ম্যাচে ব্যাটিং করছেন না, খেলছেন মূলত বোলার হিসেবেই। তবে চোখের সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই অনুশীলনে লম্বা সময় ব্যাটিং করছেন সাকিব।
সাকিব! সাকিব! ভুয়া! ভুয়া!—২৬ জানুয়ারি খুলনা টাইগার্স-রংপুর রাইডার্সের ম্যাচে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারি এভাবেই ‘স্বাগত’ জানিয়েছিল সাকিব আল হাসানকে। সিলেটের দর্শকদের তাঁকে এভাবে দুয়ো দিতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। ক্রিকেটারদের এক আড্ডায় তো এ নিয়ে বিরাট আলোচনা। এক ক্রিকেটার বেশ অবাক হয়েই বলেছেন, ‘সাকিব ভাইকে কীভাবে ভুয়া বলতে পারে!’
কাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস-রংপুরের ম্যাচে সেই সিলেটের দর্শকেরাই গলা ফাটিয়েছেন ‘সাকিব! সাকিব!’ চিৎকারে। কয়েক দিন আগের ‘ভুয়া’ সাকিবকে কাল বেশ দর্শকপ্রিয় মনে হলো। দুটি ম্যাচের মধ্যে পার্থক্য শুধু দলের জয়-পরাজয়ে। খুলনার বিপক্ষে ম্যাচে সাকিবের দল হেরেছে আর গতকালের ম্যাচে ৫ উইকেটে ১৬৫ রান করে কুমিল্লাকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর।
মাঠে সাকিবকে ঘিরে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া যেমন দুই রকম, সিলেটেও দুই রকম দেখা যাচ্ছে সাকিবকে। চোখের সমস্যার কারণে সাকিবকে ম্যাচ খেলতে হচ্ছে মূলত বোলারের ভূমিকায়। তাঁর ব্যাটিং অর্ডার পেছানো হচ্ছে প্রতি ম্যাচেই। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচে তবু শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল সাকিবের।
তবে ম্যাচে ব্যাটিং থেকে দূরে থাকাটাই সিলেটে সাকিবের একমাত্র ছবি নয়। অনুশীলনে বরং ভিন্ন ছবিই দেখা যাচ্ছে। মাঠের বাইরে তাঁর যত সংগ্রাম সব তো ব্যাটিংকে ঘিরেই! রংপুর রাইডার্সের অনুশীলন থাকুক আর না থাকুক, সাকিব অনুশীলনে আসছেন। লম্বা সময় ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছেন। চোখের সমস্যা নিয়েও কীভাবে আপাতত ব্যাটিংটা চালিয়ে যাওয়া যায়, সে উপায় খুঁজছেন। পাশাপাশি চিকিৎসাও চলছে। যেহেতু অন্য কোনো চিকিৎসায় আপাতত যাওয়া হচ্ছে না, চিকিৎসা বলতে চোখে ড্রপ দেওয়াই। ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকেও সাকিবকে ব্যাটিংয়ের জন্য কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে না। শেখ মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ নবী, আজমতউল্লাহ ওমরজাই থাকায় পুরো সাকিবকে না পেলেও রংপুরকে অলরাউন্ডারদের দলই বলা যায়। তাদের ব্যাটিং লাইনআপ দীর্ঘ, বোলারও আছে যথেষ্ট।
সাকিবকে ব্যাটিংয়ের চাপ না দিয়ে বরং বোলিংটাকেই কাজে লাগানোর পরিকল্পনা দলের। আর সাকিব তো শুধু বোলার হিসেবেও যেকোনো একাদশে জায়গা করে নেবেন। রংপুরের ব্যাটিং উপদেষ্টা শাহরিয়ার নাফীসই সেদিন মজা করে বলছিলেন, ‘সাকিব তো আইপিএলেই বোলার হিসেবে খেলে।’ খুব একটা ভুল বলেননি নাফীস। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে বোলার সাকিবের শিকার ৪৬৯ উইকেট। সর্বকালের সেরা টি-টোয়েন্টি উইকেটশিকারি বোলারদের তালিকায় সাকিব আছেন পাঁচে। তাঁর ওপরে আছেন ডোয়াইন ব্রাভো, রশিদ খান, সুনিল নারাইন ও ইমরান তাহির। চারজনেরই পরিচয়পত্রে ‘বোলার’ শব্দটা মোটা হরফে লেখা থাকবে। সেরা পাঁচে পুরোদস্তর অলরাউন্ডার একমাত্র সাকিবই।
সাকিব আপাতত শুধু বোলিং করলেও ব্যাটিং থেকে সাময়িক বিরতিতে তাঁর অলরাউন্ডার পরিচয় মুছে যাবে না স্বাভাবিক। কাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসানও তা–ই বললেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, সাকিব ভাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। তিনি এখনো অলরাউন্ডার। চোখের সমস্যার কারণে হয়তো একটু ভুগছেন। তবে আমার মনে হয়, আমাদের দলের জন্য তাঁর মাঠে উপস্থিত থাকাটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
ম্যাচের অবস্থা একটু অন্য রকম হলে অবশ্য কাল সাকিবকে টপ অর্ডারেও দেখা যেতে পারত। প্যাড, হেলমেট পরে শুরুর দিকেই ডাগআউটে এসেছিলেন তিনি। তবে টপ অর্ডারে খেললে তাঁর কাজ হতো ক্রিজে টিকে থেকে জুটি গড়ার কাজে সহায়ক ভূমিকা রাখা। মাঝের ওভারে ফজলে রাব্বি ও শামীম হোসেন টিকে যাওয়ায় তার আর দরকার হয়নি বলে জানিয়েছেন নুরুল, ‘দলের পরিকল্পনা ছিল, যদি দ্রুত উইকেট পড়ে যায়, তাহলে হয়তো সাকিব ভাই নামতেন ব্যাটিংয়ে। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের জন্যই পরিকল্পনাটা করা হয়েছিল।’
সব ঠিক থাকলে আপাতত শুধু বোলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ সাকিবকে পুরোদমে ব্যাটিংয়ে ফিরতে দেখা যেতে পারে বিপিএলের শেষাংশে। রংপুর অধিনায়কই জানালেন সেটা, ‘সাকিব ভাই অনুশীলন করছেন। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও নিজে নিজে ব্যাটিং অনুশীলন করছেন। সেখান থেকে আত্মবিশ্বাসটা পাচ্ছেন। তার চোখে যে সমস্যাটা হচ্ছে, ওটার আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। ইনশা আল্লাহ টুর্নামেন্টের শেষ দিকে সাকিব ভাইকে আমরা পুরোদমে ব্যাটিংয়ে দেখতে পাব।’
রংপুর রাইডার্স তো বটেই, বাংলাদেশের ক্রিকেটও আছে সে অপেক্ষায়।