আরও একটি ম্যাচ, আরও একটি ব্যাটিং ধসের গল্প। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, শুরুতে ব্যাটিং দুর্দশার গল্প বদলাচ্ছে না। ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে ৪৯ রানে হারিয়েছে প্রথম ৪ উইকেট।
আজ চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৬ রান তুলতেই ৪ ব্যাটসম্যান আউট। সেখান থেকে অবশ্য মুশফিকুর রহিম (৬৬), সাকিব আল হাসান (৪০) ও মাহমুদউল্লাহর (৪১) সৌজন্যে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ২৪৫ রান করেছে।নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন লকি ফার্গুসন।
আগের ম্যাচে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে ফর্মে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন লিটন দাস। ওপেনিং থেকে যখন একদমই রান আসছিল না, তখন লিটনের ফিফটিতেই ইতিবাচকতা খুঁজছিল বাংলাদেশ। সেই লিটনই আজ ইনিংসের প্রথম বলে আউট! নিউজিল্যান্ড দলের পেসার ট্রেন্ট বোল্টের ইনসুইং সামলে নিতে ক্রিজের অনেকটা বাইরে স্টান্স নিয়েছিলেন লিটন। সেখান থেকেই দুই পা এগিয়ে স্কয়ার লেগের দিকে খেললেন ফ্লিক শট। টাইমিংও হয়েছিল ঠিকঠাক। কিন্তু বল স্কয়ার লেগে না গিয়ে যায় ফাইন লেগে। সেখানে একমাত্র ফিল্ডার ম্যাট হেনরি লাফিয়ে লুফে নেন ক্যাচটা।
ইনিংসের প্রথম বলেই কোন রান না করে আউট লিটন। নিজের ২৯তম জন্মদিনে ‘গোল্ডেন ডাক’! এর পর মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানজিদ হাসান ৪০ রান যোগ করেন। বোল্ডের সুইং ও হেনরির সিম মুভমেন্ট স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলছিলেন দুই ব্যাটসম্যান। কেন উইলিয়ামসন তাই বাধ্য হয়ে অষ্টম ওভারেই লকি ফার্গুসনকে বোলিংয়ে আনেন, যিনি সাধারণত বোলিং করেন পাওয়ার প্লের পরে।
সেই ফার্গুসনই ছোটখাটো একটা ধস নামান বাংলাদেশ টপ অর্ডারে। ১৭ বল খেলে ৪টি চারে ১৬ রান করে ফার্গুসনের বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন তানজিদ। ১২তম ওভারে মিরাজ আউট হন ফার্গুসনের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে। তার আগে ৪৬ বলে ৪টি চারে ৩০ রান করেন মিরাজ। পরের ওভারে অনিয়মিত বোলার গ্লেন ফিলিপসের বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন নাজমুল হোসেন (৭)। ৪০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর ৫৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে বড় বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
পঞ্চম উইকেটে সাকিব ও মুশফিকের ৯৬ জুটির শুরু সেখান থেকেই। মুশফিক ইনিংসের শুরুতেই ফিলিপসের বলে চার-ছক্কা মেরে কিছুটা চাপ সরাতে চেষ্টা করেন। সাকিব বাউন্ডারির জন্য বেছে নেন রাচিন রবীন্দ্রকে। বাঁহাতি-ডানহাতি সমন্বয়ের কারণে সিঙ্গেল নিতেও সুবিধা হয়েছে দুজনের। ফিফটি ছাড়িয়ে জুটিটা যখন এক শ’র কাছাকাছি, তখনই বোলিংয়ে ফিরিয়ে আনা হয় ফার্গুসনকে। তিনিও হতাশ করেননি ইংল্যান্ডকে।
স্কয়ার অব দ্য উইকেটে দুজন করে চারজন ফিল্ডার বাইরে রেখে একের পর এক বাউন্সার করে যান তিনি। পুল শট খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় হলেই আউট। ফার্গুসন শেষ পর্যন্ত সাকিবকে এই কৌশলেই আউট করেন। ৩০তম ওভারে পুল শটে একটি ছক্কা মারার পর সাকিব আরও একটি ছক্কা মারার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যাটের এজে লাগায় বল যায় স্কয়ার লেগে। উইকেটকিপার টম ল্যাথাম দৌড়ে এসে ক্যাচ লুফে নেন। ৫১ বল খেলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রানে থামে সাকিবের ইনিংস।
মুশফিক অবশ্য ফিফটি করে এগোতে থাকেন। তবে সেটাও বেশিক্ষনের জন্য নয়। ৩৬তম ওভারে হেনরির নিচু হয়ে আসা অফ কাটারে বোল্ড হন তিনি। ৭৫ বল খেলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৬ রান করা মুশফিকের চোখেমুখে তখন অবিশ্বাস। শর্ট বল কীভাবে এত নিচু হয়ে এল, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ছেড়ে যান মাঠ। ৩৮তম ওভারে বোল্টের নাকল বলে কাভারে ক্যাচ তোলেন তাওহিদ হৃদয় (১৩)। বোল্টের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০০তম উইকেট ছিল এটি।
সেখান থেকে বাংলাদেশ দলের রানটাকে দুই শ’র ওপারে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন আহমেদ (১৭)। মাহমুদউল্লাহ আজ ব্যাটিংয়ে নেমেছেন আটে, সর্বশেষ তিনি আটে নেমেছিলেন ২০১০ সালে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তাসকিনের সঙ্গে ৩৪ রান যোগ করার পর মোস্তাফিজুর রহমান (৪) ও শরীফুল ইসলামকে (২) নিয়ে দলের রানটাকে ৯ উইকেটে ২৪৫ রানে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহই। ৪৯ বল খেলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ছিলেন ৪১ রানে।