হাসতে ভুলে গিয়েছিল কিংস্টনের আকাশ। প্রায় সপ্তাহখানেক মুখ গোমড়া করে থাকার পর সেই আকাশ আজ প্রাণ খুলেই হেসেছে, উপহার দিয়েছে রোদে ঝলমল একটা দিন। কিন্তু এমন দিনের শেষেও মুখে শুষ্ক হাসির বেশি কিছু ছিল না বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের।
মেঘ সরিয়ে আকাশ হেসে উঠলেও আউটফিল্ডের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে ছিল। ভেজা সেই আউটফিল্ড শুকিয়ে খেলার উপযোগী হতে লাগল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এতটা সময় অপেক্ষা করতে কারই–বা ভালো লাগে। পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া কিংস্টন টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা মনের মতো হয়নি। আর তিন তিনটি ক্যাচ ছাড়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাই–বা মনখুলে হাসেন কীভাবে!
টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া বাংলাদেশ দিনটা শেষ করেছে ৩০ ওভারে ২ উইকেটে ৬৯ রান তুলে। জাকির হাসানের জায়গায় দলে ফিরেই ফিফটি পেয়ে গেছেন সাদমান ইসলাম। বাংলাদেশ ওপেনার প্রথম দিনটা শেষ করেছেন ৫০ রানে অপরাজিত থেকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন টেস্ট খেলে সাদমানের এটি তৃতীয় ফিফটি।
৫৯ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাঁর সঙ্গী শাহাদাত হোসেন দিন শেষে অপরাজিত ১২ রানে। ক্যারিবীয়রা যে তিনটি ক্যাচ ছেড়েছেন, তিনটিই এই দুজনের। এক সাদমানের ক্যাচই পড়েছে দুবার, শাহাদাত জীবন পেয়েছেন একবার।
প্রথমবার যখন ক্যাচ পড়ল, সাদমানের রান ১৫। আলজারি জোসেফের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলেও এই বাঁহাতি বেঁচে যান অ্যালিক অ্যাথানেজের সৌজন্যে। অ্যাথানেজ ক্যাচটি নিতে পারলে ২৫/৩ হয়ে যেত বাংলাদেশের স্কোর।
ওই ৩ উইকেটেই বাংলাদেশের রানটা যখন দ্বিগুণ হলো, সাদমানের জীবন পাওয়ার সংখ্যাও দ্বিগুণ হলো। মিডিয়াম পেসার জাস্টিন গ্রিভসের বলে এবার শর্ট কাভারে ক্যাচ তুললেন ৩৫ রানে দাঁড়ানো সাদমান। ক্যাচটি ছাড়লেন টানা ৮৬তম টেস্ট খেলতে নেমে স্যার গারফিল্ড সোবার্সের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান রেকর্ড ভাঙা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেট।
বাংলাদেশের স্কোরে আরও ২ রান যোগ হতেই ক্যাচ ছাড়ার সংখ্যাটা ৩ হয়ে গেল। এবার স্লিপে যৌথ প্রযোজনায় শাহাদাতের ক্যাচ ছাড়লেন অ্যাথানেজ ও কাভেম হজ। শাহাদাতের রান তখন ৮।
এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দুবার ক্যাচ তুলেছেন, আর দুবারই তা গ্লাভসবন্দী করেছেন উইকেটকিপার জশুয়া দা সিলভা। দুবারই বোলারের নাম কেমার রোচ। রোচের দারুণ দুটি বল মাহমুদুল হাসান ও মুমিনুল হকের ব্যাটে চুমো দিয়ে আশ্রয় নেয় দা সিলভার গ্লাভসে। মাহমুদুল ৩ রান করলেও মুমিনুল ফিরেছেন কোনো রান না করেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৭ ম্যাচের ১৩ ইনিংসে এ নিয়ে চতুর্থবার ‘ডাক’ পেলেন মুমিনুল। কিংস্টনে তাঁর এ নিয়ে তিন ইনিংসে দ্বিতীয়বার হাঁস শিকার।
মুমিনুলকে ফিরিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোচ। এই কীর্তি চতুর্থ হলেও পেসারদের মধ্যেই রোচই প্রথম। প্রথম তিনজন মুত্তিয়া মুরালিধরন (৮৯), ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (৫১) ও রঙ্গনা হেরাথ (৫০)।
পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর খেলতে নেমে বাংলাদেশ প্রথম উইকেটটি হারায় পঞ্চম ওভারের শেষ বলে। ৮ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ১০ বল পরই ২ রান যোগ হতেই বিদায় মুমিনুলের। দিনের বাকি অংশটা ক্যারিবীয়দের ক্যাচ ছাড়ার ও সাদমানদের তা থেকে ফায়দা নেওয়ার গল্প।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩০ ওভারে ৬৯/২ (মাহমুদুল ৩, সাদমান ৫০*, মুমিনুল ০, শাহাদাত ১২*; রোচ ২/২০)। (প্রথম দিন শেষে)