কেপটাউনের ফাইনালে ১৯ রানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া
কেপটাউনের ফাইনালে ১৯ রানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া

দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন ভেঙে হ্যাটট্রিক শিরোপা অজেয় অস্ট্রেলিয়ার

এক দলের সামনে ছিল টানা তৃতীয় ও সব মিলিয়ে ষষ্ঠ শিরোপার হাতছানি। এখনো যদি অমরত্ব না পাওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সেটি অর্জনের সুযোগ। আরেক দল অপেক্ষায় ছিল নতুন ইতিহাস গড়ার। শুধু নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নয়, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের বাইরে দেশটির কোনো ক্রিকেট দলের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল। ১৩ হাজার দর্শক নিয়ে কেপটাউনের নিউল্যান্ডস অপেক্ষায় ছিল উৎসবে মেতে ওঠার। শেষ পর্যন্ত সেটি হতে দিল না অজেয় অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৯ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছে মেগ ল্যানিংয়ের দল।

ফাইনালে লড়াইটা হওয়ার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ের। প্রোটিয়াদের সেই বোলিং আক্রমণের সামনেই বেথ মুনির ৫৩ বলে ৭৪ রানের ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৫৬ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। পরে তাদের বোলারদের সমন্বিত পারফরম্যান্সে ম্লান হয়ে গেছে লরা ভলভার্টের ৪৮ বলে ৬১ রানের লড়াকু ইনিংস, শেষ হয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার শিরোপা-স্বপ্নও।

জিততে হলে বিশ্বকাপের নতুন রেকর্ডই গড়তে হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে, এর আগে কোনো দলই ফাইনালে জেতেনি ১৪৯ রানের বেশি লক্ষ্যে ব্যাটিং করে। তার ওপর নিউল্যান্ডসে দুটি সেমিফাইনালই হয়েছে এ পিচে, যেখানে ইনটু দা পিচ বল ছিল মোক্ষম অস্ত্র। অস্ট্রেলিয়া পাওয়ার প্লেতে অনুসরণ করে সেটিই। সাফল্যও আসে তাতেই। সেমিফাইনালের ম্যাচসেরা টাজমিন ব্রিটস ডার্সি ব্রাউনকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন পঞ্চম ওভারের শেষ বলে। আগের দুই ম্যাচে ওপেনিং জুটিতে ১১৭ ও ৯৬ রান তোলার পর এবার তাতে আসে মাত্র ১৭ রান।

বৃথা গেছে ভলভার্টের ইনিংস

মুখোমুখি প্রথম বলেই মেগান শুটকে চার মেরে যেন একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনে আসা মারিজান কাপ। তবে ক্রমেই বাড়তে থাকা প্রয়োজনীয় রান রেট তাঁকে স্থির হতে দেয়নি। অফ স্পিনে রেকর্ডটা সুবিধার নয় তাঁর, গার্ডনারের বলেই শেষ পর্যন্ত ১০ বলে ১১ রান করে শর্ট থার্ডম্যানে লিডিং-এজে ধরা পড়েন তিনি। প্রথম ১৫ বলে ৭ রান করা লরা ভলভার্ট গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন ঠিকই, পরের ১৫ বলে করেন ২৫ রান। তবে ১০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজনীয় রান রেট ছিল ১০.৫০।

অধিনায়ক সুনে লুসের রানআউটে সে চাপ আরও বাড়ে প্রোটিয়াদের। তবে প্রায় নিশ্চুপ নিউল্যান্ডসকে এরপর জাগিয়ে তোলেন ভলভার্ট। ১৩ থেকে ১৫—এ ৩ ওভারে আসে ৩৯ রান। এর মধ্যেই ফিফটি পূর্ণ করেন ভলভার্ট, ৪৩ বলে। ক্লোয়ি ট্রাইওনের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ৫০ রান আসে মাত্র ৩৪ বলেই। শেষ পর্যন্ত ভলভার্টকে থামতে হয় মেগান শুটের ফুল লেংথে এলবিডব্লু হয়ে। রিভিউ করেছিলেন তবে সফল হয়নি সেটি। ভলভার্টের উইকেটেই বলতে গেলে শেষ দক্ষিণ আফ্রিকার আশা, শেষ পর্যন্ত হয়েছে সেটিই।

এর আগে টসে জিতে নামা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং আবর্তিত হয়েছে ওপেনার মুনিকে ঘিরেই। পাওয়ার প্লেতে ৩৬ রানের বেশি তুলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া, হারায় অ্যালিসা হিলির উইকেটও। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে মারিজান কাপের বলে কাভারের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন দারুণ ফর্মে থাকা হিলি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভার মেডেন করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরও উজ্জীবিত করে তোলেন সেমিফাইনালের অন্যতম নায়ক শবনিম ইসমাইল।

তবে মেগ ল্যানিংয়ের আগে আসা অ্যাশলেই গার্ডনারের প্রতি-আক্রমণে সে চাপ জেঁকে বসতে দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। পাওয়ার প্লের পরের দুই ওভারে ননকুলুলেকো এমলাবাকে টানা দুটি চারের পরে নাডিন ডি ক্লার্ককে টানা দুই ছক্কা মারেন গার্ডনার। ক্লোয়ি ট্রাইওয়নের বলে লং অফে ক্যাচ তোলার আগে গার্ডনার করেন ২১ বলে ২৯, মুনির সঙ্গে তাঁর জুটিতে ওঠে ৪৬ রান।

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং আবর্তিত হয়েছে ওপেনার মুনিকে ঘিরেই

এরপর থেকে মোটামুটি নিয়মিত বিরতিতে অস্ট্রেলিয়ার উইকেট নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, তবে বিশ্বের সেরা দলকে রান করা থেকে সেভাবে আটকাতে পারেনি স্বাগতিকেরা। এক প্রান্তে মুনি টিকে ছিলেন, অন্য প্রান্তে নতুন ব্যাটসম্যানরাও শট খেলেছেন নিয়মিতই। মুনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে টানা দ্বিতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৪ বলে, পরের ৯ বলে তিনি করেন ২১ রান। শেষ ওভারে ইসমাইলকে ছয়ের পর চার মেরে শুরু করেছিলেন মুনি, ইসমাইল সেটির জবাব দেন চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টানা দুটি উইকেট নিয়ে। শেষ ৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৪৬ রান।