শেন ওয়ার্ন ও মুত্তিয়া মুরালিধরন যে টেস্টে ৭০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন, সেই টেস্ট জিতেই মাঠ ছেড়েছিল তাঁদের দল অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা। কিন্তু জেমস অ্যান্ডারসনের ভাগ্যে তা জুটল না। ধর্মশালায় আজ অ্যান্ডারসনের ৭০০ উইকেট ছোঁয়ার দিনেই ভারতের কাছে ইনিংস ও ৬৪ রানে হারল তাঁর দল ইংল্যান্ড।
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ২১৮ রানের জবাবে ভারত আজ অলআউট হয় ৪৭৭ রানে। ২৫৯ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১৯৫ রানে। সফরকারীদের ইনিংস ব্যবধানে হারাতে বড় অবদান নিজের ১০০তম টেস্ট খেলতে নামা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন। টেস্টের এক ইনিংসে এ নিয়ে ৩৬ বার ৫ উইকেট নিলেন এই স্পিনার, যা ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আজ তিনি ছাড়িয়ে গেছেন অনিল কুম্বলেকে (৩৫ বার)। এর পাশাপাশি আরেকটি কীর্তিও গড়েছেন অশ্বিন। মুরালিধরন, ওয়ার্ন ও কুম্বলের পর চতুর্থ বোলার হিসেবে নিজের ১০০তম টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন তিনি।
ভারত বিশাল লিড নেওয়ার পরেই ম্যাচের ফল অনুমান করা গিয়েছিল। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫০ রানের বেশি ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড একবিংশ শতাব্দীতে তো নয়–ই; বিংশ শতাব্দীতেও কোনো টেস্ট জিততে পারেনি। এত ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ইংলিশরা টেস্ট জিতেছিল একবারই; ১৮৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে। ১৩০ বছর আগের কীর্তি ধর্মশালায় ফেরাতে পারেনি ইংল্যান্ড।
৮ উইকেটে ৪৭৩ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করতে নামা ভারত আজ আর ৪ রান যোগ করতেই গুটিয়ে গেছে। কুলদীপকে আউট করে ৭০০তম উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছেছেন অ্যান্ডারসন। বুমরাকে ফিরিয়ে ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ইনিংসে ৫ উইকেট পূর্ণ করেছেন শোয়েব বশির।
দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আসা–যাওয়ায় ব্যস্ত ছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। জ্যাক ক্রলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপ—টপ অর্ডারের তিনজনকেই ফেরান অশ্বিন। তাঁর মতো জনি বেয়ারস্টোরও এটি ১০০তম টেস্ট। তবে নিজের বিশেষ ম্যাচটা রাঙাতে পারেননি বেয়ারস্টো। প্রথম ইনিংসে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১৮ বলে ২৯ রানে আউট হয়েছিলেন, আজও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে গিয়ে ৩১ বলে ব্যক্তিগত ৩৯ রানে ফিরেছেন। দুই ইনিংসেই তাঁর ‘ঘাতক’ কুলদীপ। রুট–বেয়ারস্টোর ৫৬ রানের জুটি ভাঙার পর ইংল্যান্ডকে জোড়া আঘাত দেন অশ্বিন। দুই ‘বেন’ স্টোকস ও ফোকসকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারে ৩৬তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেটের কীর্তি গড়েন।
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সব উইকেট নিয়েছিলেন ভারতের স্পিনাররা। দ্বিতীয় ইনিংসও পুরোপুরি স্পিনারদের হতে যাচ্ছিল। তবে বুমরা তা হতে দেননি। একই ওভারে টম হার্টলি আর মার্ক উডকে ফেরান বুমরা। ভারতের এই তারকা ফাস্ট বোলার দুজনকেই এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন। এরপর বশিরকে বোল্ড করেন জাদেজা।
ইনিংস হার সময়ের ব্যাপার ধরে নিয়ে রুট এরপর নিজের ৩২তম টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য খেলতে থাকেন। কিন্তু তাতেও সফল হতে পারেননি। কুলদীপ তাঁকে আউট করে ভারতকে প্রত্যাশিত জয় এনে দেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন কুলদীপ। ৯ ইনিংসে ৭১২ রান করে সিরিজসেরা হয়েছেন যশস্বী জয়সোয়াল।
ইংল্যান্ড: ২১৮ ও ৪৮.১ ওভারে ১৯৫ (রুট ৮৪, বেয়ারস্টো ৩৯, হার্টলি ২০, পোপ ১৯, বশির ১৩; অশ্বিন ৫/৭৭, বুমরা ২/৩৮, কুলদীপ ২/৪০, জাদেজা ১/২৫)
ভারত: ১২৪.১ ওভারে ৪৭৭ (গিল ১১০, রোহিত ১০৩, পাড়িক্কাল ৬৫, জয়সোয়াল ৫৭, সরফরাজ ৫৬; বশির ৫/১৭৩, অ্যান্ডারসন ২/৬০, হার্টলি ২/১২৬, স্টোকস ১/১৭)
ফল: ভারত ইনিংস ও ৬৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুলদীপ যাদব (ভারত)।
ম্যান অব দ্য সিরিজ: যশস্বী জয়সোয়াল (ভারত)।
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ভারত ৪–১ ব্যবধানে জয়ী।