আগের ডেলিভারিটি বাঁক নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। ম্যাথু ব্রিটজকে সুবোধ ছেলেটির মতো ভেবেছিলেন, এটাও বেরিয়ে যাবে। সামনে পা নিলেও তাই খেলার চেষ্টা করেননি। কিন্তু শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট এবং এখনো কিছুটা চকচকে থাকা বল কথা রাখেনি। উইকেট বরং কথা রেখেছে তার মনিবের!
মনিব?
কথাটা রসিকতা করে বলা। সে কথায় পরে আসা যাবে। আগে ব্রিটজকের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র শিকার হওয়ার বাকিটা বলা যাক। বলটা এতটুকু বাঁক না নিয়ে অফ স্টাম্প উপড়ে দিল! যেন চোখের সামনে ঝুলতে থাকা একটি মাইলফলককে তাইজুল ঢিল মেরে মাটিতে নামালেন! টেস্টে এটি তাঁর ২০০তম উইকেট। এই সংস্করণে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ২০০ উইকেটের দেখা পেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ৭১ ম্যাচে ২৪৬ উইকেট সাকিবের।
মনিবের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। সেটিও এখন তাইজুল। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ২২ গজ তাঁর কথাই বেশি শুনেছে। সেটি উইকেট শিকারের বিচারে। বাংলাদেশের ‘হোম অব ক্রিকেটে’ সিরিজের প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের আগে সেই ‘মনিব’ ছিলেন সাকিব। ২১ টেস্টে ৭৬ উইকেট নিয়ে এ সংস্করণে এই মাঠে সাকিবই ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ৭৪ উইকেট নিয়ে দুয়ে ছিলেন তাইজুল। আজ টেস্টের প্রথম দিনেই ৫ উইকেট নিয়ে সাকিবের কাছ থেকে সেই মনিবগিরিও নিয়ে নিয়েছেন তাইজুল, সেটিও ৫ টেস্ট কম খেলে। শেরেবাংলায় ১৬ টেস্টে আপাতত তাইজুলের শিকার ৭৯ উইকেট।
তাইজুল তাঁর ৪৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৮৫ ইনিংসে বোলিং করে এ পর্যন্ত ১৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেওয়ায়ও লড়াই সাকিব ও তাইজুলের। ১২১ ইনিংসে বোলিং করে ১৯ বার ৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে সাকিব। কিন্তু সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ার আর না এগোনোর সম্ভাবনাই বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ ম্যাচটি খেলেই টেস্ট থেকে সাকিবের অবসর নেওয়ার ইচ্ছাটা শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট ও সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেওয়ার দুটো কীর্তিই গড়ার সুযোগ রয়েছে ৩২ বছর বয়সী তাইজুলের সামনে।
তবে সাকিব-তাইজুলের মধ্যে মিলও ছিল। সেটি কিছুক্ষণের জন্য। ব্রিটজকের উইকেটটি (তাঁর চতুর্থ) নেওয়ার সময় টেস্টে সাকিব ও তাইজুলের বোলিং গড় ছিল সমান ৩১.৭২। পঞ্চম উইকেটটি নেওয়ার পর সেটা আরেকটু ভালো হয়ে (৩১.৬৬) সাকিবকে টপকেও যায়। বোলিং স্ট্রাইক রেটেও সাকিবের চেয়ে এগিয়ে তাইজুল। সাকিবের ৬৩.৭ ও তাইজুলের ৬২.৩।
দেশের মাটিতে উইকেট শিকারে তাইজুলের চেয়ে মাত্র ১টি উইকেট বেশি নিয়ে এগিয়ে সাকিব। ৩৪ টেস্টে তাইজুলের শিকার ১৬২ উইকেট, সাকিবের ৪৫ টেস্টে শিকার ১৬৩ উইকেট। অর্থাৎ টেস্টে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ উইকেট নিতে তাইজুলের আর ২টি উইকেট দরকার। সেটি কিন্তু এ ইনিংসেই হয়ে যেতে পারে। সাকিব ও তাইজুল ছাড়া বাংলাদেশের মাটিতে ন্যূনতম ১০০ উইকেট আছে শুধু মেহেদী হাসান মিরাজের।
২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংস্টন টেস্টে অভিষেক তাইজুলের। অথচ এই তাইজুলই পরবর্তী সময়ে হয়ে যান দেশের মাটির বোলার। ৪৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে মাত্র ১৪ ম্যাচ খেলেছেন দেশের বাইরে। উইকেট ৩৯টি। ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনবার। সাকিব থাকতে বিদেশের মাটিতে টেস্টে তাইজুল প্রায় সুযোগ পাননি বললেই চলে। এখন থেকে নিশ্চয়ই পাবেন?