ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মহলে ঘটনাটিকে বলা হচ্ছে, ‘ব্রেকিং ব্যারিয়ার্স’ বা বাঁধ ভেঙে ফেলা। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ দূর করতে মেয়েদের কোনো দল যখন ছেলেদের লিগে খেলে, তখন তা আলোড়ন সৃষ্টি করারই কথা।
সেটাই করেছে ম্যানচেস্টার শহরতলির দল রামসবটম ক্রিকেট ক্লাব। ক্লাবটির মেয়েরা এ মৌসুমে ছেলেদের ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে অংশ নিয়েছেন, যা ইংল্যান্ডে তো বটেই; বিশ্বেই হয়তো পুরুষদের টুর্নামেন্টে কোনো নারী দলের খেলার প্রথম নজির। রামসবটমের মেয়েরা ছেলেদের লিগে শুধু খেলেনইনি, দারুণ লড়াইও করেছেন।
ছেলেদের ল্যাঙ্কাশায়ার লিগ ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটের তৃতীয় স্তরের টুর্নামেন্ট, যেখানে গত এপ্রিলে অভিষেক হয় রামসবটম ক্রিকেট ক্লাবের। মহিলা-বালিকা উভয় বয়সী নারীদের নিয়ে গড়া ক্লাবটি প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দেয় ছেলেদের অ্যাকরিংটন ক্রিকেট ক্লাবকে। ১১ দলের টুর্নামেন্ট তারা শেষ করেছে সাতে থেকে। আগামী বছরও ছেলেদের ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে খেলার ইচ্ছা তাদের।
বিরল সব ঘটনার পেছনে কিছু বিচিত্র গল্প থাকে। রামসবটম ক্রিকেট ক্লাবের মেয়েদের লিগ ছেড়ে ছেলেদের লিগে খেলার ‘ভূত মাথায় চাপা’র পেছনেও একটা গল্প আছে। গল্পটা দুঃসাহসিকতার, আরও বড় চ্যালেঞ্জ নেওয়ার।
২০২০ সালের আগে রামসবটম ক্রিকেট ক্লাবের নারী দল ছিল না। করোনার দুঃসময় পার করার পর নারী দল প্রতিষ্ঠিত হয় গত বছর। মেয়েদের ৪০ ওভারের ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে তখন থেকেই তারা অপরাজিত; চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টানা দুবার।
মেয়েদের লিগে অজেয়-অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠায় দলের খেলোয়াড়, কোচ এবং ক্লাব কমিটির মনে হলো এবার তাহলে নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়া যাক। যেই চিন্তা, সেই কাজ। রামসবটম নারী ক্রিকেট দল ২০২৪ মৌসুমের আগে নিবন্ধন করে ফেলল ছেলেদের ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে! সম্প্রতি ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এই অভিযানের গল্প শুনিয়েছেন দলটির অধিনায়ক মাইভ জোন্স ও কোচ ইয়ান কোলিয়ার।
ম্যানচেস্টারের বিখ্যাত ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে রামসবটমের অবস্থান ২০ মাইল উত্তরে। অনন্য ইতিহাস গড়ে ছোট্ট শহরটির গর্ব হয়ে উঠেছে মেয়েদের দল। অধিনায়ক জোন্সের কাছে যা রামসবটম শহরকে প্রতিনিধিত্ব করার চেয়েও বেশি কিছু। তিনি বলেছেন, ‘ছেলেদের লিগে মেয়েদের অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের মধ্যে যে বিষয়টি কাজ করেছে, তা হলো কাউকে না কাউকে এটা করতেই হবে। আমরা তা করতে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছি।’
ছেলেদের লিগে মেয়েরা খেললে অনেক নেতিবাচক কথা শুনতে হতে পারে, এ ধরনের বিষয়ে কান দেয়নি তাঁর দল, ‘আমরা সহজেই টুর্নামেন্টে থেকে বাদ পড়তে পারতাম, মৌসুমে কোনো ম্যাচ নাও জিততে পারতাম। সবাই তখন বলত, “ওহ্, বলেছিলাম না তোমাদের ফলাফল এমনই হবে।” কিন্তু আমরা তা হতে দিইনি। আমরা কঠিন লড়াই করেছি। মানুষ দেখতে পারে আমরা কতগুলো ম্যাচ জিতেছি।’
কোচ কোলিয়ার জানিয়েছেন, টুর্নামেন্টজুড়ে তাঁর দল ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন, ‘মেয়েদের মনে হয়েছে, তারা শুধু নিজেদের ও এই ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করছে না (বরং তার চেয়েও বেশি কিছু)। অনেক মানুষ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের খেলা দেখতে এসেছিল, বহু মানুষ অনলাইনেও খেলা দেখেছে।’
অধিনায়ক জোন্স জোর দিয়েই বলেছেন, ছেলেদের লিগে অংশ নেওয়া রামসবটম মেয়েদের দলের জন্য সঠিক সময়ে যৌক্তিক পদক্ষেপ ছিল। এর মাধ্যমে নারী খেলোয়াড়েরা নিজেদের চেনাতে পেরেছেন এবং উন্নতির সুযোগ পেয়েছেন, ‘আমাদের মেয়েরা যথেষ্ট প্রতিভাবান। আমার মনে আছে, শ্রিয়া পিন্ডোরিয়া এক ম্যাচে ৫ উইকেটের বেশি নিয়েছিল এবং ওদের (অ্যাকরিংটন ক্রিকেট ক্লাবের) ব্যাটিং ধসে দিয়েছিল। পরাজয়টা তাদের জন্য করুণাময় ছিল এবং আমাদের জন্য বিশাল টার্নিং পয়েন্ট।’
রামসবটম ক্রিকেট ক্লাবের বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধাই দলের উন্নতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। সব পর্যায়ের দলের জন্য আলাদা ড্রেসিংরুম আছে ক্লাবটির। অনুশীলনও হয় আলাদা সময়ে। ছেলে ও মেয়ে দল নেটে অনুশীলনের সমান সুযোগ পায়। এ বছর সিনিয়র, জুনিয়র ও একাডেমি দলের উপস্থাপনা অনুষ্ঠানও হয়েছে যৌথভাবে।
জোন্সের আশা রামসবটম ক্রিকেট ক্লাবকে দেখে অন্য ক্লাবগুলোও ছেলেদের লিগে মেয়েদের দলকে খেলানোর ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলবে, ‘আমাদের আশা আরও মানুষ এটা করবে এবং আরও মানুষ (আমাদের মতো) সাহস দেখাবে।’