এবারের আইপিএলে নামীদামি ক্রিকেটারদের মধ্যে যাঁরা চরম ব্যর্থ, তাঁদের একজন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ার এই তারকা অলরাউন্ডার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে এ মৌসুমে ৬ ম্যাচে মাত্র ৫.৩৩ গড়ে করেছেন ২৮ রান। এর মধ্যে তিনটিতেই মেরেছেন ডাক। ৯৪.১২ স্ট্রাইক রেট তাঁর নামের সঙ্গে কোনোভাবেই যায় না।
একে তো বেঙ্গালুরুর ন্যূনতম প্রত্যাশাটুকুও পূরণ করতে পারছেন না, তার সঙ্গে দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে চোট। ভারতের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানায়, গত বৃহস্পতিবার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ফিল্ডিংয়ের সময় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চোট পেয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। এ কারণে নাকি গত রাতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে খেলতে পারেননি।
তবে খোদ ম্যাক্সওয়েলের দাবি, চোটের কারণে নয়, ছন্দে নেই বলে নিজ থেকেই বিশ্রাম চেয়ে নিয়েছেন। মানসিক ও শারীরিকভাবে চাঙা হয়ে উঠতেই টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে এ অনুরোধ জানান তিনি। টিম ম্যানেজমেন্ট সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাঁকে গত রাতের ম্যাচে বিশ্রামে রেখেছিল।
হারের বৃত্তে বন্দী বেঙ্গালুরু কাল ঘরের মাঠ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিব্রতকর রেকর্ড গড়েছে। হায়দরাবাদের ব্যাটসম্যানরা বেঙ্গালুরু বোলারদের ওপর দিয়ে ‘মহাপ্রলয়’ বইয়ে তুলেছেন ২৮৭ রান, যা আইপিএল ইতিহাসের দলীয় সর্বোচ্চ। প্রথম ইনিংস শেষেই ম্যাচের ফল একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। শুধু দেখার ছিল বেঙ্গালুরুর হারের ব্যবধান। অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসির ২৮ বলে ৬২ আর উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিকের ৩৫ বলে ৮৩ রানের সুবাদে দলটি শেষ পর্যন্ত ২৫ রানে হেরেছে।
এবার বেঞ্চে বসে বেঙ্গালুরুর হার দেখা ম্যাক্সওয়েল ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আগের ম্যাচ (মুম্বাইয়ের বিপক্ষে) শেষে ফাফ (ডু প্লেসি) ও কোচদের কাছে গিয়ে বলেছি, আমার মনে হচ্ছে সম্ভবত অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়ার এটাই সময়। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ ছিল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমি আগেও পড়েছি। যত বেশি খেলেছি, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গিয়েছে। তাই আমি অনুভব করেছি নিজেকে একটু মানসিক ও শারীরিকভাবে বিশ্রামে রাখা প্রয়োজন, যাতে আমার শরীর আবারও ঠিকঠাক সাড়া দেয়। আমি মনে করি অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়ার এটা ভালো সময়। আশা করি সে তার সক্ষমতা দেখিয়ে দলে জায়গা পাকাপোক্ত করবে।’
ম্যাক্সওয়েলের ফর্ম–খরা আইপিএলেই শুরু হয়েছে। দারুণ ছন্দে থেকেই তিনি বেঙ্গালুরুতে যোগ দিয়েছিলেন। গত নভেম্বর থেকে আইপিএল শুরুর আগপর্যন্ত ১৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪২.৪৬ গড়ে, ১৮৫.৮৫ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৫৫২ রান। এ সময়ে ছিল দুটি সেঞ্চুরিও। কিন্তু আইপিএল খেলতে এসে বাজে সময় পার করছেন। ৬ ম্যাচ খেলে দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন মাত্র একবার। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ২৮ রান করলেও ‘জীবন’ পেয়েছেন দুবার। তাঁর বাকি পাঁচ ইনিংস এমন—০, ৩, ০, ১, ০।
হঠাৎ ছন্দ হারিয়ে ফেলা নিয়ে ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কখনো কখনো এমনটা হতে পারে। এটা পরিবর্তনশীল একটা খেলা। প্রথম ম্যাচের কথাই যদি বলি, বল কিন্তু আমার ব্যাটের মাঝ বরাবর লেগেছিল। এরপরও বল কিপারের হাতে গেছে। রান করার সুযোগ আছে দেখে আমি একটু আগেই শট খেলে ফেলেছিলাম। সময় আমার পক্ষে থাকলে বল (কিপারের) গ্লাভসের অনেক দূর দিয়ে যেত। প্রথম বলেই আমি বাউন্ডারি পেয়ে যেতাম। টুর্নামেন্টের শুরুটাও ভালো হতো। কিন্তু সেটা হয়নি।’
তবে কাল চিন্নাস্বামীর পিচ দেখার পর ম্যাক্সওয়েলের মনে হয়েছে হায়দরাবাদের বিপক্ষে খেললে নাকি ভালোই করতেন। রসিকতা করে তিনি বলেছেন, ‘পাওয়ারপ্লের সময় লক্ষ্য করলাম এই পিচ আগের ম্যাচগুলোর মতো অতটা মন্থর এবং অসম গতির নয়। বুঝতে পারলাম ম্যাচটা না খেলে ভুল করেছি। এমন পিচে ব্যাট করতে পারলে ভালোই হতো (হাসি...)।’
কাল বিদেশি কোটায় ম্যাক্সওয়েলের জায়গায় খেলেছেন লকি ফার্গুসন। তবে নিউজিল্যান্ডের এই ফাস্ট বোলারও ভালো করতে পারেননি। ২ উইকেট নিলেও ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫২ রান।
৭ ম্যাচে মাত্র এক জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে বর্তমানে তালিকার তলানিতে আছে বেঙ্গালুরু। প্লে–অফ পর্বে খেলতে হলে লিগ পর্বের বাকি ৭ ম্যাচেই জিততে হবে।
দলটির পরের ম্যাচ আগামী রোববার কলকাতার বিপক্ষে, ইডেন গার্ডেনে। সেই ম্যাচ দিয়েই ফিরবেন কি না, ম্যাক্সওয়েল তা নিশ্চিত করেননি। তবে দলের প্রয়োজনে যেকোনো সময় ফিরবেন বলে জানিয়েছেন, ‘এই টুর্নামেন্টে যদি আমাকে আবার দরকার পড়ে, তাহলে আশা করি আরও শক্ত মানসিকতা ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে ফিরতে পারব। আমি এখনো মাঠে প্রভাব ফেলতে পারি।’