নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ১০ অধিনায়কের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে তুলে ধরা হলো আরব আমিরাতের ঐতিহ্য। গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে
নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ১০ অধিনায়কের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে তুলে ধরা হলো আরব আমিরাতের ঐতিহ্য। গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে

এবার স্মরণীয় বিশ্বকাপের আশায় বাংলাদেশ

আজ রঙিন সাজে সাজার কথার ছিল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের। মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনকে ঘিরে উৎসবের আলোয় ঝলমল করার কথা ছিল বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেটের। ঘরের মাঠে উদ্বোধনী ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চোখেমুখে দৃপ্ত প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামার কথা ছিল নিগার সুলতানার দলের।

নিগাররা আজ বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামছেন ঠিকই, তবে সেটি শেরেবাংলায় নয়, কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইসিসি বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপটাকে সরিয়ে নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আয়োজকস্বত্ব হারায়নি বাংলাদেশ, তবে ‘স্বাগতিক’ শব্দটার পরিবর্তে এখন ‘আয়োজক’ শব্দটাই বেশি জুতসই বাংলাদেশের জন্য। বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে ২০ অক্টোবর দুবাইয়ে।

স্বাগতিক থেকে শুধুই আয়োজক হয়ে যাওয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েরা মাঠ নামবেন ইতিহাস বদলানোর স্বপ্ন নিয়ে। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ জয়ই হয়ে আছে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বশেষ সুখস্মৃতি। এরপর খেলা চার বিশ্বকাপে টানা ১৬টি ম্যাচে শুধু হারই সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের।

আজ প্রথমবার খেলতে আসা স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে সেই হারের ধারা থেকে নিগাররা বেরিয়ে আসতে পারবেন কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে চারটি টি-টোয়েন্টি খেলে চারটিতেই জেতা বাংলাদেশই আজ ফেবারিট। পরে কী হবে, সেটি না ভেবে অন্তত শুরুটা জয় দিয়ে করার ভালো সুযোগ বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সামনে।

বিশ্বকাপ রাঙাতে অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম করছেন নিগাররা

‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশ এরপর সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার পর মাঠে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। কাগজে-কলমে শক্তির পার্থক্যে ও র‌্যাঙ্কিংয়েও ওই তিন দলের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। এমন প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলে সেরা দুইয়ে থেকে সেমিফাইনাল ওঠার কাজটা যে কঠিন, সেটি নিগাররা জানেন। তবে কঠিনেরে জয় করার ইচ্ছা না থাকলে আর খেলার মাঠে নামা কেন!

বিশ্বকাপ শুরুর আগে গতকাল অধিনায়ক নিগার সুলতানার কণ্ঠেও ছিল ইতিহাস বদলানোর প্রত্যয়, ‘২০১৪ সাল ছাড়া বিশ্বকাপে তো আমাদের বলার মতো কিছু নেই। তাই এই বিশ্বকাপটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই এমন কিছু করতে, যাতে এই বিশ্বকাপটার কথা মনে থাকে।’

২০১৪ সাল ছাড়া বিশ্বকাপে তো আমাদের বলার মতো কিছু নেই। তাই এই বিশ্বকাপটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
নিগার সুলতানা, অধিনায়ক, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল

এবারের বিশ্বকাপটাকে স্মরণীয় করতে সবার আগে যে আজ স্কটল্যান্ডকে হারাতে হবে, সেটি তো জানাই। এটি আবার নিগার সুলতানার ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। উপলক্ষটা স্মরণীয় করে রাখতে জয়টাই কাঙ্ক্ষিত আজ।

শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর পর দল নিয়ে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে নিগারের, ‘স্কটল্যান্ডকে হারিয়েই শুরু করতে চাই। সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে যেভাবে সবাই খেলেছে, সবার মধ্যে ম্যাচ জয়ের যে ক্ষুধা দেখেছি, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো খেলেছে সবাই। তাই বলব, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করতে আমরা প্রস্তুত।’

২০১৫ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন নিগার। ৯ বছর পর শততম ম্যাচ খেলবেন। দারুণ কিছু করেই উপলক্ষটা রাঙাতে চান তিনি, ‘বিশ্বাসই হচ্ছে না ১০০তম ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। মনে হয়, এই তো শুরু করলাম! সবচেয়ে বেশি খুশি হব ১০০তম ম্যাচে ভালো কিছু করে দলের জয়ে অবদান রাখতে পারলে।’

টুর্নামেন্টে অনেক দূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশ নারী দলের শ্রীলঙ্কান কোচ হাশান তিলকরত্নেও, ‘আমরা অনেক দূর যেতে চাই, মেয়েরা জানে তাদের কী লক্ষ্য। আমরা বাংলাদেশের ২০০ মিলিয়ন মানুষকে ইতিবাচক ফল উপহার দিতে চাই।’
আজ মাঠে নামলেই বাংলাদেশের প্রথম নারী খেলোয়াড় হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টি খেলবেন নিগার। ‘১০০’ ডাকছে বাংলাদেশের আরেক খেলোয়াড় নাহিদা আক্তারকেও। আর ১টি উইকেট পেলেই এই সংস্করণে ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবেন এই বাঁহাতি স্পিনার।