সাকিব আল হাসান রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট খেলেছেন হত্যা মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে। এমনকি তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিসিবি বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে, এমন সংবাদও এসেছে। তবে সাকিবকে সেসব সেভাবে স্পর্শ করেছে বলে অন্তত মাঠের খেলায় মনে হয়নি। সাকিবের এমন পারফরম্যান্সের রহস্য কী, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন ম্যাচ শেষে ব্যাখ্যা করেছেন সেটিই।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটে পাওয়া জয়ের ম্যাচের শেষ দিনে সাকিব নেন ৩ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে সাকিবের বোলিং-ই কার্যত দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে ধসিয়ে দিয়েছে। ১৪৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশকে ৩০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে পাকিস্তান। যেটি কোনো উইকেট না হারিয়েই ছুঁয়ে ফেলে নাজমুলের দল।
সাকিবের পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল বললেন, ‘যতটুকু বুঝি, (সাকিব) যখন দেশের হয়ে নামেন, তখন অনেক নিবেদিত একজন মানুষ তিনি। দলের জয়ের জন্য যা যা করা দরকার—ব্যক্তিগত জীবন একদিকে সরিয়ে রেখে দলের জন্য কীভাবে ভালো করতে পারেন, সেদিকে ফোকাস করা, দলের জুনিয়র একজনকে আলাদা করে সহায়তা করা—এগুলো আলাদা করে করতে পারেন।’
সাম্প্রতিক সময়ে সাকিবের ব্যাপারে বিসিবির অবস্থান একেবারে পরিষ্কার না করলেও প্রথম টেস্টের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ। ফলে সাকিব পরের টেস্টে দলে থাকবেন কি না, সে প্রশ্নও উঠে যায়। তবে নাজমুল যা বলেছেন, তাতে টিম ম্যানেজমেন্টের সাকিবকে ঘিরে পরিকল্পনা আগের মতোই। নাজমুলের কথায়, ‘যেমনটি বললাম, খুবই নিবেদিত একজন। এ রকম অবস্থায় থাকার পরও এমন পারফরম্যান্স করা, দলে ইনপুট দেওয়া, বিশেষ করে বোলিংয়ে। অসাধারণ। আমার মনে হয় তার কাছ থেকে এমন আশা করি। সামনের ম্যাচে আরও বেশি আশা করছি।’
রাওয়ালপিন্ডিতে জয়ের পর সাকিবের পাশাপাশি নাজমুল কৃতিত্ব দিয়েছেন দলের সবাইকেই, ‘আমি কোনো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সকে কৃতিত্ব দিতে চাই না। আমরা জানি মুশি (মুশফিকুর রহিম) কতটা অভিজ্ঞ। সঠিক কাজটা উনি প্রতিদিন করে থাকেন। তিনি তাঁর কাজটা করেছেন। আর আমরা সবাই প্রত্যাশা করি, তিনি এমন কিছু প্রতি ম্যাচেই করবেন। তবে কৃতিত্ব যদি দিতে হয়, সব ব্যাটসম্যানদের দিতে হবে। বিশেষ করে ওপেনাররা, এই দুর্দান্ত পেস আক্রমণের বিপক্ষে ওরা যেভাবে নতুন বলটা সামলেছে, সেটা দারুণ ছিল।’
ঐতিহাসিক এ জয়কে দলীয় প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘পুরোটা দলীয় প্রচেষ্টা। মুশফিক ভাইয়ের ইনিংসটা অসাধারণ ছিল। আমাদের এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে দেখলে দেখবেন ব্যাটিং–বোলিং, এমনকি ফিল্ডিং দেখলেও দেখবেন দলীয় প্রচেষ্টা। অধিনায়ক হিসেবে সব সময় আমার এটিই চাওয়া, যেন দল হিসেবে খেলি। হয়তো সব সময় ফল ভালো হবে না। এ ম্যাচে প্রতিটি দিকই কাভার করেছি আমরা। খুবই ভালো লাগছে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে এ টেস্ট জয়ের পর ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার ছয়ে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এ লিগ প্রসঙ্গে নাজমুল বলেছেন, ‘দেশের বাইরে খুব একটা জিতি না। নিউজিল্যান্ডের পর এখানে জিতলাম। এ বছর যখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরিকল্পনা করেছিলাম—বাইরের ম্যাচগুলো কীভাবে জিততে পারি বা ড্র করতে পারি; দেশে কীভাবে জিততে পারি—তেমন পরিকল্পনা ছিল। আল্লাহর রহমতে ভালো একটা ফল এসেছে। এ জয়ের মাধ্যমে আশা করি খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে। আমাদের দর্শকদের মধ্যেও বাড়বে। আশা থাকবে সামনের ম্যাচগুলোতে এবং সিরিজগুলোতে দিন দিন আরও কত ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি।’