ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। আজ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় হার মানতে হলো
ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। আজ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় হার মানতে হলো

আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতায় ধবলধোলাই হওয়ার ‘প্রথম’ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের

দিন বদলাল, একাদশে পরিবর্তন এল। আগের ম্যাচ যে উইকেটে খেলা হয়েছিল, বদলাল সেটিও। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শুধু বদলাল না বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের হতশ্রী ছবিটা। বদলাল না তাই ফলটাও। আগের দুই ম্যাচে ৯৭ ও ৯৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর সিরিজের তৃতীয় ও শেষ মেয়েদের ওয়ানডেতে বাংলাদেশ থামে ৮৯ রানেই। অস্ট্রেলিয়া সেটি পেরিয়ে গেছে ৮ উইকেট ও ১৮৯ বল বাকি রেখে।

আগের ম্যাচেই নিশ্চিত হয়েছিল সিরিজ হার। এ ম্যাচটি উপলক্ষ ছিল তাই একটু সান্ত্বনা পাওয়ার। সেটিও হয়নি। দেশের মাটিতে এই প্রথম কোনো ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হলো বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ম্যাচের মতো এবারও প্রথম ইনিংসেই কার্যত নির্ধারিত হয় ম্যাচের ফল। ৯০ রানের লক্ষ্যে দুই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার করেন দুরকমের ব্যাটিং—হিলি ছিলেন আক্রমণাত্মক, লিচফিল্ড অবশ্য ভুগছিলেন। সুলতানার বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ২৭ বলে ১২ রান করা লিচফিল্ড থামলে ভাঙে ৪৩ রানের ওপেনিং জুটি। লিচফিল্ড অবশ্য ৩ রানেই আউট হতে পারতেন, নাহিদার বলে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করেন নিগার। ৩৪ বলে ৩৩ রান করে হিলি এলবিডব্লিউ রাবেয়ার বলে। বেথ মুনি ও এলিস পেরি এরপর বেশি সময় নেননি। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৩৪ বল ৩৯ রানের জুটিতে নিশ্চিত হয় অস্ট্রেলিয়ার একপেশে জয়।

বাংলাদেশের ইনিংসে এভাবেই উদ্‌যাপনে মেতেছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা

এর আগে সিরিজে প্রথমবারের মতো টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ইনিংস টিকেছে মাত্র ২৬.২ ওভার। শেষ উইকেটে গিয়ে মারুফা আক্তার ও সুলতানা খাতুন যোগ করেছেন ২২ বলে ২৬ রান, ইনিংসে সর্বোচ্চ জুটি সেটিই। এ দুজন ছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন শুধু নিগার সুলতানা ও স্বর্ণা আক্তার। আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান স্পিনাররাই নিয়েছিলেন ৯ উইকেট, আজ অবশ্য পেসার-স্পিনাররা মিলেমিশেই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। ৩টি করে নিয়েছেন পেসার কিম গার্থ ও স্পিনার অ্যাশলেই গার্ডনার।

বাংলাদেশের দুই ওপেনার আজ শুরু থেকে ব্যাট চালানোর চেষ্টা করেছিলেন, যদিও সফল হননি। সোবহানা মোস্তারির জায়গায় আজ খেলানো হয় সুমাইয়া আক্তারকে। দ্বিতীয় ওভারেই এলিস পেরিকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়ে ওয়ানডে অভিষেকে শূন্যতে আউট হওয়া অষ্টম বাংলাদেশি ব্যাটার হয়ে যান তিনি।

কিম গার্থের বলে আউটসাইড-এজে চার পেয়েছিলেন ফারজানা, আউটও হন তাঁর বলেই। স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ফিবি লিচফিল্ড। মুর্শিদা খাতুন নেমে পেরিকে দারুণ স্কয়ার ড্রাইভে চার মেরেছিলেন, কিন্তু তাঁর পরের ওভারে বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কট বিহাইন্ড হন।

গার্থের করা ১১তম ওভারে ৩ বলের মধ্যে থামেন রিতু মনি ও ফাহিমা খাতুন। রিতু ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে লিডিং-এজে ধরা পড়েন শর্ট মিড অফে, ফাহিমা একটু ফুল লেংথের বলে হন কট বিহাইন্ড। যদিও ভারতীয় আম্পায়ার বৃন্দা রাতির সিদ্ধান্তে খুব একটা সন্তুষ্ট মনে হয়নি ফাহিমাকে।

উইকেটে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারই বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি

৩২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশকে আবারও চোখ রাঙাচ্ছিল নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর। স্বর্ণা আক্তারকে নিয়ে জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা অবশ্য একটু ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে অসময়েই থামতে হয় তাঁকে, আগের ম্যাচের সেরা স্পিনার সোফি মলিনিউর বলে কট বিহাইন্ড হন ৩৯ বলে ১৬ রান করে। অবশ্য ফাহিমার মতো তাঁকেও ঠিক সন্তুষ্ট মনে হয়নি আম্পায়ার তানভীর আহমেদের সিদ্ধান্তে।

রাবেয়া খান এলবিডব্লু অ্যাশলেই গার্ডনারকে সুইপ করতে গিয়ে, ১ বল আগে অমন শটেই একটা চার মেরেছিলেন। নাহিদা চড়াও হয়েছিলেন মলিনিউর ওপর, বল মিস করে হন স্টাম্পড। শর্ট লেগে ক্যাচ তুলে গার্ডনারের দ্বিতীয় শিকার স্বর্ণা। মারুফা ও সুলতানা এরপর স্বীকৃত ব্যাটারদের একটু শিক্ষা দিয়েছেন। গার্ডনারের বলে সুলতানা কাভারে ক্যাচ তোলায় ভাঙে মারুফার সঙ্গে তাঁর শেষ উইকেট জুটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ নারী দল: ২৬.২ ওভারে ৮৯ (নিগার ১৬, মারুফা ১৫, সুলতানা ১০; গার্থ ৩/১১, গার্ডনার ৩/২৫, পেরি ২/১৭, মলিনিউ ২/২৩)

অস্ট্রেলিয়া নারী দল: ১৮.৩ ওভারে ৯৩/২ (হিলি ৩৩, পেরি ২৭*, মুনি ২১; রাবেয়া ১/২১, সুলতানা ১/৩৫)

ফল: অস্ট্রেলিয়া নারী দল ৮ উইকেটে জয়ী