জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ভারতের উল্লাস, এদিকে বিমর্ষ নর্কিয়া
জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ভারতের উল্লাস, এদিকে বিমর্ষ নর্কিয়া

দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

১৭ বছর পর চ্যাম্পিয়ন ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন আক্ষেপ 

কেনসিংটন ওভালের রোমাঞ্চকর ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে ২০০৭ সালের পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ভারত। এ ফাইনালের ঘটনার বিবরণ পড়ুন নিচে—

বিশ্বকাপ ফাইনাল। ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্রিজটাউন, বার্বাডোজ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোনো দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়নি। আজ ভাঙবে সে রেকর্ড।

বাংলাদেশ সময় গত ২ জুন ডালাসে শুরু হয়েছিল ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ৫৫তম ও শেষ ম্যাচটি আজ। ফাইনালে বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে মুখোমুখি ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা, দুই দলই অপরাজিত এখন পর্যন্ত। আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ম্যাচের শেষ দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে, তবে এখন পর্যন্ত সেটি ঠিকঠাক। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমবারের মতো খেলছে কোনো বিশ্বকাপ ফাইনালে। ভারতের জন্য সর্বশেষ আট বিশ্বকাপে এটি তৃতীয় ফাইনাল। তবে ট্রফিটা দুদলের কাছেই যেন একদিক থেকে একই রকম কাঙ্ক্ষিত—দক্ষিণ আফ্রিকা তো কখনই জেতেনি, ভারতের সর্বশেষ বিশ্বকাপ ২০১১ সালে, সর্বশেষ বৈশ্বিক ট্রফিও ১১ বছর আগে। তৃতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনাল আয়োজন করতে যাওয়া ব্রিজটাউনে কিছুক্ষণ পরই টস। ফাইনালে, এ বিশ্বকাপে শেষবার (যদি ম্যাচটি আগামীকাল রিজার্ভ ডে-তে না গড়ায়) প্রথম লাইভে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি সাইফুল্লাহ্‌ বিন আনোয়ার।

আলোচনায় ফাইনালের উইকেট

ফাইনালের উইকেট দেখছেন ভারতের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় (মাঝে)

টুর্নামেন্টের শুরুতে ব্যাপক আলোচনায় থাকা উইকেট ফাইনালেও কি ম্যাচের ফলে বড় প্রভাবক হয়ে উঠবে? আজ বার্বাডোজের যে মাঠে বিশ্বকাপের ফাইনাল হচ্ছে, কেনসিংটন ওভাল নামের সেই মাঠ কি বোলারদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে, নাকি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মেজাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাটসম্যানরাই রাজত্ব করবেন?

নাজমূল আবেদীনের বিশ্লেষণ

ভারতকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দল মনে হচ্ছে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনি। দল হিসেবে তারা এতটাই সংকল্পবদ্ধ। ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে দুর্দান্ত দল। তবে ক্রিকেটে দুর্দান্ত দলটিই যে সব সময় জেতে, তা কিন্তু নয়। এ কারণেই ক্রিকেট এতটা রোমাঞ্চকর।

টস

ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনের সঙ্গে দুই অধিনায়ক এইডেন মার্করাম ও রোহিত শর্মা। টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত। মার্করাম বলেছেন, তিনিও একই সিদ্ধান্ত নিতেন।

একাদশ

অনুমিতভাবে দুই দলই নামছে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে।

ভারত

রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, ঋষভ পন্ত, সূর্যকুমার যাদব, শিবম দুবে, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, অর্শদীপ সিং ও যশপ্রীত বুমরা।

দক্ষিণ আফ্রিকা

কুইন্টন ডি কক, রিজা হেনড্রিকস, এইডেন মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেন, ডেভিড মিলার, ট্রিস্টান স্টাবস, মার্কো ইয়ানসেন, কেশব মহারাজ, কাগিসো রাবাদা, আনরিখ নর্কিয়া ও তাব্রেইজ শামসি।

২০০৭, ২০২৪

নবম ফাইনালে এসে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া চতুর্থ দল ভারত।

২০০৭ সালে প্রথম ফাইনালেও টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানকে সেবার হারিয়েছিল তারা। ২০০৯ সালে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া শ্রীলঙ্কার ফল তাদের পক্ষে যায়নি, সেবার জিতেছিল পাকিস্তান। সর্বশেষ ২০১২ সালে টসে ব্যাটিং নেওয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কোহলির দিন ফিরবে ফাইনালে? প্রথম ওভারে ভারতের ১৫...

