ট্রফি নিয়ে শ্রীলঙ্কা দলের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। আজ ডাম্বুলায়
ট্রফি নিয়ে শ্রীলঙ্কা দলের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। আজ ডাম্বুলায়

সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রথম শিরোপা

মেয়েদের এশিয়া কাপ ক্রিকেট মানেই ভারতের আধিপত্য। টুর্নামেন্টের ৮ আসরের ৭টিতেই চ্যাম্পিয়ন তারা। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে এশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ভারতীয় নারী দলের ধারেকাছে কেউ ছিল না।

আজ ডাম্বুলায় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালেও ফেবারিট ছিল ভারতই। কিন্তু এবার হলো উল্টোটা। গ্যালারি ভর্তি লঙ্কান দর্শকদের উৎসবে মাতিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শ্রীলঙ্কার মেয়েরা।

স্মৃতি মান্ধানার ৬০ রানের সৌজন্যে ভারতের ৬ উইকেটে করা ১৬৫ রান ১৮.৪ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই টপকে যায় শ্রীলঙ্কা নারী দল। চামিরা আতাপাত্তুর ৬১ রানের পর হারশিতা সামারাবিক্রমার অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংসে ৮ উইকেটের স্মরণীয় জয়ে লঙ্কানদের মেয়েদের হাতে উঠেছে প্রথম এশিয়া কাপের শিরোপা।  

মেয়েদের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং মানেই চামিরা আতাপাত্তু। এবারের এশিয়া কাপে তিনি একাই টানছিলেন লঙ্কান ব্যাটিং। মহাগুরুত্বপূর্ণ ফাইনাল ম্যাচের রান তাড়ায়ও জ্বলে উঠেছে তাঁর ব্যাট।

শ্রীলঙ্কার জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ভিশমি গুনারত্নে রান আউট, দলের রান তখন মাত্র ৭। এরপর তিনে নামা হারশিতা সামারাবিক্রমার সঙ্গে ৬৩ বলে ৮৭ রান যোগ করেন আতাপাত্তু। ১২তম ওভারে দিপ্তি শর্মার নিচু হয়ে আসা বলে লেগের দিকে খেলতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৪৩ বলে ৬১ রান। ১৪১ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে ৯টি চার ও ২টি ছক্কা মেরেছেন তিনি।

এবারের এশিয়া কাপে এটি আতাপাত্তুর দ্বিতীয় ফিফটি। একটি শতকও আছে এই বাঁহাতির। বিস্ফোরক ইনিংসের সৌজন্যে এশিয়া কাপে আতাপাত্তুর রান তিন শ (৩০৪) ছাড়িয়ে গেছে।

বাকি কাজটা করেছেন সামারাবিক্রমা। মাঝের ওভারে ধরে খেলেছেন, সুযোগ বুঝে খুঁজে নেন বাউন্ডারিও। কাভিশা দিলহারির সঙ্গে ৭৩ রানের জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন সামারাবিক্রমা। নিজে করেছেন ৫১ বলে অপরাজিত ৬৯ রান। ১৩৫ স্ট্রাইক রেটের ম্যাচ জেতানো ইনিংসে ৬টি চার ও ২টি ছক্কা মেরেছেন এই বাঁহাতি।

ফাইনালে লঙ্কান মেয়েদের সমর্থন জানাতে গ্যালারিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়

বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে কাভিশা অপরাজিত ছিলেন ১৬ বলে ৩০ রানে, ১টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল তাঁর ১৮৭ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। দুজনের ব্যাটে চড়ে ৮ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।

এর আগে ব্যাটিংয়ে ভারতকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা ও শেফালি বর্মা। দুজন মিলে পাওয়ার প্লেতে ৪৪ রান যোগ করেন। মান্ধানা ছিলেন আক্রমণাত্মক, শেফালি খেলেছেন ধরে। কাভিশা দিলহারির করা পাওয়ার প্লের পরের ওভারে থামে শেফালির ১৯ বলে ১৬ রানের ইনিংস।

উদ্বোধনী জুটির করে দেওয়া সুবিধাটা অবশ্য কাজে লাগাতে পারেননি ভারতের পরের দুই ব্যাটার উমা ছেত্রি (৯) ও হারমানপ্রিত কৌর (১১)। তবে মান্ধানার সঙ্গে ২৬ বলে ৪১ রানের জুটি গড়েন জেমিমাহ রদ্রিগেজ। ইনিংসের ১৭তম ওভারে জেমিমাহ ১৬ বলে ২৯ করে রান আউট হলে ভাঙে সেই জুটি।

স্মৃতি মান্ধানার ৬০ রানের ইনিংস বৃথা গেছে

কাভিশার করা পরের ওভারে থেমে যায় মান্ধানার ইনিংসও। ৪৭ বলে ১০ চারে ৬০ রান করেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ভারতের রান তখন ৫ উইকেটে ১৩৩। সেখান থেকে দলের রান দেড় শর ওপারে নিতে সাহায্য করেন রিচা ঘোষ। তাঁর ১৪ বলে ৩০ রান আসে ৪টি চার ও ১ ছক্কায়। ৪ ওভারে ৩৬ রানে ২ উইকেট নেওয়া কাভিশা ছিল শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত নারী দল: ২০ ওভারে ১৬৫/৬

(মান্ধানা ৬০, রিচা ৩০,  জেমিমা ২৯; কাভিশা ২/৩৬, সাচিনি ১/২০ প্রাবোধানি ১/২৭,  আতাপাত্তু ১/২৮)।

শ্রীলঙ্কা নারী দল: ১৮.৪ ওভারে ১৬৭/২ (হার্শিতা ৬৯*, আতাপাত্তু ৬১, কাভিশা ৩০*; রেদিপ্তি ১/৩০)

ফল: শ্রীলঙ্কা নারী দল ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা: হার্শিতা সামারাবিক্রমা।

টুর্নামেন্টসেরা: চামারি আতাপাত্তু।