অ্যান্ডি বলবার্নি ৫ রানের আক্ষেপ করতেই পারেন। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির এত কাছে এসে থামলে আক্ষেপ তো থাকারই কথা তাঁর। আক্ষেপ করতে পারেন পল স্টার্লিংও। যেভাবে খেলছিলেন, ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটি মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। তাঁকে থামতে হয় চোট পেয়ে। তবে গলে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে দল হিসেবে কোনো আক্ষেপ থাকার কথা নয় আয়ারল্যান্ডের।
প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর ঠিক পরের টেস্টের প্রথম দিনই যে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাঁরা। বলবার্নি-স্টার্লিংয়ের পর লরকান টাকারের ফিফটিতে প্রথম দিনই আয়ারল্যান্ড ৪ উইকেটে তুলেছে ৩১৯ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা টাকার দিনশেষে অপরাজিত আছেন ৭৮ রানে, তাঁর সঙ্গী কার্টিস ক্যাম্ফার ব্যাটিং করছেন ২৭ রানে। দুজনের ৮৭ রানের জুটি অবিচ্ছিন্ন এখনো।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আয়ারল্যান্ডের হয়ে জেমস ম্যাককলামের সঙ্গে ওপেনিংয়ে আসেন পিটার মুর, সে জুটি টেকেনি ৪ ওভারও। চতুর্থ ওভারে আসিতা ফার্নান্ডোর ফুল লেংথের বলে এলবিডব্লু হন মুর, শ্রীলঙ্কা সে উইকেট পায় রিভিউ নিয়ে। প্রথম ঘণ্টায় ফেরেন ম্যাককলামও, প্রবাত জয়াসুরিয়ার বলে উইকেটের পেছনে ভালো ক্যাচ নেন সাদিরা সামারাবিক্রমা।
অধিনায়ক বলবার্নি ও হ্যারি টেক্টরের জুটি দ্রুত ২ উইকেটের চাপ সামাল দেয় অনেকটাই। বলবার্নি শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক, প্রথম ২৮ বলেই করেন ৩০ রান। আইরিশ অধিনায়ক ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেন মাত্র ৪৩ বলেই, তাঁর মাইলফলক আসে রমেশ মেন্ডিসকে টানা দুই চারে। সে সময় বলবার্নি ও টেক্টর টানা ৩ ওভারে দুই স্পিনার জয়াসুরিয়া ও মেন্ডিসকে মারেন ৬টি চার।
অতি-আক্রমণাত্মক মানসিকতা অবশ্য বিপদ ডেকে আনে টেক্টরের, জয়াসুরিয়াকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন দিনেশ চান্ডিমালের হাতে। এর আগে একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচেছিলেন এলবিডব্লু থেকে। শেষ পর্যন্ত তিনি থামেন ১৮ রান করেই, বলবার্নির সঙ্গে তাঁর জুটিতে আসে ৪৬ রান।
নেমেই আক্রমণে যান স্টার্লিংও। মুখোমুখি প্রথম বলেই সুইপের চেষ্টা ব্যর্থ হলেও তৃতীয় বলে স্লগ সুইপে জয়াসুরিয়াকে ছক্কা মেরে রানের কলাম শুরু করেন তিনি। মধ্যাহ্নবিরতিতে আয়ারল্যান্ড যায় ৩ উইকেটে ১০৬ রান নিয়ে।
দ্বিতীয় সেশনে আয়ারল্যান্ড কাটায় দারুণ এক সময়-বলবার্নি ও স্টার্লিংয়ের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে। একটা সময় নিয়মিত বাউন্ডারি আসতে থাকে, শ্রীলঙ্কান স্পিনাররাও সে সময় ধারাবাহিকভাবে চাপ তৈরি করে যেতে পারেননি। স্টার্লিং টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পান ৬৪ বলে। চা-বিরতির আগে অবশ্য কমে আসে রানের গতি, সে সময় ৬ ওভারে আসে মাত্র ৭ রান। তবে সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়েই ৯৩ রান তোলে আয়ারল্যান্ড, সেঞ্চুরির সুবাস নিয়ে বিরতিতে যান বলবার্নি ও স্টার্লিং দুজনই।
সে সেঞ্চুরি অবশ্য দুজনের কেউই পাননি আজ। মাংসপেশীর টান নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় স্টার্লিংকে, বিরতির পর তৃতীয় ওভারেই। লরকান টাকার এসে ইতিবাচক ছিলেন, কিন্তু বলবার্নির সঙ্গে জুটিটা বড় হয়নি। চার মেরে ৯৫ রানে যাওয়া বলবার্নি আউট হন অদ্ভুতভাবে-মেন্ডিসকে সুইপ করতে চেয়েছিলেন, বল তাঁর ব্যাটের পিঠে লেগে যায় স্লিপে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে। আয়ারল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান হলেন তিনি।
বলবার্নি ওভাবে ফিরলেও ইতিবাচকই থাকেন টাকার। কার্টিস ক্যাম্ফারও ভালো সঙ্গ দেন তাঁকে। ৮০ ওভারের পরই দ্বিতীয় নতুন বল নেয় শ্রীলঙ্কা, টাকার ও ক্যাম্ফার বেছে নেন আক্রমণেরই পথ। বিশ্ব ফার্নান্ডোকে ফ্লিক করে চার মেরে ৭১ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন টাকার। টাকার বাউন্ডারি পান নিয়মিতই, সুযোগ পেলে শট খেলেন ক্যাম্ফারও। টাকারের বিপক্ষে দুটি রিভিউও খরচ করে ফেলে মরিয়া শ্রীলঙ্কা।