মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম তখনো ঘন কুয়াশায় ঢাকা। দুপুর হয়ে গেল, কিন্তু সূর্যের দেখা নেই। মৃদু বাতাস শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছিল কয়েক গুণ। বিপিএলে দিনটা যে ফাস্ট বোলারদের হতে যাচ্ছে, সেটি তখনই বোঝা যাচ্ছিল। আর এমন দিনে যদি সঙ্গে থাকে মিরপুরের উইকেট, তাহলে তো কথাই নেই। সিলেট স্ট্রাইকার্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটা এগোল সেভাবেই।
সিলেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তো ছিলেনই। সঙ্গে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা স্ট্রাইকার্সের একাদশে ছিলেন। সুইংয়ের জন্য আদর্শ কন্ডিশন ও উইকেটের অসম বাউন্স যেভাবে পেসারদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিল, তাতে মাশরাফি-আমিরদের দাপটটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তরুণ পেসার রেজাউর রহমান নিজ দলের পেস তারকাদের ভিড়েও ছিলেন আলোকিত।
নিজেকে চেনানোর মঞ্চটা তিনি কাজে লাগিয়েছেন ক্যারিয়ার–সেরা টি-টোয়েন্টি বোলিংয়ে ৪ ওভার, ১৪ রানে ৪ উইকেট। ম্যাচসেরার পুরস্কারের জন্য যা ছিল যথেষ্ট। রেজাউরের উইকেটগুলো এসেছে মাঝের ওভারে। যখন কন্ডিশন কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেও সম্ভব নয়। ৬ ওভার পুরোনো বল তো আর সুইং করার কথা নয়। রেজাউর অবশ্য সুইং করানোর চেষ্টা করেননি। গতি ও বাউন্স দিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙেছেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে এই ২৩ বছর বয়সী তরুণের সুনাম আছে ‘অব দ্য পিচ কুইকার’ বোলার হিসেবে। উইকেটে পড়ে গতির সঞ্চার হয় রেজাউরের বলে। আজ সে গতির প্রদর্শনী দেখলেন মিরপুরের ছুটির দিনের মাঠভর্তি দর্শক। মিড অফ দাঁড়িয়ে তরুণ পেসারকে দাপট দেখাতে দেখেছেন মাশরাফিও। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে এসেও জানালেন সে মুগ্ধতার কথা, ‘রাজা (রেজাউর) একদমই অন্য রকম। সে দারুণ গতিতে বল করছে। ঠিক জায়গায়ও করেছে।’
ভালো জায়গার বোলিংয়ের দক্ষতাটা এক বছর ধরে ঝালিয়ে নিচ্ছেন রেজাউর। ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে ডাক পান সিলেটের এই পেসার। এর পর থেকেই জাতীয় দলের প্রতিটি টেস্ট সিরিজে সঙ্গে ছিলেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা রেজাউর।
আজ বিপিএলের নবম আসরের প্রথম ম্যাচেই ম্যাচসেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা রেজাউর বলেন, ‘আমি টেস্ট দলের সঙ্গে ছিলাম। তবে লাল বল ও সাদা বলে তেমন পার্থক্য দেখি না। সাদা বলে কিছু বৈচিত্র্য যোগ করা লাগে, টেস্টে সেটা লাগে না। এ ছাড়া আমি ব্যতিক্রম কিছু করিনি। আমি আমার প্রক্রিয়ায় ছিলাম। ঠিক জায়গায় বল করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।’
রেজাউরের পছন্দের বোলার রুবেল হোসেন। উচ্চতায় ও বোলিংয়ে দুজনের অনেক মিল। দুজনই এবারের বিপিএলে খেলছেন একই দলের হয়ে। তবে আজ রুবেলকে না খেলিয়ে একাদশে রাখা হয় রেজাউরকে। সেই আস্থার প্রতিদান তো দারুণভাবেই দিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের এই পেসার।