সিলেট টেস্ট শুরুর আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হোসেনের কথাটা বিশেষভাবেই কানে লেগেছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে নামার আগে বাংলাদেশের একজন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কিনা বলছেন, সিরিজ জিততেই খেলবেন তাঁরা!
পেছনে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ের স্মৃতি আছে। তবে নাজমুল যে প্রায় দুই বছর আগের ওই ঐতিহাসিক জয় থেকে প্রেরণা খুঁজে কথাটা বলেননি, সেটি নিশ্চিত। কিন্তু নিকট অতীতে যদি তাকান, সেখানেও তো আশাজাগানিয়া কিছু নেই!
ঘরের মাঠে নিজেদের সর্বশেষ দুটি টেস্টে বাংলাদেশ জিতলেও সেগুলো ছিল আয়ারল্যান্ড আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সেই আত্মবিশ্বাসও নিশ্চয়ই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। বরং বিশ্বকাপ–ব্যর্থতা এবং এর আগে–পরে নানা বিতর্কে জর্জর বাংলাদেশ দলের মনোযোগটা এই সিরিজের আগে কিছুটা বিঘ্নিতই ছিল। তারপরও ভারত বিশ্বকাপের পর বিশ্ব ক্রিকেটেরই প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের কথা নাজমুল সাহস করে কীভাবে বললেন, যার অর্ধেক আবার সিলেট টেস্ট জিতেই বাস্তবায়ন হয়ে গেল!
আজ পঞ্চম দিন সকালে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে সেটাই জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে। তিনি কি শুধু দলকে অনুপ্রাণিত করতেই বলেছিলেন কথাটা, নাকি সত্যই কিছু ভেবে বা কোনো হিসাব মিলিয়ে বলেছিলেন?
নাজমুলের উত্তর খুবই স্পষ্ট, ‘আমি খুবই পরিষ্কার ছিলাম। আমি কাউকে অনুপ্রাণিত করার জন্য কথাটা বলিনি। আমি আসলেই বোঝাতে চেয়েছিলাম যে আমরা এই সিরিজটা জিততে পারি এবং জেতার জন্যই খেলব।’
আর এই বিশ্বাস নাকি তাঁর একার মধ্যে ছিল না, পুরো দলই ছিল আত্মবিশ্বাসী, ‘এই বিশ্বাসটা শুধু আমার মধ্যে ছিল, তা নয়। দলের প্রতিটা খেলোয়াড়ের মধ্যে ছিল। আমি যখন দেখেছি প্রত্যেক খেলোয়াড় ওভাবে চিন্তা করছে, তখনই আমার মধ্যে বিশ্বাসটা আসে। আমি যেটা চিন্তা করেছি, দলের সবাই সেটাই চিন্তা করছে। এখান থেকে জেতা যে সম্ভব, এই বিশ্বাসটা আমরা তখনই করেছি।’
নাজমুল এবং তাঁর দলের নিজেদের ওপর এমন বিশ্বাস রাখার আরেকটা কারণ, খেলাটা হচ্ছে ঘরের মাঠে, ‘আমাদের কন্ডিশনে খেলা হচ্ছে। আমাদের যে বোলিং আক্রমণ, ব্যাটিংয়ে যে শক্তি আছে; ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই আলাদা আলদা করে যেমন শক্তিমত্তা ছিল, আমার কাছে মনে হয়েছে, সিরিজটা জেতা সম্ভব।’
সেটার জন্য অবশ্য ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু মিরপুর টেস্টে হারা যাবে না। নাজমুলও সেটি মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘একটা ম্যাচ বাকি। অর্ধেক কাজ হয়েছে। এমন নয় যে পরের ম্যাচে যাব আর জিতে যাব, এ রকম হবে না। আবারও পাঁচ দিন কষ্ট করা লাগবে। চেষ্টা করব পরের ম্যাচে কীভাবে আরও উন্নতি করে জিততে পারি।’
সিলেটের ব্যাটিং উইকেটেও স্পিনারদেরই রাজত্ব দেখা গেছে। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছেন ১০ উইকেট। প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক নিয়েছেন তিনটি, দ্বিতীয় ইনিংসে অফ স্পিনার নাঈম হাসান দুটি। এর বাইরে নাঈম, মিরাজ দুজনই প্রথম ইনিংসে একটি করে উইকেট নিয়েছেন। ওদিকে নিউজিল্যান্ডের এজাজ প্যাটেল, গ্লেন ফিলিপসরাও সাফল্য পেয়েছেন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেটে।
মিরপুরের উইকেট সিলেটের তুলনায় আরও বেশি স্পিন–সহায়ক হওয়ার কথা। স্পিনারদের লড়াইটাও সেখানে জমে ওঠার কথা আরও বেশি। তবে নাজমুল আর তাঁর দলের আত্মবিশ্বাস ভালো কিছুর আশাই দেখাচ্ছে।