অন্য দলগুলোকে অনেকবারই এই পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে নিজেরা এমন অসহায়-উদ্বিগ্ন দর্শক হয়ে বোধ হয় থাকেনি এর আগে কখনো। টেনশন নিয়ে দেখতে হয়নি অন্য কোনো ম্যাচ। তুমুল সমর্থক হয়ে যেতে হয়নি সেই ম্যাচের কোনো এক দলের।
ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার পর সেমিফাইনালে উঠতে এখন বাংলাদেশের মুখ চেয়ে থাকতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকে। এতটাই যে, বাংলাদেশের প্রবল সমর্থক হয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শ। ম্যাচশেষে হার্শা ভোগলে পরিস্থিতিটা মনে করিয়ে দিতেই হেসে বলেছেন, ‘কাম অন বাংলাদেশ!’
এই বাংলাদেশপ্রীতির কারণ, অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল-ভাগ্য এখন নির্ভর করছে বাংলাদেশের ওপর। সোমবার সেন্ট ভিনসেন্টের রাত আর বাংলাদেশের মঙ্গলবার সকালে সুপার এইটের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে আফগানিস্তানের। আফগানিস্তান জিতলেই অস্ট্রেলিয়ার আশা শেষ। আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো আফগানিস্তান দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে উঠে যাবে সেমিফাইনালে।
আফগানিস্তানের কাছে অস্ট্রেলিয়ার পরাজয় যে বাংলাদেশের জন্যও ক্ষীণ একটা আশা জাগিয়ে তুলেছিল, সেটির কী হলো? বাংলাদেশ জিতলে তো অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশেরও পয়েন্ট হবে ২। তাহলে বাংলাদেশের জয় চাইছেন কেন মিচেল মার্শ।
কাগজে-কলমে বাংলাদেশেরও সম্ভাবনা আছে। হয়তো শুধু কাগজে-কলমেই। বাস্তবে তা অনেক কঠিন। অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান দুই দলকেই নেট রান রেটে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে উঠতে হলে বাংলাদেশকে জিততে হবে কমপক্ষে ৬২ রানে। কঠিন না বলে কাজটাকে যে অসম্ভবই বলে ফেলা যায়, তা বোঝা যাবে একটা উদাহরণ দিলে। ধরুন বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করে ১৪০ রান করল। এরপর আফগানিস্তানকে আটকে রাখতে হবে ৭৮ রানে। পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করলে তো আর ৭৮ রানে আটকে রাখা কঠিন। তার মানে আফগানিস্তানকে অলআউট করে দিতে হবে ৭৮ রানের মধ্যে। আর যদি আফগানিস্তান প্রথমে ব্যাটিং করে ১৪০ করে, তাহলে বাংলাদেশকে তা টপকে যেতে হবে ১২.৪ ওভারের মধ্যে।
এটা যে প্রায় অসম্ভব, তা জানেন বলেই মিচেল মার্শ বাংলাদেশের এমন সমর্থক হয়ে গেছেন। আফগানিস্তান জিতলেই তো সব শেষ। বাংলাদেশের জয় চাইছেন তাই মনেপ্রাণে। সেই জয় যে নেট রানরেটে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে যাওয়ার মতো হবে না, এই বিশ্বাস তো তাঁর থাকাটাই স্বাভাবিক।
আফগানিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে জয়-পরাজয়ের হিসাবে বাংলাদেশই একটু পিছিয়ে। ১১ ম্যাচের ৫টিতে জয়, ৬টিতে হার। তবে বিশ্বকাপে—তা সেটি ৫০ ওভারেরই হোক বা ২০ ওভারের—বাংলাদেশ কখনো আফগানিস্তানের কাছে হারেনি।
সুপার এইটে এসে সত্যিই যেন জেগে উঠেছে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অর্থহীন একটা ম্যাচও হয়নি। শেষ ম্যাচটা নিয়েও এখন সবার তুমুল আগ্রহ। খেলছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান, তবে এটির দিকে তাকিয়ে আছে বাকি সবাই। হ্যাঁ, শুধু অস্ট্রেলিয়াই নয়, সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলা অন্য দুই দলও। দক্ষিণ আফ্রিকা কি আর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেমিফাইনাল খেলতে চাইবে, বা ভারত-ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে জয়ী দল চাইবে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে পেতে?
যে দলের সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনাই এখন সুতোর ওপর ঝুলছে, সেই দলকে নিয়ে এমন ভাবনায় মনে হয় না কেউ অবাক হবেন। দলটার নাম যে অস্ট্রেলিয়া! তা এই মুহূর্তে তাদের অবস্থা যতই করুণ হোক না কেন!