বাংলাদেশ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে। ব্যাপারটা অবশ্যই সাফল্য। তবে এই সাফল্যের সঙ্গে একটি হতাশাও মিশে আছে। বাংলাদেশের টপ অর্ডার রান পাচ্ছে না। এই না পাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি উঠেছে স্বয়ং অধিনায়ক নাজমুল হোসেনকে নিয়ে। ব্যাট হাতে অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না একেবারেই।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুপার এইটে ম্যাচের আগে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে স্বাভাবিকভাবেই অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে প্রায় সব দলের টপ অর্ডারের রান না পাওয়ার উদাহরণ দিয়ে হাথুরুসিংহে কন্ডিশনের ব্যাপারটাও সামনে টেনে এনেছেন।
গ্রুপ পর্বে নাজমুলের স্কোরগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক—৭, ১৪, ১, ৪। তিন সংস্করণেই নাজমুল সাধারণত তিনে ব্যাট করলেও তাঁর দীর্ঘ রানখরা কাটাতে এই চারটি ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চারে নেমে ব্যর্থ হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওপেন করিয়েও লাভ হয়নি। নেপালের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে নাজমুলকে আবারও তিনে ফিরিয়ে আনা হয়, কিন্তু ফল পাল্টায়নি।
বোলারদের কল্যাণে বাংলাদেশ গ্রুপ পর্ব উতরে গেলেও সুপার এইটে টপ অর্ডারের জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই। কারণ, ক্রিকেটের ‘ল অব অ্যাভারেজ’ অনুযায়ী বোলাররা তো আর প্রতিদিন ম্যাচ জেতাবেন না, ব্যাটসম্যানদেরও ভালো করতে হবে। আর সেখানে টপ অর্ডারে স্বয়ং অধিনায়ক নাজমুলের দায়িত্ব সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। সেটি যেহেতু হচ্ছে না, তাই সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন উঠতই।
তবে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নকর্তা একটি ব্যাপার মনেও করিয়ে দিয়েছেন। ভারতে গত অক্টোবর–নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুটি জয়ে রান পেয়েছিলেন নাজমুল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ে খেলেছিলেন ৯০ রানের ইনিংস। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৯।
অর্থাৎ অন্তত গত বিশ্বকাপের উদাহরণ টেনে বলা যায়, বিশ্বকাপে নাজমুল রান পেলে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাও বাড়ে। সুপার এইটে সামনে যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষ, তাই ব্যাটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে নাজমুলের প্রসঙ্গ তুলে হাথুরুসিংহের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, অধিনায়কের প্রতি বাংলাদেশ কোচের বার্তাটা কী, তিনি কেনই–বা রান পাচ্ছেন না।
হাথুরুসিংহে তাঁর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘শুধু শান্ত (নাজমুল) নয়, বেশির ভাগ দলের টপ অর্ডারই এই টুর্নামেন্টে ভুগছে। কারণ, নতুন বলে পিচগুলো (ব্যাটিংয়ের জন্য) কঠিন হয়ে উঠছে। কত রানের পিচ, এটা না বুঝেই প্রতিটি দল খেলতে নামছে। এরপর (ব্যাটিং অর্ডারে) শীর্ষ দুই–তিনজন ব্যাটসম্যানকে খেলার মাধ্যমে কন্ডিশন বুঝতে হচ্ছে।’ হাথুরুসিংহে এরপর নাজমুলকে নিয়ে আলাদা করে বলেন, ‘ঠিকই বলেছেন, সে ম্যাচ জেতানোর মতো খেলোয়াড়। সে খুব ভালো খেলোয়াড়, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান। আমি নিশ্চিত, কন্ডিশন ভালো হলে সে–ও ভালো করবে। সব টপ অর্ডারের জন্যই এটা চ্যালেঞ্জিং।’
গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংস খেলার পর সব সংস্করণ মিলিয়ে ১৭ ইনিংসে ফিফটি পাননি নাজমুল। সেই অপরাজিত সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪০ রান এই ১৭ ইনিংসের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু টি–টোয়েন্টির হিসাব করলে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস খেলার পর টানা ১২ ইনিংসে ফিফটি পাননি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস খেলেছেন দুবার।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে আগামীকাল অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬-৩০ মিনিটে।