দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বিশ্বকাপ ইতিহাস মানেই একটার পর একটা দুঃখগাথা! ব্যাট ফেলে রেখে দৌড়, বৃষ্টির হানায় স্বপ্নভঙ্গ আর ভুল অঙ্ক কষা—এভাবেই রচিত হয়েছে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার একের পর এক দুঃখের গল্প।
দুয়ারে যখন আরেকটি বিশ্বকাপ, তখন অতীতের সব দুঃখ ভুলে বা বেদনার স্মৃতিগুলো স্মরণ করে আবার আশায় বুক বাঁধছে প্রোটিয়ারা। আবার তারা স্বপ্ন দেখছে ভালো কিছুর।
দক্ষিণ আফ্রিকানদের আশা জোগাচ্ছে বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটি। যে সিরিজে তারা ২–০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও জিতেছে ৩–২ ব্যবধানে। দলটির ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলার মনে করেন, এবারের বিশ্বকাপে প্রোটিয়ারা ভালো কিছু করতে পারে।
৩৪ বছর বয়সী মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মিলার বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে বিশেষ কিছু করতে পারি। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা এখনো বিশ্বকাপ জিতিনি। তাই লুকানোর কিছু নেই।’
বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার জিততে না পারার বিচিত্র সব কারণ আছে।
১৯৯২ বিশ্বকাপের বৃষ্টিবিঘ্নিত সেমিফাইনালে ১ বলে ২২ রান করতে হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনাল ম্যাচটি টাই হয়েছিল। সেই ম্যাচে অহেতুক এক দৌড় দিয়েছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। রানআউট হয়ে যান অন্য প্রান্তের সঙ্গী অ্যালান ডোনাল্ড, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ। ক্লুজনার–ডোনাল্ডের ভুল বোঝাবুঝিতে দুই যুগ আগের সেই সেমিফাইনাল টাই হয়। কিন্তু সুপার সিক্সে মুখোমুখি লড়াই ও নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া।
এরপর ২০০৩ বিশ্বকাপে প্রথম পর্বের বৈতরণীই পেরোতে পারেনি প্রোটিয়ারা। সেবার বৃষ্টিবিঘ্নিত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের শেষ দিকে জয়ের জন্য কত বলে কত রান লাগবে, সেই হিসাব গুলিয়ে ফেলেছিল তারা। ড্রেসিংরুম থেকে উইকেটে থাকা ব্যাটসম্যান মার্ক বাউচারকে ভুল বার্তা পাঠানো হয়েছিল। অন্যপ্রান্তে ছিলেন ক্লুজনার
অতীতের এসব ভুতুড়ে ভুলগুলো নিয়ে পড়ে থাকতে রাজি নন মিলার। তিনি বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি ওইসব বিষয় কাঁধে নিয়ে বাঁচি না। অতীত অতীতই। এর প্রভাব আমার ওপরে পড়ে না। বিষয়টা হলো, আপনার সামনে কী আছে...পরের বল, আপনার পরের মুহূর্ত।’
দক্ষিণ আফ্রিকা এবার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ৪ নম্বর দল হিসেবে। ব্যাটসম্যানদের ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের সেরা ১৫–তে তাদের চারজন ব্যাটসম্যান আছেন। আর এই দলে সবার মানসিকতাই মিলারের মতো, তিনি নিজেই এমনটা বলেছেন।
সব মিলিয়ে আত্মবিশ্বাসী মিলার, ‘আমরা এটাকে (এবার বিশ্বকাপ) ইতিহাস গড়ার সুযোগ হিসেবে দেখছি। কী এক দুর্দান্ত সুযোগ এটা! ভালো খেলতে পারলে আমাদের খুব ভালো সুযোগ আছে।’ এ ক্ষেত্রে মিলারকে আশা জোগাচ্ছে সাম্প্রতিক ফর্ম, ‘চার বছর ধরে আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে আসছি।’