বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির আগুনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপ মিলিয়ে যেতে না যেতেই আরেকটি গরম খবর—২০২৭ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেটকে দুই স্তরে ভাগ করতে চায় খেলাটির ‘বিগ থ্রি’ বা তিন মোড়ল। যাতে আলাদা হয়ে যাবে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ৭টি দল, বাকি ৫টি দল থাকবে দ্বিতীয় স্তরে। দুই স্তরের কাঠামো নিয়ে এ মাসেই আইসিসির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা বিগ থ্রি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের।
শেষ পর্যন্ত কী হবে জানেন না, তবে এই খবর শুনে হতাশা প্রকাশ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুবারের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বলেছেন এই ‘বাজে প্রস্তাব’ নিয়ে সব আলোচনা এখনই বন্ধ করা উচিত। ক্যারিবীয় কিংবদন্তি দুই স্তরের টেস্ট বাস্তবায়িত হবে না বলেও বিশ্বাস করেন।
আমার মনে হয় না দুই স্তরের কাঠামো বাস্তবায়িত হবে। আমি এই খবর শুনে খুব বিরক্ত। এখনই এটাকে থামিয়ে দেওয়া উচিত। এখানে তো ৩০-৪০টি দল নেই, দল মাত্র ১০টি (আসলে ১২ টি)। আমাদের এমন একটা কাঠামো থাকা উচিত, যেখানে সবাই নিয়মিত খেলার সুযোগ পাবে।ক্লাইভ লয়েড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক
ভারতীয় বার্তা সংস্থা আইএএনএসের সঙ্গে দুই স্তরের টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছেন লয়েড। সেখানে স্পষ্টতই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই ক্রিকেটার, ‘আমার মনে হয় না দুই স্তরের কাঠামো বাস্তবায়িত হবে। আমি এই খবর শুনে খুব বিরক্ত। এখনই এটাকে থামিয়ে দেওয়া উচিত। এখানে তো ৩০-৪০টি দল নেই, দল মাত্র ১০টি (আসলে ১২ টি)। আমাদের এমন একটা কাঠামো থাকা উচিত, যেখানে সবাই নিয়মিত খেলার সুযোগ পাবে।’
তিন মোড়লের নতুন প্রস্তাব টেস্ট ক্রিকেটের ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি করবে বলেই মনে করেন ক্লাইভ, ‘টেস্ট ক্রিকেট এখনো ক্রিকেটের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সংস্করণ। এখন তো মনে হচ্ছে এটাকে এক পাশে সরিয়ে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। যদি এমনটাই হয়, তবে সেটি খুব বড় ভুল হবে। আমাদের আরও ভালো কাঠামো দরকার। সবাই বসে অনেক চিন্তাভাবনা করেই কিছু করা উচিত, শুধু টি-টোয়েন্টিই সবকিছু—এটা বললে হবে না।’
দুই স্তরের কাঠামোয় টেস্ট ক্রিকেট কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন লয়েড, ‘বড় বিপর্যয় হতে পারে। যেহেতু ভালো দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ থাকবে না, তাই নিচের স্তরের দলগুলোর উন্নতির সুযোগ থাকবে না। শুধু নিজেদের (একই মানের) মধ্যে খেলে কীভাবে উন্নতি করবেন? টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা দলগুলো হঠাৎই নিজেদের নিচু স্তরে অবনমিত দেখতে পাবে।’
নিচু সারির দলগুলো প্রস্তাবিত কাঠামোতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন লয়েড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বজয়ী দলের অধিনায়ককে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে নিজের দলের ভবিষ্যৎ। এ রকম কিছু হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন লয়েড, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে যদি টেস্ট ক্রিকেট ‘‘ইতিহাস’’ হয়ে যায়, তবে সেটি হৃদয়বিদারকই হবে। আমরা প্রায় ১০০ বছর ধরে আইসিসির অংশ। কী ঝলমলে আমাদের ইতিহাস। যদিও ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় আমাদের জনসংখ্যাকে নগণ্যই বলা চলে। আর এখন আর্থিক দুরবস্থার কারণে আমরা পথ হারিয়েছি।’
টেস্ট ক্রিকেটকে দুই ভাগ না করার অনুরোধ করা লয়েড বললেন, মানুষ এখনো টেস্ট ক্রিকেট দেখতে চায়, ‘সবাই শুধু টি-টোয়েন্টিই চায় না, আমরা টেস্ট ক্রিকেটও দেখতে চাই। কারণ, টি-টোয়েন্টি হলো প্রদর্শনী, অন্য দিকে টেস্ট ক্রিকেট হলো সামর্থ্যের পরীক্ষা। শুধু টেস্ট ক্রিকেট দেখেই আপনি একজন ক্রিকেটারের প্রকৃত সামর্থ্য বুঝতে পারবেন।’