ওয়ানডেতে দুই দলই যাচ্ছিল পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে। তবে সংস্করণ যখন টি-টোয়েন্টি, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের লড়াইটা যেন মনে করিয়ে দেওয়ার—এ সাম্রাজ্য আপাতত ইংল্যান্ডের কাছে থাকলেও একসময় ছিল তাদের। কীভাবে ছিল, গত রাতে গ্রেনাডায় সেটিই ইংলিশদের আরেকবার মনে করিয়ে দিল ক্যারিবীয়রা। ব্যাটিংয়ে দ্রুত উইকেট হারিয়ে একসময় চাপে পড়ে গেলেও ব্র্যান্ডন কিং ও রোভমান পাওয়েলে ভর করে ১৭৬ রান তোলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ১০ রানে। বার্বাডোজের পর গ্রেনাডায় জিতে ৫ ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানেও এগিয়ে গেছে স্বাগতিকেরা।
টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক বদলানোর ব্যাপারটি ‘অতি-মূল্যায়িত’, ক্যারিবীয়রা একসময় নিয়মিত বুঝিয়ে দিত সেটি। আপনি যখন ছক্কা মারতে পারবেন, তখন সিঙ্গেল নিয়ে লাভ কী! এ ম্যাচেও হয়েছে তা-ই। ইনিংসের প্রায় অর্ধেকসংখ্যক বল ডট দিয়েছে তারা, কিন্তু ১৩টি ছক্কায় ঠিকই তুলেছে লড়াই করার মতো স্কোর। কাইল মেয়ার্সের সঙ্গে ব্র্যান্ডন কিংয়ের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে, এরপর আর ১৩ রান তুলতেই আরও ৩ উইকেট হারায় তারা।
আদিল রশিদ ও রেহান আহমেদ—‘গুরু’ও ‘শিষ্যের’ যুগল আক্রমণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চাপে পড়ে বেশ। তবে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ এত লম্বা, তাদের এত পাওয়ার হিটার—ইংল্যান্ডও হয়তো জানত, সামনে আবার আসতে পারে ঝড়। শেষ পর্যন্ত হয়েছে সেটিই। ১৩ থেকে ১৭ ওভারের মধ্যে উঠেছে ৮০ রান। এর মধ্যে রশিদের ৩ রানের ওভার যেমন আছে, তেমনি আছে স্যাম কারেনের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খরুচে ৩০ রানের ওভারও।
মাত্র ২৮ বলেই অর্ধশতক করেন পাওয়েল, ইনিংস উদ্বোধনে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা কিং করেন ৫২ বলে ৮২ রান। ইনিংসের শেষ ২ বলে ২ উইকেট নেন টিমাল মিলস, কিন্তু ইংল্যান্ড স্বস্তিতে ছিল না তবু। পাওয়েল-কিংয়ের মাঝের আক্রমণ যে বড় একটা ক্ষতই সৃষ্টি করে! পাওয়েল যেমন পরে বলেছেন, ‘বিশ্ব জানে, আমরা-ক্যারিবীয় ব্যাটাররা পাওয়ার-হিটার। এই শক্তির দিক দিয়ে বিশ্বের আর সবার চেয়ে আরেকটু ভালো কীভাবে হতে পারি, সেটি নিয়ে কাজ করি আমরা। কারণ, তারা সিঙ্গেল নেওয়ার দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে অনেক ভালো।’
সর্বশেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের শুরুটা হয়েছিল উড়ন্ত। ৬ ওভারেই তারা তুলেছিল ৭৭ রান। এবার তাদের সেটি করতে না দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ক্যারিবীয়দের। কারণ, ‘ততটা নিষ্প্রাণ নয়’ ধরনের উইকেটে মাঝের ওভারে কাজে আসবে স্পিন। হয়েছেও সেটি।
পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ১৪ রান তুললেও প্রথম ৬ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৫১ রান, যে উইকেট আবার জস বাটলারের। গুড়াকেশ মোতি ও আকিল হোসেইন—ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই স্পিনার ৮ ওভারে মাত্র ৩৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন রশিদ, কিন্তু ক্যারিবীয় স্পিনারদের পারফরম্যান্সের কাছে ম্লান হয়ে গেছেন তিনিও।
১৫তম ওভারে ১০৮ রানে ৫ উইকেট হারালেও চারে নেমে অর্ধশতক করা কারেন আর ইংল্যান্ডের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ আশাই জুগিয়েছিল তাদের। কিন্তু ১৮তম ওভারে ৩২ বলে ৫০ রান করা কারেন, আর ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ৫ বলে ২ রান করা ক্রিস ওকসের উইকেট মূলত ইংল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেয়। শেষ ওভারে মঈন আলী ও রেহান মিলে তোলেন ১৭ রান, এরপরও ইংল্যান্ড থামে জয়ের ১১ রান আগেই।
কোচ ম্যাথু মট যেমন ম্যাচশেষে বলেছেন, মাত্র দুটি শট দূরে ছিলেন তারা। তবে সেই ‘শট’-এর ক্ষেত্রে ক্যারিবীয়রা ছিল বেশ এগিয়ে, তাদের ১৩টি ছক্কার বিপরীতে ইংল্যান্ড মেরেছে ৫টি কম। সেন্ট জর্জেসে ইংল্যান্ডকে আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছে পাওয়েলের দল—এ সাম্রাজ্য একসময় তাদেরই ছিল, যেটি ফিরে পেতে চায় তারা।