নিক পোথাস যেন ধুলার আবরণ সরিয়ে স্মৃতির আয়নাটা পরিষ্কার করে তুলতে চাইলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর বাংলাদেশ দলের নিকট অতীতের সাফল্য যে ভুলতে বসেছিল সবাই!
গত ডিসেম্বর থেকে ধরলে সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশ সফলই হয়েছে বেশি। ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টি–টোয়েন্টি সিরিজে ইংল্যান্ডকে হারানো। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টি–টোয়েন্টি সিরিজ এবং পরপর দুটি ওয়ানডে সিরিজ জয়।
তবু যে আফগানিস্তানের কাছে এবারের দুটি ওয়ানডে ম্যাচের ফলাফলকেই মানুষ বড় করে দেখছেন, তাতে যেন একটু অসন্তুষ্টই বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ। গতকাল বৃষ্টিতে অনুশীলন বাতিল হওয়া দিনে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন পোথাস। সেখানেই বললেন, ‘আমরা মাত্র দুটি ম্যাচ দেখে বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের বিচার করছি। আমাদের উচিত লম্বা সময়ের পারফরম্যান্স দেখে তাদের বিচার করা, শুধু দুটি ম্যাচ দেখে নয়।’
সেই দুটি ম্যাচ হেরে চট্টগ্রামে আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। সিরিজ হেরে যাওয়ায় একদিক থেকে এই ম্যাচ মূল্যহীন। আবার প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যাওয়াতেই এর একটা অন্য রকম গুরুত্বও তৈরি হয়েছে। ম্যাচটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের ধবলধোলাই এড়ানোর ম্যাচ। অন্যদিকে আফগানিস্তানের জন্য বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো ধবলধোলাই করার।
নিক পোথাস চাইলে এ প্রসঙ্গেও আরেকটা স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে পারতেন। এই যে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে তৃতীয় ম্যাচে ধবলধোলাই এড়ানোর চ্যালেঞ্জ, এ রকম ম্যাচে বাংলাদেশকে এখন সহজে হারানো যায় না। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ অত্যন্ত খারাপ খেলে সিরিজ হেরে গেলেও দেখা যায় শেষ ম্যাচে ঠিকই প্রবল প্রতাপে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের ধবলধোলাইয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেয়। অন্তত সর্বশেষ এ রকম দুটি শঙ্কার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ তা–ই করে দেখিয়েছে।
ফিরে যান এ বছরের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে, অথবা আরেকটু পিছিয়ে গত বছরের আগস্টে হওয়া জিম্বাবুয়ে সফরে। ২০২১ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ড থেকে ধবলধোলাই হয়ে আসার পর এই দুটি ওয়ানডে সিরিজেই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে ৩–০তে হারানোর সুযোগ পেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পারেনি।
আফগানিস্তানকেও আজ নিশ্চয়ই একই হুংকার দিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সিরিজ জিতলেও তোমাদের ধবলধোলাইয়ের আশা বৃথা। এ রকম ম্যাচে কীভাবে দান উল্টে দিতে হয়, সেই ফর্মুলা এখন বাংলাদেশ দলের মুখস্থ।
সত্যি বলতে কি, এই সিরিজের প্রথম দুটি ওয়ানডেতেই বাংলাদেশ এতটা বাজে খেলেছে যে আশার পারদ ওপরের দিকে ওঠাতে চাইলে এখন ইতিহাস থেকে ইতিবাচক উপকরণ খোঁজা ছাড়া আর উপায়ও নেই। স্মৃতির পাতা ওল্টানো ছাড়া বাংলাদেশ দলের আবহে এমন একটা জিনিসের দেখা নেই, যেটাকে আঁকড়ে ধরে শেষ ম্যাচের আগে লিটন দাসের দল আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে। ও হ্যাঁ, টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য আশাবাদী, অন্তত একটা সমস্যা থেকে আজ মুক্ত থাকবে দল। সেটা হলো, তামিম ইকবালের অবসর এবং অবসর বাতিলের ঘটনাপ্রবাহের প্রভাব।
অধিনায়ক তামিম অবসরের ঘোষণাটা প্রথম ওয়াডের পর দিলেও তাঁর মধ্যে ঝড়ের সূত্রপাত তো তার আগে থেকেই। চট্টগ্রামে সেই ঝড় তুলে দিয়ে তিনি ঢাকায় ফিরে গিয়ে অবসর প্রত্যাহার করেছেন, তবে ঝড়ের ঝাপটা তখনো সয়ে উঠতে পারেনি দল। টিম ম্যানেজমেন্টর এক সদস্য সেটাই বলছিলেন গতকাল, ‘দ্বিতীয় ম্যাচে ছেলেরা খারাপ খেলেছে, এটা যেমন ঠিক, তেমনি তাদের শরীরী ভাষা দেখেও কিন্তু মনে হয়নি তারা খেলার মধ্যে ছিল। তবে এরপর দুটি দিন পার হয়ে গেছে। আশা করি সব ভুলে শেষ ম্যাচে ওরা ঠিকঠাক থাকবে।’
এ জন্য শেষ ম্যাচটাকে একটু ভিন্ন চোখে দেখারও চেষ্টা করছে দল। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের ফলাফল এবং অন্যান্য ঘটনাপ্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এটাকে দেখা হচ্ছে একক একটি ম্যাচ হিসেবে, যে ম্যাচে দলের টপ অর্ডার থেকে শুরু করে বোলিং আক্রমণ—সবকিছুতেই পরিবর্তনের ছাপ দেখা যেতে পারে। কাল রাতে টিম ম্যানেজমেন্টের সভায় এটাই ছিল মূল আলোচ্য বিষয়।
তাতে আফগান বোলিং আক্রমণ নিয়ে ভয়–আতঙ্ক কতটা কমবে, কে জানে! বিশ্বের সব দলের জন্যই আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠা আফগান স্পিন–ত্রয়ীকে সামলানো নিয়ে অবশ্য একটা সহজ সূত্র বলে দিয়েছেন নিক পোথাস। সেটা হলো তাদের বিপক্ষে যত বেশি ম্যাচ খেলা যাবে, ততই তাদের সামলানোর কৌশল শেখা যাবে।
তো আজ সে রকমই আরেকটি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল এবং যেহেতু এটি বাংলাদেশের জন্য ধবলধোলাই এড়ানোর ম্যাচ, আফগান বোলাররাও আজ নিশ্চয়ই কিছুটা ব্যাকফুটেই থাকবেন। এ রকম ম্যাচ এখন সহজে হারে না বাংলাদেশ।