৭৫ বল।

৭৫ রান।

টুর্নামেন্টটা মোটেও সুবিধার যায়নি কোহলির। আজ?

মার্কো ইয়ানসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের হাফ ভলিতে চার মেরে শুরু করেছেন আজ। ঠিক পরের বলে পায়ের ওপর পেয়ে ফ্লিক করে মেরেছেন আরেকটি। পিঠে চাপড় দিয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত। ভারত অধিনায়ক জানেন, কোহলি নিজেকে মেলে ধরতে পারলে কাজটি অনেকটাই সহজ হয়ে আসবে তাঁর। প্রথম চার বল ফুললেংথে করে পঞ্চম বলে গিয়ে লেংথ কমিয়ে আনেন ইয়ানসেন। পিচকে ব্যাটিংয়ের জন্য মনে হচ্ছে দারুণ। তবে শেষ বলে আবার ওভারপিচড করে আবার চার খেয়েছেন কোহলির কাছে। প্রথম ওভারেই উঠে গেছে ১৫ রান।

দুই চারে শুরু, এরপর ৩ বলের মধ্যে নেই রোহিত-পন্ত

কাট করে চার। রিভার্স সুইপে চার। দুটিই একই অঞ্চল দিয়ে—ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে। দ্বিতীয় ওভারে কেশব মহারাজকে এভাবে স্বাগত জানিয়েছেন রোহিত। এবং চতুর্থ বলে ফিরে গেছেন ভারত অধিনায়ক! পা বাড়িয়ে সুইপ করেছিলেন, কিন্তু সরাসরি ক্যাচ গেছে স্কয়ার লেগে থাকা ক্লাসেনের হাতে। দুটি চারের পরও একটু গতি কমিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়ার মতো সাহসী বোলিং করেছেন মহারাজ, পুরস্কারও মিলেছে সেটির।

এবং শেষ বলে আউট ঋষভ পন্তও! তিনিও সুইপ করেছিলেন, ক্যাচ ওঠে ওপরে। যেটি নেন কুইন্টন ডি কক। অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকানরা ভেবেছেন তেমনই। টেলিভিশন আম্পায়ারের কাছে যাওয়ার পর নিশ্চিত হয়েছে সেটিই। ব্যাটের একেবারে গোড়ায় লেগেই উঠেছিল বল। ৩ বলের মধ্যে ২ উইকেট নেই ভারতের।

চাপ

মহারাজের জোড়া আঘাতের পর বোলিংয়ে আনা হয়েছে কাগিসো রাবাদাকে। হুট করেই মনে হচ্ছে ভিন্ন কোনো ম্যাচ। রাবাদা শুরু থেকেই করছেন লেংথে। শেষ বলে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচও তুলেছিলেন সূর্যকুমার যাদব। যদিও ফিল্ডার নাগাল পাননি সেটির। ৩ ওভারে ২৬/২।

এবার সূর্যকুমার গেলেন

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভিত গড়ে দিয়েছিলেন রোহিত ও সূর্যকুমার। রোহিত ফিরেছেন আগেই, এবার ফিরলেন সূর্যকুমারও। লেংথ বলে ঘুরিয়ে খেলেছিলেন। ক্যাচ গেছে ডিপ স্কয়ার লেগে। নিজের বাঁদিকে গিয়ে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন হাইনরিখ ক্লাসেন। পাওয়ারপ্লের ৯ বল বাকি থাকতে ভারতের নেই ৩ উইকেট।

৫ ওভারে ৩৯/৩।

যে পাওয়ারপ্লে দক্ষিণ আফ্রিকার

প্রথম ৮ বলে ২৩। ভারতের শুরুটা হয়েছিল উড়ন্ত। এরপর মহারাজের জোড়া আঘাত। চাপে ভারত। এরপর রাবাদার বলে সূর্যকুমার আউট। ভারতের চাপ আরও বেশি। কোহলির শুরুটা হয়েছিল ইতিবাচক। কিন্তু ম্যাচের যা পরিস্থিতি, তাতে তাঁকেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। প্রথম ৯ বলে ১৫ রান করা কোহলি সর্বশেষ ১০ বলে করেছেন ১০ রান। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভার করতে এসেছিলেন মার্করাম নিজে, তাতে উঠেছে ৬ রান। ভারত পাঁচে পাঠিয়েছে অক্ষর প্যাটেলকে। পাওয়ারপ্লেতে ভারত তুলেছে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান।

কাজে লাগবে অক্ষর-বাজি?

