দুই দিকে দুই ডানা প্রসারিত। মাঝখানে একটি পায়রার মুখ। নাম তার ‘ডানা ৩৬’। একাদশ বিপিএলের মাসকট, বাংলাদেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে যেটিকে নতুনত্বই বলতে হবে। বিপিএলে মাসকট থাকছে এই প্রথম, থাকবে থিম সংও।
আজ সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব–২০২৫’–এর ঘোষণামঞ্চে উন্মোচন করা হয়েছে বিপিএলের মাসকট ‘ডানা ৩৬’।
জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
প্রধান অতিথি যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে এতে উপস্থিত ছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ হিরুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশ দল ও নারী দলের কয়েকজন ক্রিকেটার।
অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, ‘ডানা ৩৬’ এর গড়ন, রং ও অঙ্গভঙ্গি স্বাধীনতা, শান্তি, মুক্তি, তারুণ্য, প্রাণবন্ততা, উৎসব এবং সীমাহীন সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। ‘ডানা’ এখানে স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। এর দুই পাশে থাকা ১৮টি করে ৩৬টি রঙিন পালক ‘৩৬ জুলাই’ ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অবিস্মরণীয় স্মৃতিকে তুলে ধরতে।
বিপিএল যে এবার একটু অন্য রকম হবে, তা আগেই জানিয়েছিল বিসিবি। জুলাই–আগস্টের ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে মূল ভাবনায় রেখে টুর্নামেন্টটিকে আরও বেশি জনসম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং সেটি এসেছে খোদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে থেকে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও বিপিএলের সহযোগিতায় ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব–২০২৫’ মূলত সেই কার্যক্রমকেই এগিয়ে নেবে। ‘ডানা ৩৬’–এ ভর করে বিপিএলের আবহ ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে, এটাই প্রত্যাশা আয়োজকদের। অনুষ্ঠানে আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, বিসিবি ছাড়াও এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকবে সরকারের ৭টি মন্ত্রণালয়।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানে অনুষ্ঠেয় তারুণ্যের উৎসবের আওতায় থানা এবং জেলা পর্যায়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উৎসব হবে। ক্রিকেট ছাড়াও এতে থাকবে ফুটবলসহ অন্যান্য খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, ডিসপ্লে ও পুরস্কার বিতরণী। পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে বর্জ্যশূন্য ক্রিকেট ম্যাচ ছাড়াও এবারের বিপিএল অংশীদারত্ব, ক্রয় বাজেট এবং উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতাকেও অগ্রাধিকার দেবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, ৩০ ডিসেম্বর শুরু বিপিএল দিয়ে যাত্রা করে তারুণ্যের উৎসবের শেষটা হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব–২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের ফাইনাল দিয়ে।
তারুণ্যের উৎসব ঘোষণার অনুষ্ঠানেও আজ দেখা গেছে বিভিন্ন খেলার অনেক পরিচিত মুখ। জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন, ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা, ক্রিকেটার জাহানারা আলম, সালমা খাতুনরা ছাড়াও সেখানে ছিলেন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আরও অনেকে।
তাঁদের মধ্যে অন্যতম বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল, ফুটবলার তপু বর্মন ও ফয়সাল আহমেদ, ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার, বিদ্যুৎ কুমার সাহা, সাবেক অ্যাথলেট সুফিয়া খাতুন, সাবেক টেবিল টেনিস তারকা জোবেরা রহমান, সাবেক শুটার আসিফ হোসেন খান ও অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। এ ছাড়া ছিলেন কয়েকটি স্কুল–কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
শুধু মাসকটই নয়, একাদশ বিপিএলের অনেক কিছুতেই স্মরণ করা হবে জুলাই–আগস্টের ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে। নিজের বক্তব্যে সেসবের একটি তালিকায়ও দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। শহীদ মুগ্ধর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে গ্যালারিতে দর্শকদের জন্য থাকবে বিনা মূল্যে পানির ব্যবস্থা।
খেলা দেখতে এসে দর্শকেরা অনুদান দিতে পারবেন জুলাই ফাউন্ডেশনে। গ্যালারির একটি অংশে থাকবে ‘জিরো ওয়েস্ট জোন’। টুর্নামেন্টের তিন আয়োজক শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ২৩, ২৫ ও ২৭ ডিসেম্বর হবে কনসার্ট। থাকবে দর্শকদের সম্পৃক্ত করা আরও অনেক আয়োজন ও বিনোদন। দর্শকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে থাকবে ই–টিকিটের ব্যবস্থাও।