অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলির সেটিই ছিল শেষ টেস্ট। স্টাম্প মাইক্রোফোনে সেবার নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন কোহলি। ব্রডকাস্টিং চ্যানেল ডিআরএসে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে সহায়তা করছে, এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। দুই বছর পর সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতের আরেকটি টেস্ট সিরিজ। চ্যালেঞ্জটি অবশ্য একই আছে—দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো কোনো সিরিজ জয়। আগামীকাল, বক্সিং ডে-তে সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে শুরু হচ্ছে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটি।
যে কটি দেশে ভারত টেস্ট সিরিজ খেলেছে, একমাত্র এখানেই জেতেনি কখনো। আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া সিরিজটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতের নবম।
দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য অক্ষত রাখতে চাইছে সে রেকর্ড। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা যেমন বলেছেন, ‘এ রেকর্ড অক্ষত রাখার ক্ষেত্রে অনেক গর্ব আছে। ভারতকে এটি আরও বেশি উজ্জীবিত করবে, ফলে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে।’
অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডে সফল সফর শেষে ২০২১-২২ মৌসুমে অনেক প্রত্যাশা নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছিল ভারত, দলটিও ছিল শক্তিশালী। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজে এগিয়েও গিয়েছিল কোহলির দল। তবে পরের দুটি ম্যাচেই ডিন এলগারের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা দল চতুর্থ ইনিংসে সফল রানতাড়ায় দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে।
ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রিভিউ এলগারের পক্ষে যাওয়ার পরই স্টাম্প মাইক্রোফোনে হতাশা ঝাড়েন কোহলি। ম্যাচ শেষে পরদিনই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন তিনি। এবারের সিরিজে নিজ নিজ দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান হিসেবেই থাকবেন কোহলি ও এলগার। যদিও দুজনের কেউই এবার অধিনায়ক নন।
৩৬ বছর বয়সী এলগার তো এ সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণাই দিয়েছেন। টেস্ট দলের কোচ হিসেবে শুকরি কোনরাড আসার পর থেকে বেশ পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দলটি, এরই মধ্যে অধিনায়কত্ব হারান এলগার।
কোনরাড নিজেই নিশ্চিত করেছেন, তাঁর সঙ্গে আলোচনার পরই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এলগার। তবে এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ‘কাঠিন্য, লড়াইয়ের সামর্থ্য, পারফরম্যান্স আর কখনো হার না–মানার সামর্থ্যের’ দারুণ প্রশংসাও করেছেন প্রোটিয়া কোচ।
ভারতের বিপক্ষে টপ অর্ডারের ব্যাটিংয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশ প্রয়োজন পড়বে এলগারের সেসব গুণ। টপ অর্ডারে নতুন চেহারায় দেখা যাবে ভারতকেও। চেতেশ্বর পূজারা ও অজিঙ্কা রাহানেকে ছাড়াই সামনে এগোতে চাইছে ভারত, এ সিরিজে দুজনের কেউই নেই। দুজনকে ছাড়াই দেশের বাইরে ভারত সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল ২০১২ সালে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস–সহায়ক কন্ডিশনে নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন তাঁরা।
স্বাগতিকেরা অবশ্য গতি দিয়েই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলতে চান। কোনরাড মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘ভারতের মানসম্পন্ন ব্যাটিং লাইনআপ আছে, তবে আমাদেরও ভালো বোলার আছে।’
এ সিরিজ সামনে রেখে তরুণ পেসার মার্কো ইয়ানসেন ও জেরাল্ড কোয়েৎজি সম্প্রতি চার দিনের ঘরোয়া লিগে খেলেছেন। তবে চোটের কারণে মাঠের বাইরেই ছিলেন দুই অভিজ্ঞ পেসার কাগিসো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিডি। অবশ্য কোনরাডের আশা, দুজনই প্রথম টেস্টে ফিট হয়েই নামবেন, ‘তারা ফুরফুরে থাকবে, আগুন ঝরাবে।’
অন্যদিকে চোটের কারণে ভারত দল থেকে ছিটকে গেছেন মোহাম্মদ শামি। তবে আছেন যশপ্রীত বুমরা ও মোহাম্মদ সিরাজের মতো পেসার।
এ টেস্ট দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করবে দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে জেতা সিরিজের পর এটি ভারতের দ্বিতীয়। ৬৬.৬৭ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষেও রোহিত শর্মার দল।