মার্করাম করতে এসেছেন টানা দ্বিতীয় ওভার। প্রথম ওভারে খরুচে ইয়ানসেনকে আর বোলিংয়ে আনার ইচ্ছা হয়ত নেই তাঁর। তবে পাঁচে আসা অক্ষর তাঁকে মেরেছেন ছক্কা। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের দ্বিতীয় ওভারে এসেছে ১০ রান। ৮ ওভারে ভারত ৫৯/৩।

লড়াইয়ে ফিরছে ভারত

বুড়ো আঙুলটা উঁচিয়ে কোহলি জানালেন—‘ঠিক আছে।’ ঠিক থাকারই কথা। অক্ষর এবার চড়াও হয়েছেন মহারাজের ওপর। মার্করামের পর মহারাজকে স্লগ সুইপে ইনিংসে দ্বিতীয় ছক্কাটি মেরেছেন অক্ষর। সর্বশেষ ২ ওভারে এসেছে ৯ রান। লড়াইয়ে ফিরছে ভারত। অক্ষরকে থামাতে দক্ষিণ আফ্রিকার পরবর্তী কৌশল কী হবে?

বিরতির পর ফিরলেন ইয়ানসেন

তাব্রেইজ শামসির করা প্রথম ওভারের পর ভারতের স্কোর ছিল ১০ ওভারে ৭৫/৩। ড্রিংকসের পর প্রথম ওভারেই ইয়ানসেনকে ফিরিয়েছেন মার্করাম। প্রথম ওভারে সুইংয়ের আশায়া ফুললেংথে করা ইয়ানসেন এবার শুরু থেকেই লেংথ কমিয়ে ফেলেছেন। ইয়ানসেন ফিরেছেন ভালোভাবে, দ্বিতীয় ওভারে দিয়েছেন ৭ রান। অক্ষরের সঙ্গে কোহলির জুটি অবিচ্ছিন্ন এখন ৩৯ বলে ৪৮ রানে।

৫০ রানের জুটি

৩৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছিল ভারত। পাঁচে আসা অক্ষরের সঙ্গে এরপর ৫০ রানের জুটি কোহলির। অক্ষরকে ভারত পাঠিয়েছে ‘অ্যাগ্রেসর’-এর ভূমিকায়। সেটি তিনি পালন করছেন দারুণভাবে। শামসির করা ১২তম ওভারে বাতাস লেগ সাইডে পক্ষে ছিল অক্ষরের। স্লগ সুইপে তিনি ইনিংসের তৃতীয় ছক্কাটি মেরেছেন লং অন দিয়ে। ২৬ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত অক্ষর। ভারত ১২ ওভারে ৯৩/৩।

এখন পর্যন্ত ভারত ইনিংসের ৩টি ছক্কাই মেরেছেন অক্ষর প্যাটেল

অক্ষর রানআউট

রানআউট হয়ে ফিরছেন অক্ষর

সেমিফাইনালে বোলিংয়ে নায়ক। ফাইনালে অক্ষর প্যাটেল ম্যাচ ঘুরিয়ে দিচ্ছেন ব্যাটিংয়ে। সর্বশেষ ১৪তম ওভারে আসা কাগিসো রাবাদার প্রথম বলে লং অন দিয়ে ছক্কা মেরেছেন। যেটিও আবার সোজা ব্যাটে। ভারত ইনিংসে এখন পর্যন্ত হয়েছে ৪টি ছক্কা, সবকটিই অক্ষরের ব্যাটে। এবং রানআউট অক্ষর! সেটিও ডি ককের সরাসরি থ্রো-তে। রাবাদার বলে ফ্লিক করেছিলেন কোহলি। বল গিয়েছিল উইকেটের পেছনে। ডি ককের কাছে সেটি গেছে দেখে কোহলি ফিরিয়ে দেন তাঁকে। তবে অক্ষর যেন ভাবতেই পারেননি ডি কক সেখান থেকে থ্রো করবেন। গা ছেড়ে দেন তিনি। একটু সময় নিয়ে তিন স্টাম্প তাক করে লক্ষ্যভেদ করেন ডি কক। রানআউট না হলে ওভারথ্রো থেকে ৪ রান পেত ভারত। অক্ষর আউট হলেন দৃষ্টিকটুভাবে। তবে নিজের কাজটি তিনি করে দিয়ে গেছেন ৩১ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে, তা বলাই যায়। কোহলির সঙ্গে তাঁর জুটিতে উঠেছে ৫৪ বলে ৭২ রান।

