সে অনেক বছর আগের কথা। সাইম আইয়ুবের বয়স তখন ১ মাসও হয়নি। আর নাসিম শাহ তো জন্মই নেননি। পাকিস্তান দলে তখন খেলতেন ওয়াসিম আকরাম, সাঈদ আনোয়াররা।
সেই ২০০২ সালের জুনে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল পাকিস্তান। ২২ বছর পর আজ আবার পাকিস্তান দল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জিতল। পার্থে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সব সংস্করণ মিলিয়ে এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সিরিজ জয়।
টসে হেরে এই ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়াকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল পাকিস্তান। ৪ পেসারের তোপে ৩১.৫ ওভারে ১৪০ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। আগের ম্যাচের রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটাই এখন তাদের দলীয় সর্বনিম্ন।
যে ম্যাচের ফল সাইম ও আবদুল্লাহ শফিকের ৮৪ রানের উদ্বোধনী জুটিতেই নিশ্চিত হয়ে যায়। সাইম করেন ৪২ রান, শফিক ৩৭। ১ রানের মধ্যে দুই ওপেনার ফিরলেও ৫৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে পাকিস্তানকে জয়ের কাছে পৌঁছে দেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান।
২০০২ সালেও পাকিস্তান সিরিজ জিতেছিল প্রথম ম্যাচে হারের পর। তবে একটা জায়গায় রিজওয়ানের দলের জয়টি আলাদা। এই সিরিজে পাকিস্তানের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ম্যাচে মেলবোর্নে মাত্র ২০৩ রানে অলআউট হওয়ার পরও একপর্যায়ে ফেবারিট ছিল পাকিস্তানই। ১৮৫ রানেই অস্ট্রেলিয়ার ৮ উইকেট তুলে নিয়েছিল বোলাররা। আর দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ১৬৩ রানেই অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করে দেন পাকিস্তানের পেসাররা। আজও ম্যাচ হয়েছে একতরফা।
হ্যাঁ, দুই দলের শক্তিরও পার্থক্য আছে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আগের ঘোষণা অনুযায়ী স্টিভেন স্মিথ, মারনাস লাবুশেন, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউডদের বিশ্রাম দিয়েছে। যদিও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এই প্রথম সিরিজ খেলতে নামা পাকিস্তানও ছিল নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে পরীক্ষার অপেক্ষায়।
পাকিস্তান এই সিরিজে খেলেছে ৪ জন বোলার নিয়ে। পঞ্চম বোলার হিসেবে কাজ চালানোর পরিকল্পনায় ছিলেন সাইম, সালমান আগারা। তবে তিন ম্যাচেই তাদের দ্বারস্থ খুব একটা হতে হয়নি। নতুন অধিনায়ক রিজওয়ানও খেলাটাকে ৫০ ওভারে নিয়ে যেতে চাননি। পেসারদের ধারাবাহিকভাবে বোলিং করিয়ে গেছেন। আজকের ম্যাচেও ৪ পেসার মিলেই বোলিং করেছেন ৩১.৫ ওভার। এই চার পেসারকে যেভাবে বুদ্ধিদীপ্তভাবে ব্যবহার করেছেন সেটা ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্লেষকদের মন জুগিয়েছে।
একটা উদাহরণও দেওয়া যেতে পারে। ২০২৩ বিশ্বকাপে হারিস রউফ পাওয়ার প্লেতে নিয়মিত বোলিং করেছেন। ওভারপ্রতি দিয়েছেন ৯.৪২ করে। নানা সমালোচনার পরও বাবর আজম তাকে পাওয়ার প্লেতে বোলিং করিয়ে গেছেন। রিজওয়ান সেটা করাননি, পুরো সিরিজে পাওয়ার প্লেতে রউফকে ১ ওভারও বোলিং করাননি। যে সিদ্ধান্ত কাজেও দিয়েছে।
এই রউফই সিরিজের সেরা বোলার। ৩ ম্যাচে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ১০ উইকেট। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন অন্য পেসাররা—শাহিন আফ্রিদি নিয়েছেন ৮টি, নাসিম শাহ ৫টি, হাসনাইন ৩টি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজে পাকিস্তানের পেসাররা উইকেট নিয়েছেন ২৬টি, যা পাকিস্তানের হয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সর্বোচ্চ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে ৪০ উইকেটই নিয়েছিলেন পাকিস্তানের স্পিনাররা। এবার অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সব উইকেটই নিলেন পেসাররা।
ব্যাটসম্যানেরাও নিজেদের কাজটা করেছেন ভালোমতোই। দুই ওপেনার সাইম (১২৫) ও শফিক (১১৩) ছিলেন ছন্দে। পুরো সিরিজে আর কোনো ব্যাটসম্যান এক শ রানের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। ব্যাটসম্যানদের প্রসঙ্গ এসেছে যখন, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের ভুলে যাওয়ার মতো রেকর্ডও উল্লেখ করতে হয়।
সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কোনো ব্যাটসম্যান ফিফটি করতে পারেননি। দলটির ওয়ানডে ইতিহাসে কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। সিরিজে তাঁদের ব্যাটিং গড় ১৬.৮৮। ঘরের মাঠে এটিও তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
বড় ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে জশ ইংলিস, মার্কাস স্টয়নিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হতো। সেটা তাঁরা করতে পারেননি। প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিতে নেমে ইংলিস করেছেন ৭ রান। স্টয়নিসের ব্যাট থেকে এসেছে ৮ রান। আর ম্যাক্সওয়েল মেরেছেন ডাক। এই সিরিজে হারিস রউফের ৯টি বল খেলেছেন ম্যাক্সওয়েল। আউট হয়েছেন ৩ বারই।
আজ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন একজন পেসার—শন অ্যাবট। অ্যাবটের ৩০-এর সঙ্গে শেষের দিকের ব্যাটসম্যানের অবদানে ১৪০ করতে পেরেছে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। অ্যাবট সপ্তম উইকেট জুটিতে জাম্পার সঙ্গে ৩০ ও অষ্টম উইকেটে স্পেনসার জনসনের সঙ্গে ২২ রান যোগ করেন।
আজ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আফ্রিদি ও নাসিম। রউফ নিয়েছেন ২টি, হাসনাইন ১টি। অভিষেক ম্যাচেই কুপার কনোলি ফিরেছেন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৩১.৫ ওভারে ১৪০/৯( অ্যাবট ৩০, শর্ট ২২, জাম্পা ১৩; আফ্রিদি ৩/৩২, নাসিম ৩/৫৪)
পাকিস্তান: ২৬.৫ ওভারেই ১৪৩/২(সাইম ৪২, শফিক ৩২, রিজওয়ান ৩০*; মরিস ২/২৪)
ফল: পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: পাকিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী