দিবারাত্রির ম্যাচ, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে একটু পরপর বেজে উঠছিল লাউডস্পিকার। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ বিসিএলের ফাইনাল জমাতে অন্য কিছুর দরকার ছিল না। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটাই যে ছিল যথেষ্ট!
বিসিএল ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টে উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে রোমাঞ্চকর এক ফাইনালই উপভোগ করলেন গ্যালারির শ দুয়েক দর্শক। ম্যাচের শেষ বলে ৩ রানে জিতেছে মাহমুদউল্লাহ-লিটন দাসদের উত্তরাঞ্চল। টুর্নামেন্টে এর আগে সব ম্যাচ জেতা দক্ষিণাঞ্চল হারল ফাইনালে এসেই।
২৪৪ রান তাড়ায় দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই ওঠে ১০০ রান, সে সময় সহজ জয়ের পথেই ছিল দক্ষিণাঞ্চল। এরপর নাটকীয় ধস নামল মেহেদী হাসান মিরাজের দলে, ৪ রানের মধ্যে হারায় ৫ উইকেট, চোট পেয়ে উঠে গেলেন একজন। এরপর আবার ৮৫ রানের জুটি। তবে উত্তরাঞ্চল ম্যাচে ফেরে আবার।
শেষ পর্যন্ত লড়াইটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল নাসির হোসেন বনাম উত্তরাঞ্চলের। শেষ ওভারে ২ উইকেট হাতে রেখে প্রয়োজন ছিল ১০ রান, তবে বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলামের প্রথম বলেই লং অন থেকে ডাবলস নিতে গিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তে রানআউট হন অর্ধশত করা নাসির। শেষ বলে চার মেরেছিলেন কামরুল ইসলাম, তবে তাতে লাভ হয়নি।
রান তাড়ায় শুরুটা অবশ্য ইতিবাচকই হয়েছিল মোহাম্মদ নাঈম ও এনামুল হকের ওপেনিং জুটির। পঞ্চম বলে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে শুরু করেন নাঈম, পরে শফিকুল ইসলামকে মারেন আরেকটি।
ষষ্ঠ ওভারে আকবর আলীর দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ফিরতে হয় তাঁকে। শর্ট ফাইন লেগ থেকে সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়েছিলেন, ছুটে গিয়ে ফিল্ডিং করে সরাসরি থ্রোয়ে ননস্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙেন আকবর।
১৭ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর এনামুল ও জাকিরের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ওঠে ১০০ রান, সেটিও মাত্র ১২.৪ ওভারেই। এনামুল খেলেন দারুণ কিছু শট, কম যাননি জাকিরও। সে সময় কিছু ‘হাফচান্স’ মিস করেন উত্তরাঞ্চলের ফিল্ডাররা।
দ্বিতীয় ব্রেকথ্রুও উত্তরাঞ্চল পায় আরেকটি রানআউটে, এবার এনামুলের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝিতে ফিরতে হয় ৩৯ বলে ৪২ রান করা জাকিরকে। এ বাঁহাতি তাঁর ইনিংসে ৪টি চারের সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কা।
১ বল পর রিপন মণ্ডলের বলে এলবিডব্লু হন নাঈম ইসলাম। টানা ২ উইকেটে কমে আসে রানের গতি, তবে ধস আটকায়নি তাতেও। রকিবুল হাসানের বলে বেশ আলগা আউট হন ৪৮ বলে ৫৯ রান করা এনামুল, দেন ফিরতি ক্যাচ। শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকা এনামুল ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন মাত্র ৩৩ বলে, সৈকত আলীকে পুল করে ছক্কা মেরে। তবে আউট হওয়ার আগে শেষ ১৪ বলে ৫ রানের বেশি করতে পারেননি।
এনামুল আউট হওয়ার ঠিক পরের বলেই অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিস করে যান তৌহিদ হৃদয়, হন স্টাম্পিং। পরের ওভারে এসে মিরাজকেও ফেরান রকিবুল, স্লিপে ডান দিকে ঝুঁকে দারুণ ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। পরের ওভারে নাসিরের শট সরাসরি এসে লাগে ননস্ট্রাইকে থাকা জিয়াউর রহমানের হাতে, শেষ পর্যন্ত উঠেই যেতে হয় তাঁকে।
উত্তরাঞ্চলকে এরপর টানেন নাসির হোসেন ও ৯ নম্বর ব্যাটসম্যান নাসুম আহমেদ। দুজন যোগ করেন ৮৫ রান। সে জুটিতেই ম্যাচ আবার ঝুঁকে পড়ে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে।
তবে বাঁহাতি স্পিনার রকিবুলের স্পেলের শেষ বলে স্লগ করতে গিয়ে ওয়াইড লং অনে ধরা পড়েন নাসুম, ৭০ বলে ৩৮ রান করে। চোট পাওয়া জিয়াউর নেমে খেলেন আরও ৬ বল, তবে সাইফউদ্দিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড হওয়ার আগে রান করতে পারেননি কোনো।
জিয়াউর আউট হওয়ার সময় দক্ষিণাঞ্চলের প্রয়োজন ছিল ২৬ বলে ২৯ রান, তবে তাদের আশা হয়ে ছিলেন নাসির; যদিও দলকে পার করাতে পারেননি তিনিও।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা উত্তরাঞ্চল ৪৫ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট।
লিটন দাস ও শাহাদাত হোসেন এলবিডব্লু হন শরীফুল ইসলামের বলে। সৈকত আলীর শুরুটা ইতিবাচক হয়েছিল, কিন্তু ৩০ বলে ২২ রান করার পর তাঁকে ফিরতে হয় রানআউট হয়ে।
উত্তরাঞ্চলের সে চাপ সামাল দেন ফজলে রাব্বী ও মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেন ৭৮ রান। সে জুটি ভাঙেন নাসির হোসেন, তাঁর বলে বোল্ড হন ৫৩ বলে ৩৯ রান করা মাহমুদউল্লাহ। ৪২তম ওভারে গিয়ে আউট হওয়ার আগে রাব্বি করেন ১১৪ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৬৫ রান, মেহেদী হাসান মিরাজের বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি। রাব্বির সঙ্গে আকবর আলীর জুটিতে ওঠে ৪৫ রান।
৪০ ওভার শেষেও উত্তরাঞ্চলের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১৫৭ রান। শেষ ১০ ওভারে তারা তুলেছে ৮৭ রান। মূল অবদান আকবর ও শামীম হোসেনের। ৪১ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে ৩টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন আকবর, মিরাজের বলে কট বিহাইন্ড হওয়ার আগে। শামীম খেলেন ২০ বলে ৩৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস, যাতে ৫টি চারের সঙ্গে মারেন ১টি ছক্কা। ৪৫ রানে ৩ উইকেট নেন শরীফুল।