পাকিস্তানি নাগরিক বা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অন্য দেশের নাগরিকদের ভিসা দিতে ভারত সরকারের গড়িমসি করার অভ্যাস বেশ পুরোনো। ভারতের এই টালবাহানার নতুন ভুক্তভোগী শোয়েব বশির।
প্রায় দেড় মাস আগে লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও ভারত সফরে যেতে পারছিলেন না ইংল্যান্ড দলে প্রথমবার ডাক পাওয়া বশির। আবুধাবিতে ক্যাম্প শেষে ইংল্যান্ড দল ভারতে গেলেও ভিসা না পাওয়ায় বশিরকে ফিরতে হয়েছিল দেশে। এ নিয়ে ইংল্যান্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া হলে শেষ পর্যন্ত আজ তাঁকে ভারতের ভিসা দেওয়া হয়েছে। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) জানিয়েছে, এ সপ্তাহেই ভারতে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন বশির।
এর আগে বশিরের ভিসা প্রসঙ্গ হয়ে ওঠে ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের ‘টক অব দ্য ডে’। বিষয়টি ব্রিটিশ সরকার পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসও সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হলেও বশিরের জন্ম ইংল্যান্ডের সারেতে। কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব সমারসেটের সঙ্গে তিনি গত বছর থেকে চুক্তিবদ্ধ। তাঁর চাচা গিল্ডফোর্ড সিটি ক্রিকেট ক্লাবের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ছিলেন। ব্রিটিশ সরকার মনে করছে, শুধু পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে বশিরকে ভিসা দিচ্ছিল না ভারত।
সরকারের এক মুখপাত্র ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে বলেছেন, ‘এটা শোয়েব বশির ও ভারত সরকারের মধ্যকার বিষয় হলেও আমাদের আশা ভিসা প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভারত সব ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করবে। এর আগেও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের ভিসা পাওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সমস্যাগুলো লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসে উত্থাপন করা হয়েছে।’
এবারের ভারত সফরের ইংল্যান্ড দলে বশির ছাড়াও আছেন আরেক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত, তিনি লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ। তবে ১৯ বছর বয়সী রেহানের ভারতে যেতে কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ, গত অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলে স্ট্যান্ডবাই থাকায় রেহানের ভিসা-সম্পর্কিত কাগজপত্রের কাজ তখনই সেরে রাখা হয়েছিল।
ভিসা নিয়ে যাতে শেষ মুহূর্তে কোনো জটিলতা তৈরি না হয়, সে জন্য গত ১১ ডিসেম্বর ভারত সফরের দল ঘোষণার দিনই খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের কাগজপত্র লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসে জমা দিয়েছিল ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। কিন্তু কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রায় দেড় মাস হতে চললেও বশিরকে অপেক্ষায় রেখেছিল ভারত সরকার। যে কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অন্যদের সঙ্গে ক্যাম্প করলেও দলের সঙ্গে ভারতে রওনা না দিয়ে লন্ডনে ফিরে যেতে হয়েছে তাঁকে। আগামীকাল হায়দরাবাদে শুরু প্রথম টেস্ট থেকে ছিটকে যান ২০ বছর বয়সী এই স্পিনার।
ম্যাচের আগের দিন যেখানে দলীয় সমন্বয়, পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা, সেখানে বশির-ইস্যুতে সরগরম ছিল দুই দলের অধিনায়কের ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্টোকস তো কিছুটা ক্ষোভের সুরেই বলেছেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে আমার জন্য এটি খুবই হতাশার। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আমরা দল ঘোষণা করেছি। এত দিনে এসে ব্যাশ (বশির) জানতে পারছে যে ও ভারতের ভিসা পায়নি। ইংল্যান্ড দলে প্রথম সুযোগ পাওয়া কারও জন্য এমন অভিজ্ঞতা কাম্য নয়। ওর জন্য খারাপ লাগছে। বুঝতে পারছি ও কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
বশিরের ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাও দুঃখ প্রকাশ করেছেন, ‘সত্যি বলছি ওর জন্য খারাপ লাগছে। সম্ভবত সে ইংল্যান্ড দলে প্রথমবার সুযোগ পেয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি ভিসা অফিসে কাজ করি না। তাই এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে আমার আশা যত দ্রুত সম্ভব, সে এখানে আসতে পারবে, আমাদের দেশ উপভোগ করবে এবং খেলারও সুযোগ পাবে।’
স্টোকস–রোহিতের সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, বশিরের ভিসা আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘লন্ডন থেকে (বশিরের) ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। ভারতের ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন আছে। এ ক্ষেত্রেও সেটা প্রয়োগ করা হয়েছে।’
ভিসা নিশ্চিত হওয়ায় বশিরের ভারতে যেতে আর কোনো বাধা রইল না। ২ ফেব্রুয়ারি বিশাখাপত্তনমে শুরু দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষেক হতে পারে তাঁর।