১৪৩ রানের জুটিতে দলের জয়ের ভিত তৈরি করেন লিটন–তাওহিদ
১৪৩ রানের জুটিতে দলের জয়ের ভিত তৈরি করেন লিটন–তাওহিদ

বিপিএল: নিশাম-ঝড় ম্লান করে লিটন-হৃদয়ের ব্যাটে ফাইনালে কুমিল্লা

সংক্ষিপ্ত স্কোর: রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৮৫/৬ (নিশাম ৯৭*, নুরুল ৩০, মেহেদী ২২, রনি ১৩, পুরান ১৪; রাসেল ২/৩৭, বর্ষণ ১/২১, তানভীর ১/৩০, মুশফিক ১/৭২, নারাইন ১/১১) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: ১৮.৩ ওভারে ১৮৬/৪ (লিটন ৮৩, তাওহিদ ৬৪, মঈন ১২*, চার্লস ১০; ফারুকি ২/২৭, মেহেদী ১/১৯, আবু হায়দার ১/২০)। ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: লিটন দাস (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস)

৪ ওভারে ১৮ ইকোনমি রেটে ৭২ রান। বিপিএলে এর আগে এক ম্যাচে এত বেশি ইকোনমি রেটে বোলিং করেননি আর কোনো বোলারই। ১টি উইকেট পেলেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পেসার মুশফিক হাসানের জন্য ভুলে যাওয়ার মতো এক ম্যাচই হয়ে থাকবে এটা।

কুমিল্লার আরেক তরুণ পেসার রোহানাত দৌলা। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে আজই বিপিএল অভিষেক বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দলের এই পেসারের। প্রথম ২ বলে বাউন্ডারি খেলেও ১৮ বছর বয়সী রোহানাত শেষ পর্যন্ত ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। একেবারে খারাপ অভিষেক বলা যাবে না।

মিরপুরে কুমিল্লা-রংপুরের মধ্যে আজ রাতে হওয়া প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে এ রকম বিশেষ দ্রষ্টব্য ছিল আরও অনেক। ২৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও জিমি নিশাম কুমিল্লার বোলারদের রীতিমতো বেধড়ক পিটিয়ে ৪৯ বলে ৯৭ রান করলেন, যেটা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেই তাঁর সর্বোচ্চ। জয় তবু নিশামের দল রংপুরের নয়। ফাইনালে প্রথম নাম লেখানো দলটা চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। ১ মার্চের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে বুধবার রংপুর রাইডার্স-ফরচুন বরিশালের মধ্যে অনুষ্ঠেয় ম্যাচের জয়ীরা।

৮৩ রান করে ম্যাচসেরা লিটন

কুমিল্লার ইনিংসে উজ্জ্বলতম বিশেষ দ্রষ্টব্য অবশ্যই তাওহিদ হৃদয় আর লিটন দাসের ব্যাটিং। রংপুরের ৬ উইকেটে করা ১৮৫ রানের জবাবে ইনিংসের প্রথম বলে ওপেনার সুনীল নারাইনকে হারিয়ে ধাক্কা খায় কুমিল্লা। তবে এরপর অধিনায়ক লিটন দাসের সঙ্গে তাওহিদ হৃদয়ের ১৪.৫ ওভারে ১৪৩ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই কার্যত ম্যাচটা কুমিল্লার মুঠোয় চলে আসে। ৪৩ বলে ৬৪ রান করেছেন হৃদয়। ৪ ছক্কা ও ৯ বাউন্ডারিতে ৫৭ বলে ৮৩ রান করে অধিনায়ক লিটন জয়ের পথে কুমিল্লাকে আরেকটু এগিয়ে দিয়ে আউট হয়েছেন দলীয় ১৭৩ রানে। দুই বিদেশি মঈন আলী ও আন্দ্রে রাসেল বাকি কাজটা করে দেন ৯ বল বাকি থাকতেই।

