বাংলাদেশ নিয়ে স্মৃতিটা তাহলে এখনো মোটামুটি তাজাই আছে মুশতাক আহমেদের! সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন ১৯৯৮ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ ক্রিকেট খেলতে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ২০ রানে ২ উইকেট, ভারতের বিপক্ষে ৪৮ রানে ১ উইকেট। কিন্তু বাংলাদেশ দলের নতুন স্পিন কোচ হয়ে আসা পাকিস্তানের এই সাবেক লেগ স্পিনার আজ ফিরে গেলেন আরও অতীতে।
নতুন দায়িত্ব নিয়ে গতকাল ঢাকায় এসে কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গেছেন মুশতাক। ঘুরে ঘুরে মাঠ, ড্রেসিংরুম দেখেছেন। সৌজন্য বিনিময় করেছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। তাঁর হাতে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন জার্সি তুলে দেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা ইনচার্জ ও জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফীস। পরে বিসিবির বোর্ডরুমে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, কোচিং স্টাফের অন্যান্য সদস্য এবং খেলোয়াড়দের এক সভায় নতুন স্পিন কোচকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয় বাংলাদেশ দল।
বিসিবির দেওয়া ভিডিও বার্তায় পাকিস্তানের হয়ে ৫২টি টেস্ট ও ১৪৪টি ওয়ানডে খেলা মুশতাক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের অংশ হতে পারাটা আমার জন্য বিরাট সম্মানের।’ এরপরই ফিরে যান সেই ১৯৯৩–৯৪ সালে, যেবার প্রথম পা রেখেছিলেন বাংলাদেশে, ‘মনে আছে, ১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৯৩–৯৪ সালে বাংলাদেশে আসা পাকিস্তান দলের অংশ ছিলাম আমি। বাংলাদেশে আসাটা সব সময়ই দারুণ ব্যাপার। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অনেক ভক্ত এখানে। বাংলাদেশে খেলাটা আমরা খুবই উপভোগ করেছিলাম। এখানকার আতিথেয়তা চমৎকার।’
তবে এবারের আসাটা ভিন্ন ভূমিকায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আসন্ন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচ মুশতাক। বাংলাদেশে ঘুরে যাওয়ার অতীত অভিজ্ঞতা যতই সুখস্মৃতি হয়ে থাকুক না কেন, এবারের কাজটাকে চ্যালেঞ্জিংই মনে হচ্ছে টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে ৩৪৬ উইকেটের মালিক মুশতাকের, ‘কাজটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বাকি বিশ্বের চেয়ে এটা সম্পূর্ণ আলাদা। আপনাকে এখানে মানিয়ে নিতে হবে এবং অনেক বেশি স্বপ্রণোদিত হতে হবে। এখানকার ক্রিকেটটাকে বুঝতে হবে। বাংলাদেশে এসে বিনয়ী সব মানুষের সঙ্গে মেশাটা সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তবে একজন খেলোয়াড় বা কোচ, যে হিসেবেই বলুন না কেন, আপনাকে সেরা মানের হতে হবে।’
২০২০ সালের জুনে ইংল্যান্ড সফরে পাকিস্তান দলের স্পিন বোলিং কোচ ছিলেন মুশতাক। এর আগে দায়িত্ব পালন করেছেন ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন কোচেরও। একজন কোচ হিসেবে ৫৩ বছর বয়সী এই পাকিস্তানি আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের স্পিন বিভাগে তিনি পরিবর্তন আনতে পারবেন, ‘আমি তরুণ ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করব। আশা করি, আমরা একটা পার্থক্য তৈরি করতে পারব।’ বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের ‘অত্যন্ত প্রতিভাবান’ প্রশংসাপত্র দিয়ে নতুন স্পিন কোচ বলেছেন, ‘তারা যেকোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।’
একজন লেগ স্পিনারের জন্য বাংলাদেশ দলের দীর্ঘ অপেক্ষার কিছুটা হলেও অবসান ঘটেছে সম্প্রতি জাতীয় দলে রিশাদ হোসেনের আবির্ভাবে। মুশতাক নিজে যেহেতু লেগ স্পিনার ছিলেন, তাঁর দৃষ্টিটা সেদিকে একটু বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক। তাতে রিশাদের বোলিংয়ে উন্নতি আসার পাশাপাশি লেগ স্পিনে আরও নতুন প্রতিভা খুঁজে পাওয়ার আশাও করতে পারে বাংলাদেশ।
২০২০ সালের জুনে ইংল্যান্ড সফরে পাকিস্তান দলের স্পিন বোলিং কোচ ছিলেন মুশতাক। এর আগে দায়িত্ব পালন করেছেন ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন কোচেরও।
মুশতাকের ইচ্ছা এ ব্যাপারে বিসিবির মাধ্যমে ক্লাব এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কোচদের সঙ্গে কথা বলবেন, ‘আমরা লেগ স্পিনার এবং চায়নাম্যান বোলার খুঁজতে পারি। সাদা বলের ক্রিকেটে মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট এনে দেওয়ার মতো বোলার প্রয়োজন আমাদের।’