নিজ দলের ক্রিকেটার সাব্বির রহমানের ‘শৃঙ্খলাভঙ্গে’র ঘটনা সংবাদমাধ্যমে নিজেই ফাঁস করে দিয়েছিলেন বিপিএলের দল ঢাকা ক্যাপিটালের কোচ খালেদ মাহমুদ। সাব্বির নাকি টিম ম্যানেজমেন্টকে না জানিয়েই অনুশীলনে অনুপস্থিত থেকেছিলেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তি হিসেবে তাঁকে ম্যাচ না খেলানোর কথাও জানিয়েছিলেন মাহমুদ।
তবে মাহমুদের আশা ছিল এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাব্বির তেতে উঠে এমন কিছু করবেন, যাতে ঢাকা কাটিয়ে উঠবে দুঃসময়। এরপরও ৭ জানুয়ারি সিলেটে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ২ রান করে আউট হয়ে যান অনেক দিন ধরে জাতীয় দল থেকে দূরে থাকা সাব্বির। তবে কাল চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ম্যাচের রাতে ঠিকই তেতে উঠলেন তিনি। সেটা মাঠে যেমন, মাঠের বাইরেও।
ছয় নম্বরে নেমে ব্যাট হাতে মাত্র ৩৩ বলে করেছেন অপরাজিত ৮২ রান। বিধ্বংসী ইনিংসে সাব্বির ছক্কা মেরেছেন ৯টি, সঙ্গে তিনটি চার। ভগ্নদশা ব্যাটিংয়ের পরও সাব্বিরের এই ইনিংস আর ওপেনার তানজিদ হাসানের ৪৮ বলে ৫৪ রানের সৌজন্যে ৫ উইকেটে ১৭৭ রান করে ঢাকা। যদিও শেষ পর্যন্ত চিটাগং কিংসের কাছে তারা হেরেছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। টুর্নামেন্টে ঢাকা এখন পর্যন্ত হেরেছে সব ম্যাচই।
কিন্তু ব্যাট হাতে তেতে ওঠা সাব্বির খেলা শেষেও তেতেই থাকলেন। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে করা এক প্রশ্নে তাঁকে নিয়ে কোচ খালেদ মাহমুদের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন তিনি। দলকে না জানিয়ে অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, ‘কোচের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার। কোচকে বলেছিলাম যে আমার পারিবারিক ইস্যু আছে। তিনি হয়তো বুঝতে পারেননি। আমার মনে হয় দলের ভেতরের কথাগুলো সংবাদমাধ্যমে না বলাই ভালো।’
মাঠে ও মাঠের বাইরে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ সাব্বিরে বিরুদ্ধে নতুন নয়। তিনিও মানেন সেটা। তবে বলেছেন, তিনি সব সময়ই চেষ্টা করেন নিজেকে শোধরাতে, কিন্তু কিছু মানুষ তাঁর পেছনে লেগে থাকে, ‘ছোট থেকেই এসব সামলে আসছি, বড় হয়ে নিজেকে কীভাবে সামলাব। তবু সাব্বির রহমানের কিছু হলেই শৃঙ্খলার কথা চলে আসে। আমি চেষ্টা করছি ঠিক করার জন্য। কিন্তু আশপাশের কিছু লোক হয়তো ভালো হতে দিচ্ছে না। তবে এটা নিয়ে আমি বেশি চিন্তিত নই। আমার কাজ খেলা, পারফরম করা। সেটাই করছি।’
গতকালের ইনিংস আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সাব্বির। দল জেতাতে না পারার আফসোসের মধ্যেও তৃপ্তি, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব ভালো লাগছে। খুব আত্মবিশ্বাস অনুভব করছি।’
জাতীয় দলের হয়ে সাব্বির সর্বশেষ খেলেছেন ২০২২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত তিন জাতি টি-টোয়েন্টি সিরিজে। সর্বশেষ টেস্ট ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আর সর্বশেষ ওয়ানডে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে লম্বা বিরতি পড়লেও হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান ও ক্ষিপ্রগতির ফিল্ডার সাব্বির এখনো স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলে ফেরার।
এক প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘স্বপ্ন তো সবাই দেখে। আমাকে ইয়াং বলতে পারেন, সিনিয়রও বলতে পারেন। দুটো মিলিয়েই আমি। আমার ফিটনেস এখনো পড়ে যায়নি। দুই-তিনটি ইনিংস যদি ভালো খেলতে পারি, নির্বাচকেরা যদি সুযোগ করে দেন, অবশ্যই চেষ্টা করব ভালো (জাতীয় দলে) খেলতে।’
সাব্বির জানিয়েছেন, রাজশাহীতে তিনি নিয়মিতই নিজের মতো করে অনুশীলন করেন। নিজের সরঞ্জাম ব্যবহার করে, নিজের খরচে করা সেই অনুশীলন নিজেকে আবার আগের জায়গায় ফেরানোর জন্যই, ‘আমি নিয়মিতই অনুশীলন করি। চেষ্টা করছি আবার ফেরার জন্য। বিপিএলে সুযোগ পেয়েছি… আলহামদুলিল্লাহ। চেষ্টা করব ভালো খেলার জন্য।’