পান্ডিয়ার আগে দুবে

বাঁহাতি অক্ষর ফিরেছেন। ডানহাতি পান্ডিয়ার আগে বাঁহাতি দুবেকে পাঠিয়েছে ভারত। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন ধরে রাখতে চায় দলটি, সেটি পরিষ্কার। তবে চাইলে স্পিনারকে দিয়ে আর ১ ওভারের বেশি করাতে হবে না দক্ষিণ আফ্রিকাকে। দুবে নেমে ছক্কা মেরেছেন ইয়ানসেনকে। ১৫ ওভারে ১১৮/৪।

৪৮ বলে কোহলির ফিফটি

১৬তম ওভারে নিজের তৃতীয়টি করেছেন শামসি। ইনিংসে স্পিনের শেষ ওভার সেটি, ধরে নেওয়াই যায়। শামসি দিয়েছেন ৮ রান, তাতে দুবের মারা একটি চার আছে। ১৭তম ওভারে ফিফটি পূর্ণ করেছেন কোহলি। তবে তাঁর লেগেছে ৪৮ বল। গতি বাড়ানোর সময় যে বয়ে যাচ্ছে, সেটি বলাই যায়। নর্কিয়ার এ ওভারে এসেছে ৮ রান। আবারও তাতে আছে দুবের মারা একটি চার। ১৭ ওভারে ১৩৪/৪।

কোহলির গিয়ার বদল

ইনিংসে মুখোমুখি ৪৯তম বলে এসে কোহলি পেলেন প্রথম ছক্কা। রাবাদাকে টেনে লং অন দিয়ে সেটি মেরেছেন তিনি। এরপর শর্ট বল দারুণ প্লেসমেন্টে মেরেছেন চার। শেষ বলে স্ট্রাইক ফিরে পেয়েছিলেন আবার। তবে সিঙ্গেলের বেশি নিতে পারেননি। কিন্তু ১৮তম ওভারে উঠেছে ১৬ রান।

৫৯ বলে ৭৬ রান করে থামলেন কোহলি

ডি কক উদ্‌যাপন করছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়েছিল রিভিউ। তবে সেটি টেলিভিশন আম্পায়ারের কাছে যাওয়ার আগেই তিনি জানিয়েছেন, ইয়ানসেনের পা ছিল পপিং ক্রিজের বাইরে। রিপ্লে দেখিয়েছে, সেটি বেশ বাইরেই ছিল। ফ্রি হিটে অবশ্য কোনো রান আসেনি, যদিও সেটি ওয়াইড হওয়া ছিল বলে মনে করেন কোহলি। পরের ৩ বলে কোহলি তুলেছেন ১২ রান—ফুলটসে চার, ডাবলস, এরপর টেনে লং অন দিয়ে ছক্কা। স্লোয়ার ছিল, কোহলি সেটি পড়ে ফেলেছেন আগেভাগেই। তবে কোহলি থেমেছেন এরপরের বলেই। বল বদলানো হয়েছিল, আবার তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েছেন কোহলি। কোহলি থামলেন ৫৯ বলে ৭৬ রানে, ফিফটির পর ১১ বলে তিনি করেন ২৬ রান। নেমেই টপ-এজে চার পেয়েছেন পান্ডিয়া। ১৮তম ওভারে ১৬ রানের পর ১৯তম ওভারে এসেছে ১৭ রান। ১৬৭/৫।

ভারতের ১৭৬

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে এটি এখন সর্বোচ্চ স্কোর, আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার ১৭৩। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সে স্কোর এসেছিল রান তাড়ায়, যে ম্যাচটি জিতেছিল তারা।

আগের ২ ওভারে এসেছিল ৩৩ রান। তবে নর্কিয়ার করা শেষ ওভারে ৯ রানের বেশি আসেনি। দুবের পর জাদেজার উইকেটও পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, জাদেজা আউট হয়েছেন শেষ বলে গিয়ে। ভারত তুলেছে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান।

টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল ভারত। এরপর কোহলির সঙ্গে অক্ষরের ৫৪ বলে ৭২ ও দুবের ৩৩ বলে ৫৭ রানের দুটি জুটি টানে তাদের। কোহলি ফিফটি পর্যন্ত বেশ সময় নেন। এরপর গতি বাড়ান। যদিও শেষ করে আসতে পারেননি। তবে ভারত পেয়েছে বেশ ভালো একটা সংগ্রহ। দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বোলিংটা একেবারে খারাপ করেনি। তবে সেটি আদতে কতটা কী, তা জানা যাবে তাদের ব্যাটিংয়ের পরই।

এবার হেনড্রিকসের পালা?

৯০-এর নিচে স্ট্রাইক রেট, ১৬-এর নিচে গড়। রিজা হেনড্রিকসের টুর্নামেন্ট সুবিধার কাটেনি মোটেও। দক্ষিণ আফ্রিকা আস্থা রেখেছে তাঁর ওপরই। টুর্নামেন্টে ভুগতে থাকা কোহলি ফাইনালে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক। প্রথম ৩ বলে ব্যাট থেকে কোনো রান করতে না পারা হেনড্রিকস শেষ বলে গিয়ে মেরেছেন চার। অর্শদীপ সিংকে দিয়ে শুরু করেছে ভারত। প্রথম ওভারে এসেছে ৬ রান।

শুরুতেই বুমরা-জাদু

ডি ককের বিপক্ষে আউটসুইং। সেটি ঠিক বুঝেই উঠতে পারেননি তিনি। এরপর লেগসাইডে করেছিলেন, তাতে এসেছিল লেগবাইয়ে একটি রান। হেনড্রিকস এরপর শিকার বুমরার দুর্দান্ত আউটসুইংয়ের। ফাইনালে তৃতীয় বলে বুমরা-জাদু, দক্ষিণ আফ্রিকা হারিয়েছে প্রথম উইকেট। ফর্ম থাকুক বা না থাকুক, বুমরার এ বল খেলা কঠিন যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই।

অর্শদীপের শিকার মার্করাম

বুমরাকে দারুণ ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেছিলেন মার্করাম। কিন্তু অর্শদীপের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। অর্শদীপ স্লোয়ার করেছিলেন, তাতে কট বিহাইন্ড মার্করাম।

৫ ওভারে ৩২/২

পাওয়ারপ্লেতে ২ ওভারে করে ফেলেছেন বুমরা। এরপর ডেথে করবেন আর দুটি—রীতি এমনই। পঞ্চম ওভারে এসেছেন সেমিফাইনালে বোলিং এবং আজ ভারতের ব্যাটিংয়ের অন্যতম নায়ক অক্ষর। তাঁর প্রথম ওভারে দুটি চারসহ এসেছে ১০ রান। স্টাবসের পর মেরেছেন ডি কক।

পাওয়ারপ্লে শেষ

দুই পেসারের ৪ ওভারের পর পাওয়ারপ্লে শেষ করলেন দুই স্পিনার—অক্ষরের পর কুলদীপ। পাওয়ারপ্লের শেষ বলে ডি ককের মারা চারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর গেছে ৪২ রানে। ভারতের স্কোর এ সময়ে ছিল ৪৫/৩।

শেষ ৪ ওভারে ৪০

দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর চাপে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইতিবাচক স্টাবস ও ডি কক এরপর এগোচ্ছেন। শেষ ৪ ওভারে এসেছে ৪০ রান। সর্বশেষ কুলদীপের ওভারে এসেছে ১৩ রান—শুরুতে স্টাবস মারেন চার, শেষে ডি কক মেরেছেন ছক্কা। ৮ ওভারে ৬২/২। স্টাবস-ডি ককের জুটিতে ৫০ রানও উঠে গেছে।

কী করলেন স্টাবস!

অন্যপ্রান্তে ডি ককের হতাশাই বলে দিচ্ছিল সব। স্টাবস ছন্দে ছিলেন। এ ওভার শুরু করেছিলেন মিডউইকেটে বাতাসের গতির পক্ষে মারা ছক্কা দিয়ে। তবে এবার জায়গা বানিয়ে লেগ সাইডে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে ফুলটস মিস করে হয়েছেন বোল্ড। ভারত পেয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু। এবং সেটি এসেছে অক্ষরের বোলিংয়ে!

