মিডল-অফ লাইনের বল। দুশমন্থ চামিরার সেই বলটিকে তাওহীদ হৃদয় লেগ সাইডে ঠেলে নিতে চাইলেন ১ রান। তবে যা চাইলেন, তা আর হয়নি, ঠিকঠাকভাবে সংযোগ ঘটাতে না পারায় বল চলে যায় বোলার চামিরার কাছে।
তাতে ক্ষোভে, হতাশায় হৃদয় যে চিৎকার করেন, তা হয়তো ২২ গজ ছাপিয়ে পাল্লেকেলের গ্যালারিতে উপস্থিত থাকা দর্শকেরাও শুনতে পেয়েছেন। গতকালের ম্যাচে এমন চিৎকারে বোঝার উপায় নেই যে এই চামিরার আগের দুই বলেই দুটো চার মেরেছেন হৃদয়।
টানা দুই চারের পর এক ডট হওয়ার পর হৃদয়ের এই চিৎকারকেই লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে এই বাংলাদেশির পারফরম্যান্সের প্রতিচ্ছবি হিসেবে ধরা যায়। যেখানে আছে রানের জন্য তীব্র ক্ষুধা, ডট না খেলার প্রতিজ্ঞা ও দেশের বাইরের প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে প্রতিভা দেখিয়ে দেওয়ার তাড়না।
এসবের কারণেই কারণেই লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হৃদয়। এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচ খেলে হৃদয় করেছেন ১৪১ রান, গড় ৪৭। স্ট্রাইক রেটটাও কিন্তু মোটেই মন্দ নয়—১৩৫.৫৭। ভাবতে পারেন, লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে এ আর এমন কী!
তবে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে এলপিএলে হৃদয়ের এমন শুরুকে আপনি বাহবা দিতে বাধ্য হবেন। প্রথমত, এটি ২২ বছর বয়সী হৃদয়ের প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। চলতি বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া এই ক্রিকেটার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১৭টি। অর্থাৎ বয়স আর ম্যাচ—কোনো বিবেচনাতেই হৃদয়কে অভিজ্ঞ বলার সুযোগ নেই।
আর লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে বোলারদের মানও খারাপ নয়। চামিরা, হাসারাঙ্গা, আকিলা ধনঞ্জয়ারা, মাথিশা পাতিরানারা তো আছেনই, এই লিগে খেলছেন নাসিম শাহ, মুজিব উর রহমান, নুর আহমেদ, সাকিব আল হাসানের মতো বোলাররা। শ্রীলঙ্কার উইকেটও বোলারদের দিচ্ছে বাড়তি সুবিধা।
তাই তাদের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদেরও রান পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রীলঙ্কান কুশল মেন্ডিস, ধনঞ্জয় দি সিলভাও সমান ৪ ম্যাচে খেলে ১২৪ রানের বেশি করতে পারেননি। এমনকি বাবর আজমও রান করেছেন ১০৭, যদিও পাকিস্তান অধিনায়ক হৃদয়ের চেয়ে ১ ম্যাচ কম খেলেছেন। তবে গড় ও স্ট্রাইক রেট দুটোই হৃদয়ের চেয়ে কম।
বি লাভ ক্যান্ডির বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচ বাদে প্রায় প্রতি ম্যাচেই দলের মোট রানে ভালো অবদান রেখেছেন হৃদয়। গতকাল ২২ বল খেলে আউট হয়ে গেছেন ১৯ রানে। এ ছাড়া প্রতি ম্যাচেই ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি। জাফনার হয়ে অভিষেক ম্যাচে ৩৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলা হৃদয় দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ২০ বলে ২৪। পরের ম্যাচে সাকিবের গলের বিপক্ষে হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ২৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস।
হৃদয় এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা টুর্নামেন্টজুড়ে ধরে রাখতে পারতেন কি না, সেটা জানার উপায় নেই। কারণ, হৃদয়কে পুরো টুর্নামেন্টে পাচ্ছে না জাফনা। হৃদয় মূলত খেলছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের বদলি হিসেবে। শোয়েব জাফনার দলে যোগ দেবেন ৮ আগস্ট। হৃদয়ের অনাপত্তিপত্রও দেওয়া আছে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। সূচি অনুযায়ী ৮ তারিখ পর্যন্ত হৃদয় আর দুটো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন। তাই দারুণভাবে শুরু করা এই টুর্নামেন্টের শেষটা হৃদয় কীভাবে করতেন, সেটা দেখার সুযোগ হচ্ছে না সমর্থকদের।