ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার
ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার

ভারত করলে ‘প্রতারণা’, তারা করলে ‘ভুল’—‘সেনা’ দেশগুলোকে ধুয়ে দিলেন গাভাস্কার

কেপটাউন টেস্টের পিচ নিয়ে ‘সেনা’ দেশগুলোকে (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া) ধুয়ে দিয়েছেন সাবেক ভারত অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার। ভারত টার্নিং উইকেট বানালে সেটি ‘ছলচাতুরী বা প্রতারণা’, আর ওই দেশগুলো উইকেটে গড়বড় করলে সেটি ‘ভুলক্রমে’ হয়ে গেছে বলা হয়—এমন উল্লেখ করে গাভাস্কার বলেছেন, ক্রিকেটের ‘পুরোনো শক্তি’রা ভারতকে ‘হেয়’ করার চেষ্টা করে সব সময়। পাশাপাশি ইংল্যান্ডের ভারত সফরের আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমেরও কড়া সমালোচনা করেছেন এখন ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা গাভাস্কার।

দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের সদ্য সমাপ্ত সিরিজে সংক্ষিপ্ততম টেস্ট আয়োজন করে ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে কেপটাউনের নিউল্যান্ডস। প্রথম দিনই ২৩ উইকেট পড়ার পর দ্বিতীয় দিনের টেলিভিশন পিচ রিপোর্টে সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক শন পোলক ‘নিউল্যান্ডসের কিউরেটর ভুল করেছেন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন—এমন উল্লেখ করে মিড-ডেতে লেখা এক কলামে গাভাস্কার বলেন, ‘এ অজুহাতই বলে, এমন পিচ বানানোর ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এমন হয়েছে, কারণ, হয় বেশি ঘাস রেখে দেওয়া হয়েছে অথবা বেশি পানি দেওয়া হয়েছে, যা শুকানোর যথেষ্ট সুযোগ পায়নি। ব্যাপারটি হলো, (প্রথম টেস্টে) তিন দিনের মধ্যে ভারতের হারের পর কিউরেটের কাছে বার্তা গেছে যে আরেকটি সিরিজ জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ঘাসযুক্ত উইকেট লাগবে।’

কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে টেস্টে বল পিচ থেকে অপ্রত্যাশিত বাউন্স পেয়েছে

সিরিজের আগে ভারত পর্যাপ্ত ম্যাচ অনুশীলনের সুযোগ পায়নি বলে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম টেস্টে ৪০০ রানের বেশি করেছিল, এমন মনে করা গাভাস্কার এরপর বলেন, এ কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা অমন উইকেটের কথা ভেবেছিল। তবে ‘ঘরের মাঠের দলের জন্য দুঃখজনকভাবে’ ভুল সংশোধন করে ভারতীয় বোলাররা ফিরে আসেন বলে মনে করেন গাভাস্কার।

এরপর তিনি লেখেন, ‘কিউরেটর ভুল করেছে, এমন অজুহাত আসলে সেনা দেশগুলোর চিরায়ত। আমাদের কিউরেটররা শুষ্ক পিচ বানালে সেটি ছলচাতুরী—গত বছর প্রথম দুই টেস্টে দুমড়েমুচড়ে যাওয়ার পর সাবেক এক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক যেমন বলেছিলেন। আমাদের গ্রাউন্ডসম্যানরা এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করে, আর তাদের গ্রাউন্ডসম্যানরা ভুল করে করে। এটি আসলে তৃতীয় দেশের (নিরপেক্ষ) আম্পায়ার আসার আগের ঘটনার মতো। তাদের আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তকে ‘মানবিক ভুল’ বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হতো, আমাদের আম্পায়াররা ছিল প্রতারক আর “দিল্লির কসাই”, এমন সব অপমানজনক শিরোনাম।’

নিউল্যান্ডসে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ

এই ‘শিরোনাম’-এর সূত্র ধরেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকেও একহাত নিয়েছেন টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সফল এই ব্যাটসম্যান, ‘সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে আরেকটি টেস্ট সিরিজ শুরু হচ্ছে এমন একটি দেশের সঙ্গে, যাদের সংবাদমাধ্যম সবচেয়ে বেশি ঘ্যানঘ্যান ও হাহাকার করে। তাদের দলের পক্ষে কিছু না গেলেই সমালোচনা করা হয়। অভিযোগও আসবে অনেক।’

কেপটাউন টেস্ট দেড় দিনে শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছিলেন, তাঁর এমন উইকেটে খেলতে আপত্তি নেই। কিন্তু লোকে যাতে ভারতের টার্নিং উইকেট নিয়ে নিজেদের মুখ বন্ধ রাখে। সেটি উল্লেখ করে ভারতের বর্তমান ক্রিকেট প্রতিপত্তি ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সহ্য হয় না বলেও উল্লেখ করেছেন গাভাস্কার, ‘অবশ্যই সে অসম্ভব কিছু চাইছে। কারণ, যখন থেকে ভারত এই খেলায় একটা শক্তি হয়ে উঠেছে এবং আইসিসির বোর্ডরুমে ন্যায্যভাবেই নিজেদের জাহির করছে, তখন থেকেই আমরা দেখেছি—এটিকে হেয় করার একটা সমবেত প্রচেষ্টা আছে পুরোনো শক্তিগুলোর দিক থেকে। তারা একটা অ্যাজেন্ডা নিয়ে আসে। যা–ই আসুক না কেন, নিজেরা কিছু একটা জিতে ফিরতে চায়।’

সেসব দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে ‘শব্দ’ দিয়ে লড়াই করার আহ্বান জানিয়ে গাভাস্কার এরপর বলেন, ‘মাঠের মতো সে লড়াইটাও উপভোগ্য হবে। এটি আশা করা কি বেশি হয়ে যাবে? দ্রুতই জানতে পারব আমরা।’

আগামী ২৫ জানুয়ারি হায়দরাবাদে প্রথম ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ভারত-ইংল্যান্ড ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।