১০ ওভারশেষে

পান্ডিয়ার প্রথম ৩ বল ডট দেওয়ার পর কাভার দিয়ে দারুণ শটে ছক্কা মেরেছেন ক্লাসেন। এরপর পান্ডিয়া ওভারস্টেপিং করায় ডি কক পেয়েছেন ফ্রি হিট। তাতে ওপরে তুলে পেয়েছেন সিঙ্গেল। ১০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৮১/৩। ভারত ছিল ৭৫/৩।

ক্লাসেন—বুম!

স্পিনের বিপক্ষে তিনি ভয়ঙ্কর। কেন, সেটিই দেখাচ্ছে ক্লাসেন। প্রথমে জাদেজার ফুললেংথ থেকে লং অন দিয়ে ছক্কা। এরপর কুলদীপের লেংথ বলে কাভারের ওপর দিয়ে তুলে মেরেছেন আরেকটি। ধারাভাষ্যে ডেল স্টেইন যেমন বলছিলেন, এ শট খেলার মতো খুব বেশি ব্যাটসম্যান এখন নেই। তবে ক্লাসেন আছেন। ১২তম ওভারে ১০০ পেরিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৮ বলে দরকার ৭৬ রান।

ফাঁদে পা দিলেন ডি কক

আগের বলে লেগ স্টাম্পের ওপর পেয়ে ঘুরিয়ে খেলেছিলেন। ডিপ ফাইন দিয়ে হয়েছিল চার। এরপর সেখানে আনা হয় ফিল্ডার। ডি কক ধরা পড়েছেন সেখানেই! এ জুটি হুমকি জাগাচ্ছিল। অর্শদীপ দিলেন দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু। ৩০ বলে ৩৯ রানে থামলেন ডি কক।

ক্লাসেন-ঝড়

কুলদীপের করা ১৪তম ওভারের শেষ বলে মিলারের চার-ছক্কা। এরপর অক্ষরের ওপর চড়াও ক্লাসেন। অনায়াসে মারলেন দুটি ছক্কা আর দুটি চার। অক্ষরের করা ১৫তম ওভারে এসেছে ২৪ রান! শেষ ২ ওভারে এসেছে ৩৮ রান। ৫ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ৩০ রান। বাকি ৬ উইকেট।

আক্রমণে বুমরা, ক্লাসেনের ফিফটি

বুমরাকে হয়ত আরও পরে আনতে চেয়েছিলেন রোহিত। তবে ১৬তম ওভারেই আনতে হয়েছে তাঁকে। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য শেষ হার্ডলের নাম বুমরা—বলা যায় সেটি। বুমরা দিয়েছেন মাত্র ৪ রান। তবে এ ওভারে মাত্র ২৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছেন ক্লাসেন।

এবং আউট ক্লাসেন

ঋষভ পন্তের চোটে সময় গেল কিছুটা। তাতেই কি ছন্দপতন ক্লাসেনের! পান্ডিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কট বিহাইন্ড। ক্লাসেন ফিরলেন ২৭ বলে ৫২ রান করে। উজ্জীবিত ভারত।

বুম বুম বুমরা

১৮ নাকি ১৯—কোন ওভারে বুমরা আসবেন, প্রশ্ন ছিল সেটি। নিজের সবচেয়ে বড় অস্ত্রকে রোহিত আনলেন ১৮তম ওভারেই। উইকেট দরকার, ভারত অধিনায়কের সে মনোভাব পরিষ্কার। এবং বুমরা দেখালেন, কেন তিনি এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা। ইয়ানসেনের বিপক্ষে করেছেন আরেকটি আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি। ব্যাট বাড়িয়ে সেটির কোনো নাগাল পাননি ইয়ানসেন। বুমরাকে দেখেশুনে পার করবেন, দক্ষিণ আফ্রিকানদের এমন কৌশল স্পষ্টই ছিল। তবে কাজ হলো না তাতেও। ১৪ বলে দরকার ২১ রান। বাকি ৪ উইকেট!

