মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে বাঁহাতি স্পিনার ম্যাথু হামফ্রিসকে স্পট বোলিং অনুশীলন করাচ্ছিলেন আয়ারল্যান্ডের স্পিন বোলিং কোচ নাথান হরিজ। বলটা যে লেংথে ফেলার কথা হামফ্রিসের, পড়ল তার বেশ আগে। সেটি দেখে হেসে উঠলেন দুজনই। একটু পর অবশ্য লেংথটা ঠিকঠাক হওয়ায় হরিজের হাততালিও পেলেন তরুণ আইরিশ স্পিনার।
এমনিতে লাল বলের বোলিং হামফ্রিসের কাছে নতুন মনে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এর আগে যে কখনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচই খেলেননি এই বাঁহাতি স্পিনার! শুধু হামফ্রিস নন, আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া মিরপুর টেস্টের জন্য আয়ারল্যান্ডের ১৫ সদস্যের দলে আরও ২ জন আছেন প্রথম শ্রেণির অভিষেকেরই অপেক্ষায়।
আজ সংবাদ সম্মেলনে এসে এমন তথ্য দিতে গিয়ে আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নি নিজেও যেন একটু অবাকই হয়ে গেলেন, ‘অনন্য এক ঘটনাই। আমাদের এমন খেলোয়াড় আছে, যাদের প্রথম শ্রেণির অভিষেক হতে পারে কাল। এর আগে এ রকম হয়েছে, এমন কারও কথা মনে করতে পারি না আমি।’
টেস্টেই প্রথম শ্রেণির অভিষেকের ঘটনা অবশ্য একেবারেই নতুন নয়, এর আগে এমন হয়েছে ১৭ বার। সর্বশেষ আফগানিস্তানের মুজিব উর রেহমানের এ অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২০১৮ সালে। তার আগের ঘটনাটি বাংলাদেশি এক খেলোয়াড়েরই—২০০৪-০৫ মৌসুমে পেসার নাজমুল ইসলাম প্রথম শ্রেণিতেই টেস্ট অভিষেক করেছিলেন।
নাজমুলের আগে মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্ষেত্রেও হয়েছিল এমন, সেটি ২০০১ সালে।
প্রথম শ্রেণির বাইরেও আয়ারল্যান্ডের অন্তত পাঁচজনের টেস্ট অভিষেক হবে আগামীকাল। সাধারণত টেস্টের আগে মাঠেই অভিষেক ক্যাপ তুলে দেওয়া হয় ছোট একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, তবে আয়ারল্যান্ড সেটি করে ফেলতে চায় আগেভাগেই। কেন, সেটির ব্যাখ্যা বলবার্নি মজা করে দিলেন এভাবে, ‘সকালে করলে বেশিই সময় লেগে যাবে!’
২০১৮ সালে প্রথম টেস্ট খেললেও আয়ারল্যান্ডের যেন আরেকবার অভিষেক হচ্ছে এ সংস্করণে। বলবার্নি যেমন বললেন, ‘সম্প্রতি সময়ে তো এতজনের একসঙ্গে টেস্ট অভিষেক হয়নি, নতুন টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্ষেত্রেই হয়। এ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে এমন হয়ে থাকবে।’
আপাতত টেস্ট খেলতে খেলতেই শেখার কথা বলছেন তাই বলবার্নি, ‘আমার মনে হয়, টিকে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেরই প্রথম শ্রেণিতে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। পাঁচ দিনের টেস্ট একেবারেই আলাদা। আমাদের অনেকেই সাদা বলের ক্রিকেট খেলেই বেড়ে উঠেছে। যতক্ষণ পারা যায় ব্যাটিং করতে ব্যাটারকে থিতু হতে হবে, বোলারদের অনেক ডিসিপ্লিনড হতে হবে। এটিই বড় চ্যালেঞ্জ। গরম বলে কন্ডিশনেরও ভূমিকা থাকবে তাতে। ছেলেদের আসলে কাজ করতে করতেই শিখতে হবে।’
তবে সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা রোমাঞ্চকর হবে বলেই আশা তাঁর, ‘বাংলাদেশ চতুর্থ দেশ হতে যাচ্ছে, যাদের বিপক্ষে টেস্ট খেলব। এটা তাই ইতিহাসে থাকবে। তাদের সত্যিই কিছু ভালো খেলোয়াড় আছে, টেস্ট বিশেষজ্ঞও এসেছে দলে। তাদের পেসার ও স্পিনারদের বুঝেছি আমরা, জানি কী প্রত্যাশা করা যায়। টেস্ট ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জটাই আলাদা। তবে রোমাঞ্চটা সব ছাপিয়ে যাচ্ছে। আপনি সেরা দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে চাইবেন আর বাংলাদেশ খুবই ভালো একটা দল।’