মাত্র ৩ রানের জন্য তিন অঙ্কে পৌঁছাতে না পারার হতাশা নিশামের থাকতেই পারে, তবে স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে তাৎক্ষণিক সেটা নিশ্চয়ই ভুলতে পেরেছিলেন কিছুটা। সাত ছক্কার সঙ্গে আট চার তাঁর ইনিংসে। পূর্ব গ্যালারির লোহার গ্রিলে গিয়ে আঘাত করা মঈন আলীকে মারা একটা ‘ফ্ল্যাট সিক্স’ তো ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। তানভীরকে হাঁটু গেড়ে বসে কাভারের ওপর দিয়ে মারা শেখ মেহেদীর ছক্কা, মুশফিককে মিড অন দিয়ে নিকোলাস পুরানের গ্যালারিতে উড়িয়ে নিয়ে ফেলা—নড়বড়ে শুরুর সঙ্গে অমিল বাড়াতে বাড়াতেই এগিয়েছে রংপুরের ইনিংস।

৯৭ রানে অপরাজিত ছিলেন জিমি নিশাম

অবশ্য আজ দিনটাই যেন ছিল বোলারদের মার খাওয়ার! দিনের প্রথম ম্যাচে শুভাগত হোম চৌধুরীর ১ ওভারে ২৬ রান নিয়েছেন কাইল মায়ার্স। পরের ম্যাচে মুশফিকের ১ ওভারে ২৮ রান নিয়েছেন নিশাম। দুটিই এবারের বিপিএলে ১ ওভারে সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় দখল করেছে শীর্ষ দুই স্থান। রংপুরের বোলারদের মধ্যে ঝড়টা বেশি গেছে হাসান মাহমুদের ওপর দিয়ে। ২ ওভারে ৩২ রান দিয়েছেন এই পেসার।

খেলায় শেষ পর্যন্ত ফলাফলটাই বড়, এলিমেনেটর বা কোয়ালিফায়ারের মতো ম্যাচে তো সেটা আরও বেশি। নিশামের ধুন্ধুমার ইনিংসটাকেও তাই ম্যাচ শেষে দূর অতীত মনে হলো। এ ম্যাচেও ফর্ম ধরে রাখা লিটন, তাওহিদের চোখজুড়ানো শটগুলোই তখন বেশি জ্বলজ্বলে।

একই দিনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। প্রথমে এলিমিনেটর, পরে কোয়ালিফায়ার। ছুটির দিনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে এক টিকিটে দুই ম্যাচ দেখতে উপচে পড়া দর্শক। সরকারি হিসাবে দর্শকসংখ্যাটা ২৫৫৮৬, এবারের বিপিএলেই যেটা গ্যালারিতে সর্বোচ্চ উপস্থিতি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অনেক দিন এত দর্শক দেখেনি শেরেবাংলা স্টেডিয়াম।

৪ ওভারে মাত্র ১১ রানে ১ উইকেট নেন কুমিল্লার সুনীল নারাইন। উইকেট নেওয়ার পর উদ্‌যাপন

মাঠের ক্রিকেটটা আনন্দদায়ী হলেও এমন দিনেই কিনা বিপিএল মুড়ে থাকল একটা বিতর্কের চাদরে! এক দিন আগে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বিপিএলের আবহে রীতিমতো চাঞ্চল্য নিয়ে এসেছেন। সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহের বলা ‘সার্কাস’ শব্দটা ছিল মূলত বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে গড়ে ওঠা একটা সংস্কৃতি নিয়ে। ক্রিকেটাররা আজ এই দেশে খেলছেন তো কালই ওই দেশে গিয়ে মাঠে নেমে পড়ছেন। সকালে বিমান থেকে নেমে বিকেলেই ম্যাচে। হাথুরুসিংহের কাছে মূলত এটাকেই মনে হয়েছে ‘সার্কাস’, যে মনোভাবের সঙ্গে সহমত হবেন অনেকেই।

‘সার্কাস’ শব্দটা হয়তো সরাসরি বিপিএলের উদ্দেশে বলেননি হাথুরুসিংহে, তবে এমন বোমা ফাটলে তার কিছু স্প্লিন্টার তো লক্ষ্যবস্তুর পারিপার্শ্বিকতাকে আঘাত করবেই। বিপিএলও সে কারণে কিছুটা আক্রান্ত। তবে প্রায় শেষ দৃশ্যে এসে যে মিরপুরের উইকেটেও টুর্নামেন্টটা দর্শকপূর্ণ গ্যালারিকে বিনোদিত করতে পারছে, সেটাই–বা কম কী!