মহারাজ পার করেছেন বুমরাকে। শেষ বলে নিয়েছেন সিঙ্গেল। ২ ওভারে শিরোপা জিততে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ২০ রান।

বুমরার ওভারে ২, অর্শদীপের ওভারে ৪; শেষ ওভারে দরকার ১৬

১৯তম ওভারে অর্শদীপ। প্রথম দুই বল ডট দিলেন মহারাজ। তৃতীয় বলে ডিপ মিডউইকেটে খেলে নেন সিঙ্গেল। চতুর্থ বলে চালিয়েছিলেন মিলার, তবে ২ রানের বেশি নিতে পারেননি মিডউইকেট থেকে। পঞ্চম বলে মিলার সিঙ্গেলের বেশি নিতে পারেননি ইয়র্কারে। শেষ বলে রান আসেনি। শিরোপা জিততে ৬ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ১৬ রান।

অবিশ্বাস্য সূর্যকুমার

পান্ডিয়ার ফুলটস। মিলার খেলেছিলেন। ছক্কা হয়ত পেয়েই যেতেন। কিন্তু সেখানে ছিলেন সূর্যকুমার। একেবারে সীমানার ওপর গিয়ে ক্যাচ নিলেন। বেরিয়ে যাওয়ার আগে ছুড়ে দিলেন বল। ভেতরে এসে এরপর নিলেন সেটি। বেয়ারেস্ট অব মার্জিনস! ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্যাচ। বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্যাচ। ভারতকে কি ম্যাচ এখানেই জিতিয়ে দিলেন তিনি? ব্রিজটাউনে আবার বৃষ্টিও নেমেছে।

৭ রানে জিতল ভারত

শেষ ওভার। প্রথম বল। আউটসাইড-এজে চার রাবাদার। পরের বলে ব্যাটে লাগাতে পারেননি, বাই থেকে এসেছে সিঙ্গেল। মহারাজকে এরপর ব্লকহোলে করেন পান্ডিয়া, লেগ বাই থেকে ১ রানের বেশি আসেনি। ২ বলে দরকার ১০ রান। ক্লাসেন ডাগআউটে বিশ্বাস করতে পারছেন না কিছুই। ভারত বিশ্বাস করছে—মাঠে এবং গ্যালারিতে। হয়তো আরও অনেক জায়গায়। পান্ডিয়া ওয়াইড করে অবশ্য ঝুলিয়ে দিলেন ব্যাপারটি। শেষ ২ বলে ২ চারে সম্ভব সুপার ওভার। পঞ্চম বলে লং অফে রাবাদা ধরা পড়েছেন। কোহলি-রোহিত আর দ্রাবিড়ের উদ্‌যাপনই বলে দিচ্ছিল—শিরোপা সময়ের অপেক্ষা। শেষ বলে ১ রানের বেশি আসেনি। ভারত চ্যাম্পিয়ন!

শেষ বলটা করার পর শুয়ে পড়লেন পান্ডিয়া। ওদিকে রোহিত শর্মাও তাই। পান্ডিয়া এরপর কেঁদেই ফেলেছেন। আবেগী ঋষভ পন্তও। এ শিরোপার অর্থ ভারত ক্রিকেটারদের কাছে অ-নে-ক।

৩০ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ৩০ রান। এর আগে কখনো ফাইনালে আসেনি দক্ষিণ আফ্রিকার। শিরোপাটি হাতছোঁয়া দূরত্বে তখন তাদের। বুমরার ওভারে এরপর এল ৪ রান। পরের ওভারে তিনি দিলেন ২ রান। মাঝে পান্ডিয়ার ওভারে প্রথম বলে আউট ক্লাসেন। ভারত বিশ্বাস রেখেছিল। চাপ সামলেছে তারা। অন্যদিকে হাতের মুঠোয় আসা ম্যাচটি এক অর্থে পড়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার।

দুদলই ফাইনালে এসেছিল অপরাজিত থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকা হারল এরপর। ভারত রইল অপরাজিত।

ম্যাচসেরা কোহলি

ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার অন্যতম কৃতিত্ব বুমরার। তার আগে ব্যাটিংয়ে অক্ষর প্যাটেল ছিলেন অ্যাগ্রেসর। তবে ম্যাচসেরা ৭৬ রানের ইনিংস খেলা কোহলি। যিনি এর আগে টুর্নামেন্টে ৭৫ বলে করেছিলেন ৭৫ রান। এবং এটিই তাঁর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শেষ ম্যাচ, জানিয়েছেন কোহলি।

টুর্নামেন্টসেরা বুমরা 

তিনি ছাড়া আর কে!

শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। এজন্যই তো খেলি!