আইপিএলে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জেতার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা গ্রাফিকস পোস্ট করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘দ্য টিম বিহাইন্ড দ্য টিম’। মানে পর্দার আড়ালে যে দলটা কাজ করেছে—কোচ ও সাপোর্ট স্টাফের সেই সদস্যদের ছবি দিয়ে বানানো সেই গ্রাফিকস। তাতে সবচেয়ে বড় ছবিটা গৌতম গম্ভীরের। তাঁর পেছনে ডান পাশে কলকাতার প্রধান কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত, বাঁয়ে সহকারী কোচ অভিষেক নায়ার।
কাগজে-কলমে গম্ভীরের পদবি—তিনি কলকাতার মেন্টর বা পরামর্শক। তবে মৌসুমজুড়েই বারবার সামনে এসেছেন তিনি। গতকালের ফাইনালের পরও খেলোয়াড়েরা কৃতিত্ব দিচ্ছেন তাঁকেই। তাতে প্রধান কোচও আড়ালে চলে যাচ্ছেন বারবার। ‘মেন্টর’ ভূমিকাটাই যেন বদলে দিয়েছেন কলকাতাকে এর আগে দুবার চ্যাম্পিয়ন বানানো অধিনায়ক।
ফাইনালে ৩ উইকেট নেওয়া আন্দ্রে রাসেল যেমন বলেছেন, ‘জিজি (গৌতম গম্ভীর) শুধু মেন্টর ছিল না, সে প্রতিটি বিভাগেই আমাদের নেতা ছিল। আমার মনে হয়, আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি সেটিই। সে নিশ্চিত করেছে, যাতে প্রত্যেক ব্যাটার ও বোলার তাদের ভূমিকা পালন করে। জিজি যেকোনো দলেই দুর্দান্ত একজন।’
গত দুই মৌসুম লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসে একই ভূমিকায় ছিলেন গম্ভীর। এবার তিনি ফেরেন কলকাতায়। রাসেলের মতে, অনেক কিছুই বদলে গেছে তাতে, ‘আমরা যা চেয়েছি, সাপোর্ট স্টাফ সব সময়ই তা দিয়েছে। নিশ্চিত করেছে, যাতে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে নেট ছাড়ি। সবাই চ্যাম্পিয়নশিপের পথে বড় ভূমিকা রেখেছে। জিজি ফিরে এসেছে, আইপিএল জিতেছে, দারুণ একটা সাপোর্ট স্টাফ—আপনার এর চেয়ে বেশি আর কী চাই!’
এর আগে কলকাতাকে নেতৃত্ব দেওয়া নিতীশ রানা বলছেন, গম্ভীর তাঁদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিলেন মৌসুমের শুরুর আগেই। তিনি বলেছেন, ‘গৌতম গম্ভীর যখন আমাদের মেন্টর হিসেবে সই করলেন, আমি হোয়াটসঅ্যাপে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। লম্বা একটা মেসেজ লিখেছিলাম। আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু এটাও বলেছিলেন, যখন ট্রফিটা মঞ্চে উঁচিয়ে ধরব, সেদিনই তিনি সবচেয়ে খুশি হবেন। আজ সেই দিন, আর আমি ওই মেসেজ চিরদিন মনে রাখব।’
টুর্নামেন্টে মাত্র তিনটি ম্যাচ হেরেছে কলকাতা, আইপিএলে কোনো দলের এক মৌসুমে যা যৌথভাবে সবচেয়ে কম ম্যাচ হারের রেকর্ড। মৌসুমে দলটির অন্যতম শক্তি ছিলেন সুনীল নারাইন। ব্যাটিংয়ে ১৮০.৭৪ স্ট্রাইক রেটে ৪৮৮ রান করার পাশাপাশি বোলিংয়ে ১৭ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন এই ক্যারিবীয়।
এমন পারফরম্যান্সের পর নারাইনও কৃতিত্ব দিয়েছেন গম্ভীরকে, ‘নেমে শুধু নিজেকে মেলে ধরার যে ভূমিকা, দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার চেষ্টা করা—এগুলোই মূল ব্যাপার। সাপোর্ট স্টাফের সহায়তা, বিশেষ করে জিজি (গম্ভীর) শুধু বলেছে, “গিয়ে উপভোগ করো, দলকে শুধু কয়েকটা ম্যাচ জেতানোর চেষ্টা করো। পুরো মৌসুমে এমন কিছু করতে বলছি, শুধু কয়েকটা ম্যাচে করতে বলছি।” পরামর্শটা ভালো ছিল।’
গম্ভীরের কথা বলেছেন স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীও, ‘আমরা মৌসুমের শুরুতে পাঞ্জাব কিংসের কাছে হেরেছিলাম। গৌতম এরপর আমাদের বলেছিল, “এই হারই আমাদের ফাইনালে জেতাবে।” এখন সেটিই হলো।’
সব মিলিয়ে কলকাতায় গম্ভীরের এবার পথচলা কিছুটা ‘ফিরলাম, দেখলাম, জয় করলাম’-এর মতো ব্যাপার। তবে পরের মৌসুমেও গম্ভীরকে দলটি পাবে কি না, প্রশ্ন সেটিই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে রাহুল দ্রাবিড় চলে যাওয়ার পর ভারতের পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধান কোচ হিসেবে আসছে গম্ভীরের নাম। অবশ্য গম্ভীরকে রেখে দিতে সব রকম চেষ্টাই করা হবে মালিক শাহরুখ খানের পক্ষ থেকে—এমন সংবাদও এসেছে আগেই।