টানা দুই ম্যাচ হেরে এলিমিনেটর খেলতে এসেছিল ফরচুন বরিশাল, রংপুর রাইডার্স হেরেছিল নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে। বরিশালের সেই হারের ধারা বজায় থাকল। বরিশালের দেওয়া ১৭১ রানের লক্ষ্য ৩ বল ও ৪ উইকেট বাকি রেখেই পেরিয়ে গেছে রংপুর। বরিশালের মেহেদী হাসান মিরাজের ৪৮ বলে ৬৯ রানের ইনিংস ম্লান হয়ে গেছে রংপুরের শামীম হোসেনের ৫১ বলে ৭১ রানের ইনিংসে। শেষ দিকে ৯ বলে ১৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ক্যামিও খেলেছেন মেহেদী হাসান।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারে সাকিবের বলে মোহাম্মদ নাঈম ফেরেন, প্রথম ৩ ওভারে ওঠে মাত্র ৮ রান। শামীম হোসেন ও রনি তালুকদার সেখান থেকেই পাওয়ারপ্লে শেষে রংপুরকে টেনে তোলেন ৫৫ রান পর্যন্ত। বরিশাল পরের ব্রেক-থ্রু পায় ৮ম ওভারে গিয়ে, কামরুল ইসলামের বলে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ তোলেন ১৭ বলে ২৯ রান করা রনি। তার আগে শামীমের সঙ্গে জুটিতে তোলেন ৩৯ বলে ৬১ রান। অবশ্য আউট হওয়ার আগে ওভারেই লং অনে মাহমুদউল্লাহর হাতে বেঁচে গিয়েছিলেন রনি।
রনি ফেরার পরও রংপুরের রানের গতি কমেনি, চারে আসা নুরুলের সঙ্গে শামীমের জুটিতে ওঠে ২২ বলে ৩৫ রান। নিজের শেষ ওভারে এসে রংপুর অধিনায়ক নুরুলকে এলবিডব্লু করেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব, সে উইকেট তিনি পান রিভিউ নিয়ে। এবারের বিপিএলে প্রথমবার নামা নিকোলাস পুরান অবশ্য সেভাবে সঙ্গ দিতে পারেননি শামীমকে, খালেদের ফুলটস বলে শর্ট কাভারে ক্যাচ তোলেন এ বাঁহাতি, ৮ বলে ৫ রান করেই। তবে ম্যাচ ছিল রংপুরের নাগালেই। ১৭তম ওভারে ফিরে যান শামীম। সর্বশেষ ৭ ম্যাচে মাত্র তিন বার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন এ বাঁহাতি, সর্বোচ্চ ছিল ১১ রান। আজ যেন পুষিয়ে দিলেন সে সব, ইনিংসে তিনি মারেন ৪টি করে চার ও ছক্কা।
অবশ্য শামীম আউট হওয়ার পর খালেদ আহমেদের করা ওই ওভারে আসে মাত্র ৪ রান। পরের ওভারে কামরুলকে মারা দাসুন শানাকার ছক্কায় একটু এগোলেও ডোয়াইন ব্রাভোর উইকেটে আবার চাপ বাড়ে রংপুরের। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৯ রান, খালেদের করা ১৯তম ওভারে নো বল ও দুই চারসহ আসে ১১ রান। শেষ ওভারে সাকিব ভরসা রেখেছিলেন কামরুলের ওপর, তবে দ্বিতীয় বলে স্কুপ করে মারা চারে রংপুরকে এগিয়ে নেন মেহেদী। পরের বলে থার্ডম্যান দিয়ে মারা চারে মাতেন বুনো উল্লাসে।
রংপুর ৩ বল বাকি রেখেই জিতেছে, তবে এ উইকেটে বরিশালের নিশ্চিতভাবেই অন্তত ১৫-২০ রান কম করার আক্ষেপ থাকার কথা। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল তারা, প্রথমবার খেলতে নামা আন্দ্রে ফ্লেচারের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। এ মৌসুমে এ নিয়ে চতুর্থবার ওপেন করতে এলেন তিনি। ফ্লেচার অবশ্য ধুঁকেছেন, পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার ১ বল আগে ফেরেন ১৬ বলে ১২ রান করে। এরপরও প্রথম ৬ ওভারে বরিশাল ৪৬ রান তোলে মূলত মিরাজের ঝোড়ো ব্যাটিংয়েই।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মিরাজের ৪৬ বলে ৬৯ রানের জুটিতে এরপর ভালো একটা ভিত পায় বরিশাল। ১২তম ওভারে মেহেদী হাসানকে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন মিরাজ, ৩৫ বলে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মিরাজের এটি পঞ্চম ফিফটি, ২০২০ সালের পর বিপিএলে প্রথম। ইনিংসে মারেন ৯টি চার ও ১টি ছক্কা।
১৩ ওভার শেষেও ১ উইকেটে ১১৪ রান ছিল বরিশালের, এমনকি তখন ২০০ রানের স্কোরের সম্ভাবনাও টিকে ছিল ভালোভাবেই। তবে ১১ বলের মধ্যে মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর একটু পথ হারায় বরিশাল। সাকিব আল হাসান বা ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের আগে পাঠানো হয় করিম জানাত ও ভানুকা রাজাপক্ষেকে।
ডোয়াইন ব্রাভোর করা ১৭ ও ১৯তম ওভারে আসে মাত্র ১১ রান। করিম ও রাজাপক্ষে অবশ্য ১৮ ও ২০তম ওভারে ২৯ রান তুলে একটু পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ৩ উইকেটে ১৭০ রানের স্কোর এ উইকেটে একটু কমই মনে হওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত হয়েছে সেটিই।