১. বল হাতে বোলার দৌড়ে গেলেন বোলিং ক্রিজে, ব্যাটসম্যানের জন্য বল ছুড়ে দিচ্ছেন—ঠিক এমন সময়ে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। চারপাশে অন্ধকার।
২. ঠিক আগের ম্যাচেই কনকাশন বদলি দেখা গেছে। যে কারণে ব্যাটিং করেছেন ১২ জন। একই দলকে কনকাশন বদলি করতে হলো এবারও।
ধারাভাষ্যকারই বললেন, ক্রিকেট মাঠে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের ঘটনা অনেকবার দেখলেও কখনো বোলারের হাত থেকে বল বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে তা ঘটতে দেখেননি। আর কোনো দল টানা দুই ম্যাচে কনকাশনের কারণে ১২ জনকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই এমন দৃষ্টান্তও।
নজিরবিহীন দুটি ঘটনাই ঘটেছে আজ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ড–পাকিস্তান সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে।
তবে বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের সময় আর টানা ১২ জনের ব্যাটিংয়ের ঘটনা নতুন হলেও ম্যাচের ফলে নতুনত্ব কিছু নেই। সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডের মতো এটিতেও হেরেছে পাকিস্তান। নিউজিল্যান্ডের তোলা ৮ উইকেটে ২৬৪ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান অলআউট হয়েছে ২২১ রানে।
বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের ঘটনাটি ম্যাচের শেষ দিকের। ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের তাইয়েব তাহির, বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের জ্যাকব ডাফি। ইনিংসের ৩৯তম ওভারের চতুর্থ বলটি করার জন্য ডাফি পপিং ক্রিজে ঢুকে লাফিয়ে বল ছোড়ার মুহূর্তে মাঠের সব ফ্লাডলাইট নিভে যায়।
ততক্ষণে বল আর ডাফির নিয়ন্ত্রণে নেই। হাত থেকে বল বেরিয়ে যায়। বিপদ বুঝে স্টাম্প ছেড়ে পিছিয়ে যান তাহির। বল কোন পথ দিয়ে আসছে, উইকেটকিপার টেরই পাননি। চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে।
বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের অমন টাইমিংয়ে পুরো স্টেডিয়াম প্রথমে চমকে গেলেও পরে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। ওই সময় ম্যাচের যে পরিস্থিতি, তাতে ম্যাড়মেড়ে ভাবও কিছুটা কেটে যায়। কারণ, ম্যাচটা ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের মুঠোয় চলে গেছে।
আগের রাতে তুমুল বৃষ্টি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু হতে পারেনি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শুরু হওয়া ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে ৪২ ওভারের ম্যাচ নির্ধারণ করা হয়। আগেই সিরিজ জিতে ফেলা নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ব্রেসওয়েল (৫৯) ও ওপেনার রিস মারিউর (৫৮) দুই ফিফটিতে ভর করে তোলে ২৬৪ রান।
তাড়া করতে নামার পর তৃতীয় ওভারেই বড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান। সিঙ্গেল নিতে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের এক ফিল্ডারের থ্রো ইমাম উল হকের হেলমেটে লাগে। চোয়ালে ব্যথা নিয়ে মাঠ ছেড়ে যেতে হয় এই ওপেনারকে। পাকিস্তান তাঁর কনকাশন বদলি হিসেবে নামায় উসমান খানকে।
পুরো সিরিজেই উসমান–ইমাম মাঠে নেমেছেন একে অপরের বদলে। প্রথম ওয়ানডের আগে ইমাম চোটে পড়ায় একাদশে ছিলেন উসমান। ওই ম্যাচে উসমান চোট পেলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলতে নামেন ইমাম। আজ তৃতীয় ওয়ানডেতে ইমামের কনকাশন বদলি হন উসমান।
আগের ম্যাচে হারিস রউফের কনকাশন বদলি নেমে নাসিম শাহ খেলেছিলেন ৪৪ বলে ৫১ রানের ইনিংস। তবে এ যাত্রায় ইমামের বদলি নামা উসমান ১২ রানের বেশি করতে পারেননি।
তিনে নামা বাবর আজম কিছুক্ষণ এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু ৫০ রান করে তিনি ড্যারিল মিচেলের বলে টিম সেইফার্টের ক্যাচে পরিণত হলে আর কেউ হাল ধরতে পারেননি। ১২ জন ব্যাটিং করেও নয়। ৪৩ রানের হারে শেষ হয় পাকিস্তান দলের নিউজিল্যান্ড সফর, যে সফরে ৩–০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারার আগে টি–টোয়েন্টিতে হার ছিল ৪–১ ব্যবধানে।
নিউজিল্যান্ড: ৪২ ওভারে ২৬৪/৮ (ব্রেসওয়েল ৫৯, মারিউ ৫৮, মিচেল ৪৩; আকিফ ৪/৬২, নাসিম ২.৫৪)। পাকিস্তান: ৪০ ওভারে ২২১ (বাবর ৫০, রিজওয়ান ৩৭, শফিক ৩৩; সিয়ার্স ৫/৩৪, ডাফি ২/৪০)। ফল: নিউজিল্যান্ড ৪৩ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাইকেল ব্রেসওয়েল। সিরিজ: নিউজিল্যান্ড ৩–০ ব্যবধানে জয়ী। ম্যান অব দ্য সিরিজ: বেন সিয়ার্স।