নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচে জয়ের পর বিশ্বকাপে রোমাঞ্চ জমিয়ে তুলেছিল পাকিস্তান। সেই রোমাঞ্চ আরও বাড়ত যদি পরশু শ্রীলঙ্কার কাছে নিউজিল্যান্ড হেরে যেত। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হলেও কিছুটা সম্ভাবনা থাকত পাকিস্তানের। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ১৭১ রানে অলআউট করে ২৩.২ ওভারে লক্ষ্য টপকে যায় কিউইরা। লঙ্কানদের এমন ভরাডুবির পর পাকিস্তানের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের আগেই বিদায় এখন প্রায় নিশ্চিত।
যেটুকু সম্ভাবনা আছে, সেটা শুধুই কাগজ–কলম ও আনুষ্ঠানিকতার। পাকিস্তানের সমর্থক এবং সাবেক ক্রিকেটাররাও দলের বিদায় নিশ্চিত ধরে নিয়েছেন। সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম মজা করে বলেছেন, ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে তালা লাগিয়ে তাদের টাইমড আউট করেই শুধু সেমিতে যেতে পারে পাকিস্তান।
কিন্তু পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম এখনো ভাবছেন অবসম্ভবকে সম্ভব করার কথা! এমনকি প্রায় অসম্ভব রানরেটের হিসাব মেলানোর অঙ্কও কষে রেখেছেন বাবর। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সেমিফাইনালে যাওয়ার লক্ষ্যে নিজেদের পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটা নিয়েই কথা বলেছেন বাবর।
২০২৩ বিশ্বকাপে বর্তমানে পয়েন্ট তালিকার ৫ নম্বরে আছে পাকিস্তান। ৮ ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের পয়েন্ট এখন ৮। অন্যদিকে ৯ ম্যাচ খেলা নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট ১০। আজ ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে পাকিস্তানের পয়েন্টও হবে ১০। তবে রানরেটে পাকিস্তান পিছিয়ে আছে বিশাল ব্যবধানে। যে কারণে নিউজিল্যান্ডকে টপকে সেমিতে যেতে হলে পাকিস্তানকে জিততে হবে ২৮৭ রানে। আর রান তাড়ায় লক্ষ্য ছুঁতে হবে ২.৪ ওভারের মধ্যে।
অবিশ্বাস্য এই লক্ষ্য কীভাবে অর্জন করতে চান জানাতে গিয়ে বাবর বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নেট রানরেট নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করেছি। যা–ই হোক, আমরা প্রথম বল থেকেই মারতে যাব না। প্রথম ১০ ওভার কীভাবে খেলব এবং তারপর আমরা কী করব, সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করেছি। যদি ফখর ২০–৩০ ওভার টিকে যায়, আমাদের যা লক্ষ্য তা অর্জন করতে পারব।’
যেখানে সবাই পাকিস্তানের বিদায় ধরে নিয়েছে, সেখানে বাবর নিজেদের স্বপ্নকে এখনই ভাঙতে চান না। পাকিস্তানের সম্ভাব্য বিদায় নিয়ে জানতে চাইলে বাবর জানান, ‘আমরা কেউ জানি না পরবর্তীতে কী হবে, এখনো আমাদের একটি ম্যাচ বাকি আছে।’
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের জন্য অনেকেই দুষেছেন বাবরের অধিনায়কত্বকে। অনেকের ধারণা, অধিনায়কত্ব বাবরের ওপর বাড়তি চাপও তৈরি করেছে। যদিও বাবর তা মানতে নারাজ, ‘আমি তিন বছর ধরে পাকিস্তানের অধিনায়ক। আমি কখনোই অধিনায়কত্বের চাপ অনুভব করিনি। নেতৃত্বের কোনো চাপ আমার ওপর নেই। লোকে আমার অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা বলে। কিন্তু আমি বিশ্বকাপে গড়পড়তা মানের নিচে পারফরম্যান্স করিনি।’
বিশ্বকাপের পর নিজের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবর আরও বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ শেষ করে পাকিস্তান যাওয়ার পর পিসিবি আমার অধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনা করবে। এই মুহূর্তে আমি বাকি থাকা লিগ ম্যাচ নিয়েই ভাবছি।’
বিশ্বকাপে বাবরের মন্থর ব্যাটিং নিয়েও সমালোচনা হয়েছে অনেক। স্ট্রাইক রেট নিয়েও করা হয়েছে কটাক্ষ। যদিও বাবর সে দায় চাপিয়েছেন পরিস্থিতির ওপর, ‘পাকিস্তান ভারতে অনেক ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছে। আমি কখনো নিজের ফিফটি নিয়ে ভাবিনি। অনেক মানুষ আমার সমালোচনা করে বলেছে আমি মন্থর স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করি। কিন্তু আমার কাছে পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব সময় দলের জন্য খেলেছি।’
এরপর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে না পারা নিয়ে বাবর বলেছেন, ‘আপনি বোলিং কিংবা ব্যাটিংকে দোষ দিতে পারবেন না। আমরা সামগ্রিকভাবে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদেরকে নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’