অস্ট্রেলিয়া-ভারতের ‘এ’ দলের মধ্যকার ম্যাচে বল পরিবর্তনের বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে (সিএ) পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। এ বছরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়া ওয়ার্নারের অভিযোগ, ভারত ‘এ’ দলের বল টেম্পারিংয়ের ঘটনা ‘চাপা’ দিয়েছে সিএ। কারণ, সামনেই ভারত জাতীয় ক্রিকেট দল বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় আসছে।
আলোচিত ম্যাচটির অংশ না হলেও বল টেম্পারিংয়ের ঘটনায় ওয়ার্নারের মুখ খোলা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউনে বল টেম্পারিংয়ের দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ওয়ার্নার, হারিয়েছিলেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতায় অধিনায়ক হওয়ার সুযোগও।
ম্যাকাইয়ে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ ও ভারত ‘এ’ দলের প্রথম আনঅফিশিয়াল টেস্ট শুরু হয় ৩১ অক্টোবর। ম্যাচের শেষ দিন সকালে আম্পায়ার একটি নতুন বল দিয়ে খেলা চালাতে গেলে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে ভারত। টেস্টের মধ্যে বল বদলানোর নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম আছে। শেষ দিনের সকালে নতুন বল দেওয়ায় ভারতের উইকেটকিপার ঈশান কিষান বেশ ক্ষুব্ধ স্বরে প্রতিবাদ জানান।
ওই সময় স্টাম্প মাইকে শোনা যায়, আম্পায়ার শন ক্রেইগ আগের বলটি বিকৃত হওয়ায় পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান। একপর্যায়ে ক্রেইগ বলেন, ‘তোমরাই বিকৃত করেছ। আমরা সেটা বদলে নিয়েছি। এ নিয়ে আর কোনো কথা হবে না। যাও, খেলো।’ কিষান বল বদলানোর সিদ্ধান্তকে ‘স্টুপিড’ বলায় সেটি আম্পায়ার তাঁর ম্যাচ রিপোর্টে লিখবেন বলেও হুমকি দেন।
আইন অনুসারে, বল বিকৃত করা হলে সংশ্লিষ্ট দলকে ৫ রান জরিমানা দেওয়া হয়। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে আম্পায়াররা এমন কোনো সিদ্ধান্ত আরোপ করেননি।
ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একটি বিবৃতিতে জানায়, বলের বাইরের অবস্থার অবনতি ঘটেছিল বলে পরিবর্তন করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুই দলের অধিনায়ক এবং ম্যানেজারদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
তবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বিবৃতিতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১১২ টেস্ট খেলা এই ওপেনার তাঁর দেশের বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নই তুলেছেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কে নিয়েছে? সিএ-ই তো, না? আমার মনে হয় তারা পুরো বিষয়টা যত দ্রুত সম্ভব চাপা দিতে চেয়েছে, কারণ সামনেই ভারত খেলতে আসছে। কিন্তু আম্পায়ারদের যদি কিছু মনে হয়েই থাকে, আমি নিশ্চিত এর ফলোআপ হবে। আম্পায়ার অথবা ম্যাচ রেফারিদের প্রশ্নগুলোর সামনে দাঁড়ানো উচিত।’
এ ক্ষেত্রে ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি জেনে সিএ-র পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার মনে করেন ওয়ার্নার, ‘ম্যাচ রেফারির এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা উচিত এবং আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। যদি তারা আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, সেটাতে দৃঢ় থাকতে হবে। এ নিয়ে সিএ-কে অবশ্যই বিবৃতি দিতে হবে। আমি তেমন কিছু দেখলাম।’
ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবরে বলা হয়, বল বিকৃতি করা হচ্ছে এমন কোনো ঘটনার ফুটেজ নেই। আইন অনুসারে, বল বিকৃত করা হলে সংশ্লিষ্ট দলকে ৫ রান জরিমানা দেওয়া হয়। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে আম্পায়াররা এমন কোনো সিদ্ধান্ত আরোপ করেননি। তবে সিএ-এর প্লেয়িং কন্ডিশনে বলা আছে, কীভাবে বলে বিকৃতি ঘটেছে আম্পায়াররা তা নিশ্চিত হতে না পারলে রান জরিমানা করা ছাড়াই বল বদলে দিতে পারেন।
ওয়ার্নার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন সিডনি থান্ডারের অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায়। বল টেম্পারিং কাণ্ডে নেতৃত্বে নিষেধাজ্ঞার পর এ বছরই সেটি তুলে নেওয়া হয়। কেপটাউনের প্রসঙ্গ ধরে ওয়ার্নার বলেন, ‘আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা কারণবশতই দেওয়া হয়েছে। আমি সেটা মেনেও নিয়েছি। কখনোই নেতৃত্ব দিতে পারব না, এটা হতাশারই ছিল। তবে আমি সেখান থেকে ঘুরে এসেছি।’
অস্ট্রেলিয়ায় কোনো দলের নেতৃত্বে না থাকলেও আইপিএলে নিয়মিতই অধিনায়কত্ব করেছেন ওয়ার্নার।