অর্ধেক কাজ প্রথম ইনিংসেই শেষ করে ফেলেছিল ফরচুন বরিশাল। ৭৭ রানে ৭ উইকেট—টসে জিতে রংপুর রাইডার্সের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপকে এমন ধসের মুখে ফেলতে পারলে আর কী লাগে! রংপুর পরে যদিওবা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল, শেষ রক্ষা হয়নি। রংপুরের ১৪৯ রান টপকে ৯ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠে গেছে তামিম ইকবালের দল বরিশাল। ফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের।
রংপুরের ওই ধসের পরও শামীম হোসেনের চিন্তাটা ছিল ভিন্ন। ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনি রংপুরকে টেনে তুললেন ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটিংয়ের অবিশ্বাস্য প্রদর্শনীতে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে এবারের বিপিএলের দ্রুততম (২০ বলে) অর্ধশতের রেকর্ড গড়েন তিনি। শামীমের ২৪ বলে ৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংসই রংপুরকে ৭ উইকেটে ১৪৯ রানের পুঁজি এনে দিয়েছিল।
কিন্তু রাতের ম্যাচে বরিশালের মতো তারকায় ঠাসা ব্যাটিং লাইন আপকে ঠেকিয়ে রাখতে ১৪৯ রান যথেষ্ট ছিল না। মুশফিকুর রহিমের ৩৮ বলে অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংসে ১৮.৩ই ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বরিশাল। রান তাড়ায় আরও একবার বরিশাল বুঝিয়ে দিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা কত বড় শক্তি। সাড়ে ৭ রান রেটের ম্যাচ কীভাবে জিততে হয়, তা এতদিনে মুখস্থ হয়ে যাওয়ার কথা তামিম-মুশফিকদের। একজন ১২০ স্ট্রাইক রেটে খেলবেন, তাঁর সঙ্গে দুই-একজনের ছোট্ট ক্যামিও জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেবে দলকে। বরিশালের হয়ে সে কাজটাই করলেন মুশফিকুর রহিম। দলের ২২ রানের মধ্যে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হয়ে গেলেও বরিশালকে উদ্বিগ্ন হতে দেয়নি মুশফিকের ইনিংস। তাঁর সৌজন্যেই মাঝের ওভারে বরিশাল পেয়েছে তিনটি জুটি।
ভাগ্যও পক্ষে ছিল মুশফিকের। ইনিংসের শুরুতে ইনসাইড এজে চার, টপ এজে ছক্কার পর দুই দুইবার রান আউট থেকে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। রংপুরকে ওই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হতো। একের পর এক উইকেট নিতে হতো। কিন্তু মুশফিক তা হতে দেননি। শুরুর চাপটা উড়িয়ে দিয়ে সৌম্যকে (১৮ বলে ২২) নিয়ে গড়েছেন ৩৭ বলে ৪৭ রানের জুটি। পরে কাইল মেয়ার্সকে (১৫ বলে ২৮) নিয়ে আরও ৫০ রান যোগ করেন ২৭ বলে।
রংপুরের হাত থেকে ম্যাচ ছিটকে যায় ওই জুটিতেই। ডেভিড মিলারকে নিয়ে বাকি পথটা পাড়ি দেন মুশফিক। ২৪ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের জুটি গড়েন দুজনে। মুশফিকের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৮ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো অপরাজিত ৪৭ রান। মিলারের ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে অপরাজিত ২২ রান।
রংপুরের স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে ঘুরেফিরে শামীমের ইনিংসেই চোখে পড়ে। আগের ম্যাচে উদ্বোধনে নেমে ০ রানে আউট হওয়া শামীম কাল নেমেছেন সাতে। সাকিব-নিশামদের ব্যর্থতার পর তিনি যখন ক্রিজে আসেন, তখন রংপুরের রান ১৪.২ ওভারে ৭৬, নেই ৬ উইকেট। শামীম ব্যাটিংয়ে নামার দুই বল পরেই উইকেট সংখ্যাটা ৭-এ এসে ঠেকে, দলের রান তখন ৭৭। রংপুরের সর্বশেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নুরুল হাসানও আউট। তবে শামীমের সঙ্গে জুটি বেঁধে আবু হায়দার প্রথম বলেই ৩ উইকেট নেওয়া জেমস ফুলারের মাথার ওপর দিয়ে মারেন ছক্কা।
দুজনের ৩১ বলে ৭২ রানের অবিশ্বাস্য জুটির শুরু সেখান থেকেই। জুটিতে রনির অবদান ৯ বলে ১২ রান। রংপুরকে লড়াই করার মতো রান এনে দেওয়ার বাকিটা গল্পটা লিখেছেন বয়সী শামীম। ২৩ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ক্রিজে ছিলেন ৩৩ মিনিট, বল খেলেছেন ২৪টি। ২৪৫ স্ট্রাইক রেটে ৫টি চার ও ৫টি ছক্কায় শামীমের রান ৫৯, যার মধ্যে ২৫ রানই উইকেটের পেছনে। ইনিংসের শেষ দুই ওভারেই নিয়েছেন ৩৭ রান। স্কুপ, রিভার্স স্কুপ, স্লগ সুইপ দিয়ে শুরু; এরপর একে একে বেরিয়ে এল পুল, ড্রাইভ ও কাট শটের মতো প্রথাগত শট। আধা ঘন্টার অবিশ্বাস্য ক্রিকেটে রংপুরকে ফাইনালের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন শামীমই। যদিও শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়নি সেই স্বপ্ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৪৯/৭ (রনি ৮, মেহেদী ২, সাকিব ১, নিশাম ২৮, পুরান ৩, নবী ১২, নুরুল ১৪, শামীম ৫৯*, আবু হায়দার ১২*; মায়ার্স ৪–০–২২–১, সাইফউদ্দিন ৪–০–২৭–২, ম্যাকয় ৪–০–৫৩–০, ফুলার ৪–০–২৫–৩, মিরাজ ২–০–৯–১, তাইজুল ২–০–৯–০)
ফরচুন বরিশাল: ১৮.৩ ওভারে ১৫২/৪ (মিরাজ ৮, তামিম ১০, সৌম্য ২২, মুশফিক ৪৭*, মায়ার্স ২৮, মিলার ২২*; ফারুকী ৪–০–১৬–১, মেহেদী ২–০–২৫–০, আবু হায়দার ৪–০–৩৭–২, নিশাম ১–০–১৬–০, হাসান ৩–০–১৭–০, নবী ৩–০–২০–১, সাকিব ১.৩–০–১৭–০)।
ফল: ফরচুন বরিশাল ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম