সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, তানজিদ হাসান…এক এক করে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করে ফেললেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধে মিনহাজুল আরও একবার নামগুলো বললেন। এই ১৭ জনের মধ্যে মাহমুদউল্লাহর নামটা নেই।
মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের সর্বশেষ তিনটি ওয়ানডে সিরিজেও ছিলেন না। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে মাহমুদউল্লাহর উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল, এশিয়া কাপের দলে হয়তো জায়গা হবে এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের। কিন্তু তা আর হলো না। মাহমুদউল্লাহকে বাদ দিয়েই আজ ঘোষণা করা হলো এশিয়া কাপের স্কোয়াড।
তবে মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা যে সহজ ছিল না, তা বোঝা গেল মিনহাজুলের কথায়। তাঁর ব্যাখ্যা, টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায় না থাকায় মাহমুদউল্লাহর জায়গা হয়নি। মিনহাজুলের মুখেই শুনুন, ‘মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এরপর টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদের একটা পরিকল্পনা দিয়েছে। সামনে কোন দেশের সঙ্গে কীভাবে খেলা হবে এসব নিয়ে। ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে এবং অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
২০২১ সালে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলা সৌম্য সরকারকে নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু মিনহাজুল জানিয়েছেন, এশিয়া কাপের জন্য সৌম্যকে নিয়ে নির্বাচকদের মধ্যে তেমন কোনো আলোচনাই হয়নি, ‘সৌম্য সরকারের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। এশিয়া কাপের ব্যাপারে তাঁকে নিয়ে আলোচনা করিনি।’
তবে মিনহাজুল জানিয়েছেন, নিজেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে আফিফ হোসেনকে নিয়ে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে দলে ফেরা আফিফ দুই ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে রান করেছেন ৪ ও ০। তবু ১৭ জনের দলে জায়গা হয়েছে এই বাঁহাতির। এ নিয়ে মিনহাজুলের ব্যাখ্যা, ‘আফিফকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। ম্যানেজমেন্ট কেন তাকে চাইছে এসব নিয়ে। তারপরও কিছু কিছু জায়গা আছে, ক্যাপ্টেনের পছন্দ হতে পারে, সেই জায়গায় আমরা তাকে সুযোগ দিয়েছি।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়েই জাতীয় দলে ফিরেছেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে সুযোগ পেয়ে রান করেছেন মাত্র ৯ ও ০। তবু এশিয়া কাপের দলে তাঁকে রাখার কারণ জানাতে গিয়ে মিনহাজুল বলেছেন, ‘নাঈমের যেহেতু আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আছে, তাই তাঁকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছি। সে ইমার্জিং এশিয়া কাপেও ভালো করেছে। আশা করি, সে এবার ভালো করবে।’
আফগানিস্তান সিরিজের দলে ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। কিন্তু এশিয়া কাপের দলে তাঁকে রাখা হয়নি। যদিও তাইজুলকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটাও সহজ ছিল না। তাঁর জায়গায় আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে বেছে নেওয়ার কারণটা জানা গেল মিনহাজুলের কথায়, ‘তাইজুলের ব্যাপারটা, সে অ্যাটাকিং। নাসুম একটু ডিফেন্সিভ। ম্যানেজমেন্ট যে প্ল্যান দিয়েছে, তাতে নাসুমের দিকে গিয়েছি। এশিয়া কাপে ফ্ল্যাট উইকেটে খেলা হতে পারে, সে জন্য নাসুমকে বিবেচনা করা।’
নাসুমের সঙ্গে ওয়ানডে দলে ফিরেছেন আরেক স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান। তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন গত বছরের এশিয়া কাপে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত ছিলেন না। কাঁধের চোটের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় ইমার্জিং এশিয়া কাপে ব্যাটে-বলে ভালো করায় নতুন করে আলোচনায় আসেন মেহেদী। এতে দুয়ার খুলে যায় জাতীয় দলের।
মিনহাজুলের আশা, মেহেদী এবার নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন, ‘বিপিএলে সে কাঁধের চোটে পড়েছিল। এখন ফিরে এসেছে। যেহেতু ইমার্জিংয়ে ভালো করেছে, আশা করছি, সে নিজেকে মেলে ধরতে পারবে।’ আরেক অলরাউন্ডার শামীম হোসেনকে নিয়েও প্রধান নির্বাচককে আশাবাদী মনে হলো। এর আগে দেশের হয়ে ১৭টি টি-টোয়েন্টি খেললেও এখনো ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় শামীম।
শামীমের টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্সই তাঁকে এশিয়া কাপের দলে নিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন মিনহাজুল, ‘শামীম আমাদের হাইপারফরম্যান্স বিভাগে ছিল। দলে সুযোগ পাওয়ার পর ২০২১–এর দিকে সময়টা খারাপ গেছে। এখন ভালো করছে। গত কয়েকটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভালো করেছে।’ এশিয়া কাপ দিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাক পেলেন তরুণ ব্যাটসম্যান তানজীদ হাসান। ইমার্জিং এশিয়া কাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান (৪ ম্যাচে ১৭৯) করেছেন। তাঁকে নিয়ে নির্বাচকেরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী, ‘তানজিদকে নিয়ে আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। শেষ ইমার্জিং সিরিজে ভালো করেছে। আশা করি, সে দেশের হয়ে ভালো করবে।’
এশিয়া কাপের জন্য যে দলটা ঘোষণা হবে, সেটাই হবে অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের দল। ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে এমন কথা বেশ কয়েকবার বলা হলেও আজ মিনহাজুল শোনালেন ভিন্ন কথা, ‘এশিয়া কাপের পর দল দেওয়ার একটা সময় আছে। তার আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজ আছে। আইসিসির একটা ডেডলাইন আছে। তার আগে দিয়ে দেব।’