অভিষেক টেস্টের প্রথম বলেই উইকেট। নিজাত মাসুদ তাতে যে কীর্তি গড়লেন, সেটা আফগানিস্তানের ক্রিকেটেই প্রথম। এরপর প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেটও। আফগানদের মধ্যে অভিষেকে যে অর্জন এর আগে ছিল শুধু বাঁহাতি স্পিনার আমির হামজার। মিরপুর টেস্টের ফলাফল হয়তো আফগানদের পক্ষে যাবে না, তবু এরই মধ্যে টেস্টটাকে স্মরণীয় করে রাখার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছেন ২৪ বছর বয়সী এই পেসার। কাল প্রথম ৫ উইকেট নেওয়া দিনের শেষে হোটেলে ফিরে নিজাত মাসুদ মুঠোফোনে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে—
অভিষেক টেস্টেই ৫ উইকেট পেলেন। বোলিং করে কেমন লাগল?
নিজাত মাসুদ: শোকর আলহামদুলিল্লাহ। খুবই ভালো লেগেছে। অভিষেক টেস্টে সবাই ৫ উইকেট পায় না। বোলিংটা খুবই উপভোগ করেছি। উইকেটও ভালো ছিল।
মিরপুরের সবুজ উইকেট নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশে এসে এ রকম উইকেট আশা করেছিলেন?
নিজাত: উইকেট খুবই ভালো ছিল। তবে গতকাল (পরশু) গরম একটু বেশি ছিল। আমরা এ রকম আবহাওয়ায় অভ্যস্ত নই। অবশ্য আজ (গতকাল) আবহাওয়া কিছুটা ভালো ছিল। অত গরম ছিল না।
এই ম্যাচের আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আপনি ২৫ ম্যাচে ৮৩ উইকেট নিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই এই সাফল্যে কাজে লেগেছে...
নিজাত: অবশ্যই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা না থাকলে তো আপনি টেস্ট ক্রিকেট খেলতেই পারবেন না। আমাকেও সে অভিজ্ঞতা অনেক সাহায্য করেছে। দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচের অভিজ্ঞতা সব সংস্করণেই কাজে দেয়। টেস্ট ক্রিকেটে তা আরও বেশিই কাজে লাগে।
এই টেস্টে যে ৫ উইকেট নিলেন, তার মধ্যে মুশফিকুর রহিমের উইকেটটাই কি বেশি তৃপ্তি দিয়েছে? মুশফিক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান, বলটাও ছিল দুর্দান্ত...
নিজাত: মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের অনেক বড় খেলোয়াড়। অনেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। প্রায় ১০০টি (৮৬টি) টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। সব সংস্করণেই অনেক বছর ধরে খেলছেন, অনেক ভালো ভালো ইনিংস খেলেছেন। মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যানের উইকেট নেওয়াটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় গর্বের ব্যাপার।
আপনার সাফল্য দলে রশিদ খানের অভাব তেমন বুঝতে দেয়নি। রশিদ না থাকায় কি বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন?
নিজাত: অবশ্যই, অভিজ্ঞদের অনুপস্থিতি সব সময়ই নতুনদের জন্য নিজেদের প্রমাণের সুযোগ। কোচ, অধিনায়ক—সবারই আমার ওপর আস্থা ছিল যে আমি ভালো কিছু করব। তাঁরা আমাকে বলেছেন, তুমি ভালো করতে পারবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তোমার এত ভালো পারফরম্যান্স। এখানেও নিজের মেধা আর সামর্থ্যটা দেখিয়ে দাও। তাঁদের এই কথা আমাকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করেছে এবং ৫ উইকেট নিতে সাহায্য করেছে। দলের সবাই আমাকে সাহায্য করেছে।
কাল (পরশু) তো প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে ইতিহাসেরও অংশ হয়ে গেছেন। প্রথম আফগান বোলার হিসেবে প্রথম বলে উইকেট নিলেন। সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
নিজাত: এটা আমার প্রত্যাশারও বাইরে ছিল। বলতে পারেন, আল্লাহর ইচ্ছা ছিল তাই হয়ে গেছে। একজন বোলারের জন্য অভিষেকের প্রথম বলেই উইকেট নেওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার। অনেক বড় অর্জন। এটাই আমাকে পরে আরও ভালো বোলিং করতে প্রেরণা জুগিয়েছে।
আফগানিস্তান দল টেস্ট খেলার সুযোগ খুব কম পাচ্ছে। এ নিয়ে কোনো হতাশা? অভিষেক টেস্ট খেলতে গিয়ে কি মনে হচ্ছে, আপনারা আরও বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে ভালো হতো?
নিজাত: অবশ্যই, আমরা অত বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাই না। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডেই বেশি খেলি। বেশি বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে ছেলেরাও আরও অভিজ্ঞ হতো, আরও ভালো খেলতে পারত।