টি-টোয়েন্টিতে দেশের সেরা দুই ক্রিকেটার কে? এই প্রশ্নে চোখ বুঝেই সবাই সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানের নাম বলবেন, সেটাই স্বাভাবিক। আইপিএলসহ বিশ্বের নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তো এ দুজনেরই বেশি বিচরণ। এই সংস্করণে বাংলাদেশের অনেক রেকর্ডই সাকিব-মোস্তাফিজের দখলে। তবে একটা জায়গায় সাকিব আছেন শীর্ষে আর মোস্তাফিজ একেবারে তলানিতে।
বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ১১ বার ম্যাচসেরা হয়েছেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। মোস্তাফিজ কতবার? একবারও না। অবাক করা হলেও সত্য, টি-টোয়েন্টিতে দেশসেরা পেসার মোস্তাফিজ কখনো ম্যাচসেরার পুরস্কারই জেতেননি। এই সংস্করণে তিনবার ৪ উইকেট আর একবার ৫ উইকেট পেলেও ম্যাচসেরা হওয়া হয়নি তাঁর।
টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের প্রথমবার ম্যাচসেরা হতেও অন্য অনেক ক্রিকেটারের চেয়ে বেশি ম্যাচ লেগেছে। টি-টোয়েন্টিতে সাকিব প্রথম ম্যাচসেরা হন ২৬তম ম্যাচে। ২০১৩ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৮ বলে ৪০ রান ও ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্যারিয়ার–সেরা ৮৪ রানের ইনিংস খেলেও ম্যাচসেরা হতে পারেননি।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টিতেই ম্যাচসেরা হন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৬ বলে ৩৬ রান ও ২৯ রানে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন মাশরাফি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনজন—নাজিমউদ্দিন, জুনায়েদ সিদ্দিক ও ইলিয়াস সানি।
২০০৬ সালে নাজিমউদ্দিন ৩৭ বলে ৪৩ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন কেনিয়ার বিপক্ষে। পরের বছর জুনায়েদ ৪৯ বলে ৭১ রান করে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেরা ক্রিকেটার হন। সেই ম্যাচে অবশ্য বাংলাদেশের জেতা হয়নি। আর ইলিয়াস ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় বলা তামিম ইকবালের প্রথমবার ম্যাচসেরা হতে খেলতে হয়েছিল ৪৭ ম্যাচ। ২০১৬ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫৮ বলে ৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। তামিম এরপর আরও দুবার ম্যাচসেরা হয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ ৪৩তম ম্যাচে এসে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ম্যাচসেরা হন। সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
ক্যারিয়ারে আরও চারবার ম্যাচসেরা হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সাকিবের পর তিনিই সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরা (৫) হয়েছেন। সেদিক থেকে মুশফিকুর রহিমের আরও কম ম্যাচ লেগেছে। মুশফিকুর রহিম ক্যারিয়ারের ১৬তম টি-টোয়েন্টিতে এসে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ম্যাচে অপরাজিত ২৬ বলে ৪১ রান করে তিনি ম্যাচসেরা হন। টি-টোয়েন্টিতে ওই ম্যাচেই প্রথম অধিনায়কত্ব করেন মুশফিক।
পেসার তাসকিন আহমেদ ম্যাচসেরা হন ৪২তম ম্যাচে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাসকিন আরও একবার ম্যাচসেরা হন।
লিটন দাসের প্রথমবার সেরা খেলোয়াড় হতে লেগেছে ১৫ ম্যাচ। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩২ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলে সেরার স্বাদ পান লিটন। নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া নাজমুল হোসেন প্রথমবার ম্যাচসেরা হন গত মার্চের ইংল্যান্ড সিরিজে। সেটি তাঁর ক্যারিয়ারের ১৮তম ম্যাচ ছিল।
নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ১৬তম ম্যাচে এসে ম্যাচসেরা হন। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৩৭ বলে ৪৬ রান করে ম্যাচসেরার ট্রফি হাতে তোলেন তিনি। মোহাম্মদ আশরাফুল ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর ম্যাচে ২৭ বলে ৬১ করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। বাংলাদেশের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচসেরা হন মেহেদী হাসান। সেটি তাঁর ক্যারিয়ারের ৩৯তম ম্যাচ।