পুরোনো গল্পই নতুন করে লেখা হলো হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে। গত পরশু এক জুটিতেই বাংলাদেশের হার নিশ্চিত করেছিল জিম্বাবুয়ে। আজও এক জুটিতেই সিরিজ জিতে নিল জিম্বাবুয়ে। রান তাড়ার ‘রাজা’ সিকান্দার রাজা পরশুও ছিলেন নেতৃত্বে, আজও থাকলেন সেনাপতি হয়ে। প্রথম ম্যাচে ইনোসেন্ট কাইয়া ছিলেন রাজার সঙ্গী। আজ রেজিস চাকাভা। কাইয়ার মতো চাকাভারও প্রথম ওয়ানডে শতক এল আজ।
গল্পের বাকি অধ্যায়গুলো ছিল আগের মতোই—বাংলাদেশ দলের নির্বিষ ফিল্ডিং, হতশ্রী বোলিং আর কৌশলের ফাঁকফোকর। সারমর্ম—২০১৩ সালের পর টানা পাঁচ ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাইয়ে পর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতল জিম্বাবুয়ে। সেটিও ১৫ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে। উল্টো বাংলাদেশ এখন দাঁড়িয়ে ধবল ধোলাই হওয়ার পথে।
খেলা না দেখে থাকলে যে কেউই ধাক্কা অনুভব করতে পারেন। কারণ খেলা কাভার করতে আসা জিম্বাবুয়ের সাংবাদিকেরাও নিজ দলের এই অর্জন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। জিম্বাবুয়ের স্থানীয় ভাষায় উচ্ছ্বাসের ফাঁকে ফাঁকে ইংরেজিতে বারবার ‘আনবিলিভেবল’ শব্দটা বলতে শোনা যাচ্ছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডের ধবলধোলাই দেখেই যে অভ্যস্ত স্বাগতিকেরাও! এবার বাংলাদেশকেই সিরিজ হারের স্বাদ ফিরিয়ে দিতে পারা স্বাগতিকদের জন্য মধুর প্রতিশোধের মতোই।
অথচ আজ প্রথম ম্যাচের চেয়েও বাজে ছিল জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরুটা। বাংলাদেশের ২৯০ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে হাসান মাহমুদের আগুনে স্পেল কাঁপিয়ে দেয় স্বাগতিকদের টপ অর্ডার। প্রথম স্পেলে ১৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি, যার মধ্যে একটি গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কাইয়ার। তাইজুল ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্রেক থ্রুতে জিম্বাবুয়ে ৪৯ রানেই হারিয়ে বসেছিল ৪ উইকেট।
রাজা-চাকাভার প্রতিরোধের শুরুটা সেখান থেকেই। দুজনের জুটিতে দর্শকদেরও যেন বিরাট অবদান। রোববার ছুটির দিনের সকালে মাঠ ছিল প্রায় ফাঁকা। কিন্তু বিকেল হতে না হতেই হারারের ক্রিকেট পাগল দর্শকেরা মাঠে হাজির। স্বাগতিকদের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ততক্ষণে উইকেটে থিতু। মাঠ ভর্তি দর্শকদের জোড়া শতক উপহার দিয়ে উদ্যাপনের উপলক্ষ হয়েছেন রাজা ও চাকাভা। ৭৩ বলে জিম্বাবুয়ের দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করে মাঠ গরম করে তোলেন অধিনায়ক চাকাবা। ৭৫ বলে ১০২ রান করে আউট হওয়ার আগে ১০টি চার ও ২টি ছক্কা মেরেছেন তিনি।
অন্যদিকে রাজা যেন শেষটা দেখার প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। ১২৭ বলে ১১৭ রানের ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায়। সঙ্গে টনি মুনয়াংঙ্গোর ১৫ বলে অপরাজিত ৩০ রানের ইনিংসটি ১৫ বল বাকি থাকতেই জিম্বাবুয়ের জয় নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুর গল্পটাও ছিল জিম্বাবুয়ের মতোই দাপুটে। তামিম ইকবাল ছিলেন তাতে সম্মুখসারির নেতা। জিম্বাবুয়ের বোলারদের বাজে বলগুলোকে বাউন্ডারিতে পাঠাতে দ্বিধা করেননি একবারও। পাওয়ারপ্লেতে রয়েসয়ে খেলা তামিমকেই দেখতে অভ্যস্ত বাংলাদেশ। আজ সেই খোলস থেকে বেরিয়ে এসে অতীত মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক। ৪৩ বলে ফিফটি, পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ ৬২ রান— এসবই তামিমের সৌজন্যে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশ ইনিংসের এমন শুরুটা নষ্ট হয় নিজেদেরই ভুলে। তামিম বিশাল বাউন্ডারি পার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তানাকা চিভাঙ্গার বলে ক্যাচ আউট হন তিনি। লিটন দাসের না থাকায় তামিমের সঙ্গে উদ্বোধনে সুযোগ পাওয়া এনামুল হক, তিনে নামা নাজমুল হোসেন ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম— প্রত্যেকেরই সুযোগ ছিল তামিমের গড়ে দেওয়া মঞ্চে দলের রান বড় করার। ইনিংস দীর্ঘ না করতে পারার ব্যর্থতা নিয়ে তিনজনই মাথা নিচু করে ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে।
১৪৮তম ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দলে যখন বিপদের কালো ছায়া, তখন শুরু হয় মাহমুদউল্লাহর লড়াই। মাঝের ওভারে তিনি বাংলাদেশ ইনিংসটাকে পথ দেখিয়েছেন, পৌঁছে দিয়েছেন লড়াকু স্কোরে। আফিফ হোসেন ছিলেন মাহমুদউল্লাহর লড়াইয়ের সঙ্গী। ৪১ বলে ৪১ রান করে বাংলাদেশ ইনিংসের গতির সঞ্চার করেছে এই বাঁহাতি। ৪৪তম ওভারে তাঁর আউটে বাংলাদেশের রান সংগ্রহের গতিতে কিছুটা হলেও ভাটার টান পড়ে। তবে সেটি পুষিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের ৮৪ বলে ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংসের সৌজন্যে বাংলাদেশ ২৯০ রানে পৌঁছায়।
শেষ পর্যন্ত হারারের ‘সিকান্দার’ আর চাকাবার রেকর্ড জুটিতেই ২০১৩ সালের পর এই প্রথম জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হার বাংলাদেশের।