অন্য উচ্চতায়। তবে একবিংশ শতাব্দীর ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজ তাঁর পূর্বসূরিদের ভিন্ন ভূমিকাও দেখছেন। তাঁর মতে, নব্বইয়ের দশকের তারকারা ম্যাচ পাতানো থেকে শুরু করে দলের মধ্যে ষড়যন্ত্রসহ নানা কাণ্ড ঘটিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটের ক্ষতি করেছেন।

এই শতকে পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হাফিজ। পাকিস্তান দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। আলট্রা এজ নামের একটি পডকাস্টে হাফিজ বলেছেন, পাকিস্তান দলে দুর্নীতির বীজ বপন করা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে।

নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সাফল্য ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়

পডকাস্টে ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে সেই স্পট ফিক্সিং কাণ্ড নিয়ে কথা বলতে গিয়েই নব্বইয়ের দশকের প্রসঙ্গ টানেন হাফিজ, ‘২০১০ সালে স্পট ফিক্সিংয়ের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সেটিই তো প্রথম ঘটনা নয়। এর শিকড়টা অনেক পুরোনো। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা আগের ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব দিইনি। পাকিস্তানের ক্রিকেট মহল কিংবা জনগণ এসব ভুলে গেছে। পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। যদি কোনো খারাপ জিনিসকে আপনি দ্বিতীয় সুযোগ দেন, সেটি পরে আরও ভয়ংকর হয়ে ফেরে। আরও বেশি ক্ষতি করে।’

ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিস ছিলেন নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপন

২০১০ সালে লর্ডস টেস্টে ইচ্ছা করে নো বল করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আমির। সে সময়ের অধিনায়ক সালমান বাটের প্ররোচনায় স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়েছিলেন আমির। পরে সেই ঘটনায় নিষিদ্ধ হন বাট, আমির ও মোহাম্মদ আসিফ। আমির পাকিস্তান দলে আবার ফিরলেও বাট ও আসিফ আর কখনোই ফিরতে পারেননি।

নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানের আরেক সেরা ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ার

হাফিজের মতে, ২০১০ সালের ঘটনার শিকড় প্রোথিত নব্বইয়ের দশকে। তিনি অবশ্য কারও নাম নেননি। বলেছেন, নব্বইয়ের দশকের অনেক তারকা ক্রিকেটার অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আর সেটিই পাকিস্তান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছে, ‘২০১০ সালের ঘটনার অনেক আগেই নব্বইয়ের দশকে অনেক তারকা ক্রিকেটার অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছিলেন। এঁদের অনেককেই পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি বলা হয়। তাঁরা আসলেই কিংবদন্তি। আমি তাঁদের সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি, তাঁদের সে সময়ের খেলার কারণে। কিন্তু এঁরাই ওই সময় অনেক অবৈধ কাজ করেছেন।’

হাফিজের দাবি, নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান দলের তারকারা একে অন্যের পেছনে লেগে থাকতেন

নিজের মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে হাফিজ বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের দিকে তাকালে দেখবেন, পাকিস্তান দলে অনেক সমস্যা ছিল। পাতানো খেলার সঙ্গে খেলোয়াড়েরা জড়িয়েছেন। নিজেদের মধ্যে সমস্যা তৈরি করেছেন। একে অন্যের পেছনে লেগেছেন, ষড়যন্ত্র করেছেন, এসব ঘটনা পাকিস্তানের ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করেছিল। অথচ এই ক্রিকেটাররাই ছিলেন দুর্দান্ত। এই দুর্দান্ত ক্রিকেটাররা অনেকেই শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিলেন না। তাঁরা নিজেদের পাকিস্তান ক্রিকেটের দূত হিসেবে তুলে ধরতে পারেননি। পাকিস্তান ক্রিকেটের সুন্দর পরিচয়টা তাঁরা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারেননি। তাঁরা কেউই দারুণ উদাহরণ রেখে যাননি, যেটা পরের প্রজন্মের ক্রিকেটাররা অনুসরণ করতে পারেন।’

১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতার প্রসঙ্গে হাফিজের মন্তব্য, ‘নব্বইয়ের দশকের অনেক ক্রিকেটারেরই প্রতিভার সঙ্গে অর্জনের কোনো মিল নেই। ১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতার পর পাকিস্তান ক্রিকেট দল আর কি জিতেছে?’