ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরছে আর ক্যামেরাও খুঁজে নিচ্ছে বাংলাদেশ দলের স্পিনারদের। কাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের অনুশীলনে বল হাতে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম (বাঁয়ে) ও অফ স্পিনার নাঈম হাসান।
ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরছে আর ক্যামেরাও খুঁজে নিচ্ছে বাংলাদেশ দলের স্পিনারদের। কাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের অনুশীলনে বল হাতে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম (বাঁয়ে) ও অফ স্পিনার নাঈম হাসান।

সামনে যখন নিউজিল্যান্ড

বিশ্বকাপের হতাশা ভোলার সিরিজ

অক্টোবর-নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ছিল বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতিটি দলই এ বছর টানা ওয়ানডে খেলার মধ্যে ছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেট সূচিও ছিল ওয়ানডেতে ঠাসা (২৯টি ম্যাচ)। সঙ্গে ছিল ১১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও। সাদা বলের চাপে বাংলাদেশ এ বছর টেস্ট ম্যাচ খেলেছে মাত্র দুটি। সেটিও আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। গত এপ্রিল ও জুনে ঘরের মাঠের দুটি টেস্টেই বাংলাদেশ দল জিতলেও তা সংগত কারণেই খুব বেশি আলোচিত হয়নি।

বছরের শেষে এসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে আবার লাল বলের খেলায় ফিরতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২৮ নভেম্বর থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুধু এই সিরিজেরই নয়, টেস্ট ক্রিকেটের নতুন চক্রেরই প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর টানা টেস্ট ক্রিকেটের মধ্যেই থাকতে হবে দলটাকে। আগামী ১৪ মাসে বাংলাদেশ টেস্টই খেলবে ১৪টি। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর বলে আগামী বছর টি-টোয়েন্টি ম্যাচও আছে অনেক। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ বাদ দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সিরিজেই খেলতে হবে ২০টি ম্যাচ। সে তুলনায় ওয়ানডে আছে কমই, সারা বছরে ১২টি।

এর আগে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বেশি টেস্ট কখনো খেলেনি বাংলাদেশ দল। টেস্ট দলের খেলোয়াড়দের জন্য এটা তাই বড় এক পরীক্ষাই হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দলের এক পেসারের কণ্ঠে এখনই শঙ্কা, ‘কঠিন হবে, বিশেষ করে পেসারদের জন্য। ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলাতে হবে সবাইকে।’

বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে

কঠিন চ্যালেঞ্জের শুরুটা হচ্ছে চেনা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ডকে ‘চেনা’ বলার কারণ, বড় দলগুলোর মধ্যে তাদের বিপক্ষেই নিয়মিত দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে পারে বাংলাদেশ। সাদা বলের ক্রিকেট হোক কিংবা লাল বলের, ২০১৬-১৭ মৌসুম থেকেই বাংলাদেশ নিয়মিত নিউজিল্যান্ড সফর করছে।

তবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ মানে নিউজিল্যান্ডেরই একচ্ছত্র আধিপত্য। দুই দল এখন পর্যন্ত ১৭টি টেস্ট খেলেছে, ড্র হয়েছে মাত্র ৩টি। বাংলাদেশ জিতেছে একটিতে। বাকি সব টেস্টেই জয়ী নিউজিল্যান্ড। অন্য দুই সংস্করণেই মোটামুটি একই রকম পরিস্থিতি। তাতে অবশ্য কিছুটা ছেদ টানতে পেরেছে গত বছরের মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট। গত বছরের জানুয়ারিতে সাকিব-তামিমবিহীন বাংলাদেশ দল মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে হারিয়ে দিয়েছিল সদ্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা নিউজিল্যান্ডকে। ওই জয় দিয়ে সিরিজটাও ড্র করে বাংলাদেশ দল।

গত বছরের সেই টেস্ট সিরিজের পর দুই দলের প্রথম সাক্ষাৎটা হতে যাচ্ছে এবার বাংলাদেশের নিজেদের মাঠে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি হলেও নাজমুল-মুমিনুলদের কাছে সেটিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ সুখস্মৃতিও ওই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টই। এরপর তাদের আর কোনো সংস্করণেই হারানো যায়নি।

পরশু সিলেটে পৌঁছে গতকালই প্রথম অনুশীলন করেছে নিউজিল্যান্ড দল

বাংলাদেশের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা নিউজিল্যান্ডের জন্যও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রের প্রথম সিরিজ হবে এটি। ২০২১ সালের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী কিউইদের চোখ এই সিরিজে স্বাভাবিকভাবেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্টের দিকে। কাল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের ক্রিকেটার গ্লেন ফিলিপসও তা-ই বললেন, ‘আমরা এই চক্রটা চাঙা হয়ে শুরু করতে চাই। ছেলেরাও উজ্জীবিত। আমরা এই চক্রে যত বেশি সম্ভব জয় যোগ করার চেষ্টা করব। বিদেশের মাটিতে জয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, ঘরের মাঠের গ্রীষ্ম শুরুর আগে ছন্দটা ধরতে হবে এখানেই।’

বাংলাদেশ দলের জন্য অবশ্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপায় চোখ রাখার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপের ভরাডুবি থেকে বেরিয়ে আসা। পরশু রাতে সিলেটে যাওয়ার আগে দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদমাধ্যমে এ কথা বলে গেছেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান, ‘বিশ্বকাপে আমাদের খারাপ সময় গেছে। আমাদের কাছে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ এবং বড় সুযোগ সেখান থেকে বেরিয়ে আসার। আমরা কতটা ভালো, সেটা দেখানোরও আরেকটা সুযোগ।’

বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড—দুই দলই কাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছে। সকালে মাঠে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, দুপুরে বাংলাদেশ। অনুশীলন হবে আজও।