ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে অনেক বড় অবদান তাঁর। ২০১২ ও ২০১৬ দুই ফাইনালে উপহার দিয়েছিলেন ৭৮ ও অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সব সংস্করণ মিলিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে দুবার ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পাওয়া ক্রিকেটারও তিনি। সেই মারলন স্যামুয়েলসের গায়ে লেগে গেল কলঙ্কের দাগ।
দুর্নীতিবিরোধী চারটি ধারা ভঙ্গের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় স্যামুয়েলসকে ৬ বছর নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। এই নিষেধাজ্ঞা গত ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে; শেষ হবে ২০২৯ সালের নভেম্বরে। আজ নিজেদের ওয়েবসাইটে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ ব্যাপারে আইসিসির মানবসম্পদ ও নৈতিকতা বিভাগের প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল বলেছেন, ‘স্যামুয়লস প্রায় দুই দশক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে। এ সময়ে সে দুর্নীতিবিরোধী অনেক কর্মশালায় অংশ নিয়েছে এবং ভালো করেই জানত, এই নীতির অধীনে কী কী বাধ্যবাধকতা আছে।’
৪২ বছর বয়সী স্যামুয়েলসের কঠিন শাস্তি থেকে ভবিষ্যতে অনেকে শিক্ষা নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন মার্শাল, ‘যদিও সে এখন অবসর নিয়েছে, কিন্তু যখন অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, সে সেটার অংশ ছিল। যারা নিয়ম ভঙ্গ করতে চায়, তাদের জন্য স্যামুয়েলসের ৬ বছরের নিষেধাজ্ঞা শক্তিশালী প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।’
২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) পক্ষে স্যামুয়েলসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ গঠন করেছিল আইসিসি। ২০১৯ সালে আবুধাবি টি-টেন লিগের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছিল। গত আগস্টে দুর্নীতিবিরোধী স্বতন্ত্র একটি ট্রাইব্যুনালে শুনানির পর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। আর আজ শাস্তির ঘোষণা এল।
আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতির ২.৪.২, ২.৪.৩, ২.৪.৬ ও ২.৪.৭ নম্বর ধারা ভেঙেছেন স্যামুয়েলস। ২০১৯ সালে আবুধাবি টি-টেন লিগে তিনি কর্ণাটক টাস্কার্স দলে ছিলেন, যদিও কোনো ম্যাচ খেলেননি।
ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের অধিকাংশের সিদ্ধান্তে ২.৪.২ ধারা ভঙ্গের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে স্যামুয়েলসকে। এ ধারায় বলা আছে, কোনো রকমের উপহার, অর্থ, আতিথেয়তা বা অন্য সুবিধা নেওয়ার তথ্য স্বীকৃত দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তাকে না জানানোর মাধ্যমে ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা।
বাকি তিনটি ধারায় অবশ্য স্যামুয়েলসকে ট্রাইব্যুনালের সব সদস্যই দোষী মনে করেছেন। এর মধ্যে আছে ৭৫০ বা এর বেশি মার্কিন ডলার পাওয়ার তথ্য গোপন করা, তদন্তে স্বীকৃত কর্মকর্তাকে সহযোগিতায় ব্যর্থতা ও তথ্য গোপন করে স্বীকৃত কর্মকর্তার তদন্ত কার্যক্রম বিলম্বিত করা।
দুর্নীতির দায়ে শাস্তি পাওয়া স্যামুয়েলসের জন্য অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০০৮ সালে এমন অপরাধে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারতের ওয়ানডে ম্যাচের তথ্য পাচার করতে গিয়ে ভারতীয় পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়েন। সে সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড (সিডব্লুআই) তাঁর পাশেই ছিল। তদন্ত চলাকালে স্যামুয়েলস বিশ্বকাপও খেলেছিলেন। তবে পরে অপরাধ প্রমাণিত হয়। ফিরে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুটি বিশ্বকাপ জেতাতে বড় ভূমিকা রাখেন বিতর্কিত এই ব্যাটসম্যান।
যদিও ২০২১ সালে এবারের অভিযোগ ওঠার পর সিডব্লুআই বলেছিল, এমন কর্মকাণ্ডকে বরাবরই ধিক্কার জানায় তারা। আইসিসি ও ইসিবিকে সব রকম সহায়তা দেওয়ার ঘোষণাও দেয় সিডব্লুআই।
২০০০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে অভিষেক হয়েছিল স্যামুয়েলসের। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলেছেন ২০১৮ সালে। ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৪৫ ম্যাচ খেলেছেন তিনি।